সময় জার্নাল প্রতিবেদক, ঢাকা : করোনাভাইরাস (কোাভিড-১৯) পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের দ্বিতীয় দফা প্রণোদন প্যাকেজের আওতায় মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের ৪ শতাংশ সুদে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন। চলতি অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা এবং আগামী অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ঋণ বিতরণে নীতিমালা ও নির্দেশিকা এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদের সভায় এটি অনুমোদন হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ১১টি ব্যাংক ও নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স এবং লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী যেসব এলাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দেবে
ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পূর্ব মাদারবাড়ী-চট্টগ্রাম, হাজারীবাগ-ঢাকাসহ সারাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারী ক্লাস্টার, পিরোজপুরের বলদিয়া ও যশোরের নরেন্দ্রপুরের ক্রিকেট ব্যাট ক্লাস্টার, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের হোসিয়ারি ক্লাস্টার, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, বেলকুচি, উল্লাপাড়া টেক্সটাইল ক্লাস্টার, মানিকগঞ্জের ঘিওর হস্তশিল্প ক্লাস্টার, জামালপুরের হস্তশিল্প ক্লাস্টার, সাতক্ষীরার ব্যান্ডেজ ও গজ ক্লাস্টার, যশোরের ঝিকরগাছা ফুল প্রসেসিং ক্লাস্টার, নীলফামারীর সৈয়দপুর ঝুট গার্মেন্টস ক্লাস্টার, মৌলভীবাজারের বড়লেখা আগর-আতর ক্লাস্টার, ঝিনাইদহের হস্তশিল্প (বাঁশজাত পণ্য) ক্লাস্টার, পিরোজপুরের নাজিরপুর হস্তশিল্প (হোগলা পাটি, মোড়া) ক্লাস্টার, কুষ্টিয়ার কুমারখালী টেক্সটাইল ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের, যশোর, নাটোর, পাবনা, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বগুড়াসহ সারাদেশের হালকা প্রকৌশল শিল্প ক্লাস্টার, ঢাকার ইসলামবাগ প্লাস্টিক ক্লাস্টার, টাঙ্গাইলের পাথরাইল, দেলদুয়ার, বল্লা, বেলতা, কালিহাতি হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার, গৌরিপুর ঝুট গার্মেন্টস ক্লাস্টার, ময়মনসিংহের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারী উদ্যোক্তা, মুদ্রণ শিল্প সমিতির সদস্য উদ্যোক্তা, ঢাকার শ্যামপুর, জুরাইন ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্টস ক্লাস্টার, বগুড়ার আদমদিঘীর শাঁওইল হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার, মুন্সীগঞ্জ ক্ষুদ্র গার্মেন্টস ক্লাস্টার, ঢাকার কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাক শিল্প ক্লাস্টার, নরসিংদীর টেক্সটাইল ক্লাস্টার, পাবনার হোসিয়ারি ক্লাস্টার, সাথিয়া হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ মনিপুরি হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার, নরসিংদী টেক্সটাইল ক্লাস্টার, নারায়ণগঞ্জ জামদানি ক্লাস্টার, রাজশাহীর হস্তশিল্প ক্লাস্টার, কালুহাটির ফুটওয়্যার ক্লাস্টার, রাজশাহী হস্তশিল্প ক্লাস্টার, বেসিস ও BACCO এর সদস্য উদ্যোক্তা, রংপুর শতরঞ্জি (কার্পেট) ক্লাস্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ নকশীকাঁথা ক্লাস্টার এবং জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এর সদস্য উদ্যোক্তারা এই ঋণ পাবেন।
পাশাপাশি সারাদেশের নারী-উদ্যোক্তা এবং এসএমই ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংগঠন ও অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সুপারিশকৃত এসএমই উপখাত, ট্রেডবডি এবং গ্রুপের তালিকাভুক্ত উদ্যোক্তা এবং সিএমএসএমই খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রথম দফার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ না পাওয়া পল্লী ও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া হবে।
মোট ঋণের ২৫-৩০ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
২১ মার্চ ২০২১ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিচালক পর্ষদের ১২০তম সভায় এই ঋণ কর্মসূচী বিতরণ বিষয়ক নীতিমালা ও নির্দেশিকা অনুমোদন করা হয়। নীতিমালার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- করোনা মহামারির কারণে গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্ত অতিক্ষুদ্র (মাইক্রো), ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে নিম্নবর্ণিত ক্যাটাগরির উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে
যেসব উদ্যোক্তারা ঋণে অগ্রাধিকার পাবেন
১. যারা সরকারের প্রথম দফার প্রণোদনার আওতায় ঋণপ্রাপ্ত হননি;
২. অগ্রাধিকারভূক্ত এসএমই সাব-সেক্টর এবং ক্লাস্টারের উদ্যোক্তা;
৩. নারী-উদ্যোক্তা;
৪. নতুন উদ্যোক্তা অর্থাৎ যারা এখনো ব্যাংক ঋণ পাননি;
৫. পশ্চাৎপদ ও উপজাতীয় অঞ্চল, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তাগণ।
প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় উদ্যোক্তাগণ ৪% সুদে ঋণ পাবেন। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের পরিমাণ হবে সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২৪টি সমান মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা যাবে।
এসএমই ফাউন্ডেশন অংশীদার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করে উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধাজনক এক/একাধিক শাখায় ফোকাল কর্মকর্তা নির্ধারণ করবে। উদ্যোক্তারা ফোকাল কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। ফোকাল কর্মকর্তা এসএমই ফাউন্ডেশন, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখা এবং উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন।
দেশের সব মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের এ সুযোগ গ্রহণের জন্য অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, অ্যাসোসিয়েশন/ট্রেডবডি এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
সময় জার্নাল/এমআই