বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

মুখস্থ থেকে সরে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার যুগে বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ২, ২০২৩
মুখস্থ থেকে সরে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার যুগে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি:


স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অসংখ্যবার পরিবর্তন এসেছে। প্রত্যেক পরিবর্তনেই কিছু না কিছু বিষয় নতুন করে যোগ হয়েছে।


বলা হয়েছে, যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতেই এসব পদক্ষেপ। কিন্তু এই প্রথম দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা একেবারেই খোলনলচে বদলে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সনাতনী পাঠদানের মতো থাকছে না শ্রেণিকক্ষের লেখাপড়া। শিক্ষকরা পড়ানোর পরিবর্তে শ্রেণিকক্ষে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।


শিক্ষার্থীরা তোতাপাখির মতো প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করবে না। সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষার পরিবর্তে তাদের সারা বছর ধরে মূল্যায়ন করা হবে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত থাকছে না কোনো পরীক্ষা। হবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন। এই মূল্যায়ন কেবল শিক্ষক নন; পাশাপাশি শিক্ষার্থীর সহপাঠী, তার বাবা-মা কিংবা অভিভাবক এবং সমাজের অংশীজনও মূল্যায়ন করবেন।


ফলে শিক্ষার্থী পাঠ্যবই থেকে কতটুকু শিখল তা নির্ধারণ কেবল শিক্ষকের হাতে থাকছে না। এসব কারণে নোট-গাইড আর কোচিংয়ের কবল থেকে মুক্তির পথ তৈরির সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। সবমিলে শিখনফলকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে যোগ্যতাভিত্তিক শিখনফলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ।


আর এভাবে বাস্তবজীবন থেকে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষা অর্জন করে ছাত্রছাত্রীরা নিজেকে বৈশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারবে।


নতুন ও স্বপ্নের শিক্ষাব্যবস্থার তফাত জানতে দেশের তিন সিনিয়র নাগরিকের মুখোমুখি হয়েছে যুগান্তর। সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার মুসতাক আহমদ ও বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার মাহাদী হাসান।


শিক্ষার মাধ্যমে ঐক্য নয় বিভাজন করছি: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এটি ভালো ফলাফল নিয়ে আসছে না। এই যে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা এটা কেন আনা হলো, আবার কেন প্রত্যাহার করা হলো কিছুই বুঝলাম না। সরকারের ইচ্ছা হলো ব্যাস একটা পরীক্ষা দিয়ে দিল। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষাই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আমরা শিক্ষার্থীর চেয়ে পরীক্ষার্থীই বেশি তৈরি করছি। মা-বাবাও মনে করে ভালো ফলাফল করতে হবে।


এজন্য শ্রেণিকক্ষের পড়ালেখার ওপর নির্ভর করলে চলবে না বরং কোচিং সেন্টার লাগবে, গাইড বই লাগবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ হচ্ছে। সে কারণে শিক্ষা একটি পণ্যের মতো বিক্রি হচ্ছে। মঙ্গলবার যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।


তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল সমস্যা হচ্ছে এটি তিনটি ধারায় বিভক্ত। একটি শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধারা থাকতে পারে কিন্তু অন্য দেশে জাতীয় পর্যায়ে তিনটি সুস্পষ্ট ধারা আছে বলে আমার জানা নেই। আমাদের উচিত শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মাঝে ঐক্য আনা। সেটি না করে শিক্ষার মাধ্যমে আমরা বিভাজন করছি। আমাদের শিক্ষার ধারা একটিই হওয়া উচিত এবং সেটি মাতৃভাষাতেই। সেটি আমরা এখনো করতে পারিনি।


তিনি আরোও বলেন, শিক্ষার যে মূল্য বাংলাদেশে সেটি কমে যাচ্ছে। এখানে কর্তৃত্ব করে মুনাফা এবং অর্থ। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি, উন্নয়ন হচ্ছে না। বরং এটি নিুমুখী সে কারণে শিক্ষার গুরুত্বও কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়ছে না। আর কর্মসংস্থান না বাড়লে শিক্ষিত বেকার তৈরি হয়। শিক্ষিত বেকার সমাজের জন্য কোনো ভালো জিনিস নয়। এই যে মানুষকে শিক্ষিত করা হচ্ছে কিন্তু কর্মের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না, সে কারণে আগ্রহও কমে যাচ্ছে। শিক্ষা মানুষ নিচ্ছে কারণ তাদের অন্য কিছু করার নেই। আগের দিনে এমএ পাশ করলে একটি বড় চাকরির প্রত্যাশা করত কিন্তু এখন সেইরকম প্রত্যাশা নেই। এই যে শিক্ষা ও কর্মের মাঝে একটা ফারাক সেটার কারণে শিক্ষার মানের উন্নয়ন হচ্ছে না।


শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সেই গবেষণাও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করা হয় না। আর শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য ভালো শিক্ষক প্রয়োজন। ভালো শিক্ষক ছাড়া ভালো শিক্ষা দেওয়া যাবে না। ভালো শিক্ষক মানে হচ্ছে-মেধাবী এবং শিক্ষকতায় যারা আগ্রহী। এসব ব্যক্তিদের শিক্ষকতায় আনতে হলে তাদের বেতন-ভাতা, সম্মান দুটোই বাড়াতে হবে। এটা আমরা না পারায় উপযুক্ত শিক্ষকও পাচ্ছি না। আর উপযুক্ত শিক্ষক না পেলে শিক্ষার মান বাড়বে না। এগুলো আমাদের সমস্যা।


বিশ্ব নাগরিক তৈরির শিক্ষাব্যবস্থা চাই: সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম


অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, বিশ্ব নাগরিক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে, সেই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চাই আমরা। এজন্য যা কিছু প্রয়োজন, সব যেন শ্রেণিকক্ষ থেকেই অর্জন করা সম্ভব হয়। বর্তমান বিশ্বে মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি এবং আরও অন্তত একটি ভাষা জানা জরুরি। দৃষ্টান্ত হিসাবে বলা যায়, স্প্যানিশ ভাষার কথা। দক্ষিণ আমেরিকায় ব্রাজিল বাদে আর সব দেশেই এই ভাষা গুরুত্বপূর্ণ।


তিনি বলেন, আর্জেন্টিনা বাংলাদেশে দূতাবাস খুলছে। এই দেশসহ অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক দিগন্ত খুলে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই এই ভাষা শেখা প্রয়োজন। এভাবে গুরুত্ব অনুযায়ী অন্যান্য ভাষা শেখার ওপর জোর দিতে হবে শিক্ষাব্যবস্থায়। পাশাপাশি একটি কথা মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক ভাষার একটি সংস্কৃতি থাকে। এটিকে বলে ‘সাংস্কৃতিক যোগাযোগ’। ভাষা শেখার সঙ্গে সাংস্কৃতিক যোগাযোগও শেখানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। মঙ্গলবার যুগান্তরের সঙ্গে আলাপচারিতায় বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা এবং এ নিয়ে তার স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন।


তিনি বলেন, বর্তমানে মানবজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি বর্তমানে চিকিৎসাসহ নানান ক্ষেত্রে রোবোটিক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব বিদ্যা এবং তা কাজে লাগানোর শিক্ষা জরুরি। নইলে আমাদের পিছিয়ে পড়তে হবে। দৃষ্টান্ত হিসাবে নার্সিং শিক্ষার কথা বলা যেতে পারে। শুধু দেশের ভেতরে নয়, বাইরেও নার্সের কর্মসংস্থানের বাজার অবারিত। নার্সদের কাজ কেবল আগের মতো রোগীর বিছানাপত্র গুছানো আর ওষুধ খাওয়ানোর মধ্যেই সীমিত নয়। ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে তাকে রোগীর সংকটকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হয়। এখন নার্সকে যদি সেভাবে গড়ে তুলতে হয় তবে নার্সিং শিক্ষাক্রম আধুনিকায়ন ও প্রয়োজনের নিরিখে সাজাতে হবে।


বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সম্পদ হচ্ছে এ দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী। তাদের গড়ে তুলতে বৈশ্বিক চাহিদা সামনে রেখে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তকসহ গোটা শিক্ষাব্যবস্থা সাজানো প্রয়োজন। ২০২১ সালে শিক্ষাক্রমের যে রূপরেখা তৈরি করা হয়, এর আদলে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই লেখা হয়েছে। এতে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি স্থান পেয়েছে।


শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর মতো দুজন মানুষ এই শিক্ষাক্রম নিয়ে লেগে না থাকলে এবার যে পাঠ্যবই দেওয়া হয়েছে, সেটা সম্ভব হতো না। এখানেই বেধেছে বিপত্তি। নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক অনেকেরই স্বার্থে আঘাত হানবে। কেননা এতে বিশেষ করে কোচিং আর নোট-গাইড ব্যবসা বিঘ্নিত হবে।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল