সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
বাসে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্কের জেরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন।
সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে আটটায় সাদ্দাম হোসেন হলের সামনে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী রিয়াদ।
ভুক্তভোগী জানান, প্রতিদিনের মতো টিউশনি করাতে কুষ্টিয়া গিয়েছিলেন। টিউশনি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরতে শহরের হাসপাতাল মোড় থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার বাসে সিট ধরেন। বাস ছাড়ার আগ মুহূর্তে বন্ধুদের ডাকে বাসের পেছনের সিটে গিয়ে তাদের সাথে গল্প করছিলেন। তখন বাসের মাঝখানে শাখা ছাত্রলীগের ৭-৮ জন নেতাকর্মী দাড়িয়ে ছিলেন।
পরে বাস ছাড়লে তিনি নিজের সিটে যাওয়ার জন্য তাদেরকে সরে জায়গা দিতে বলেন। কিন্তু তারা তাকে জায়গা না দিয়ে বাঁধা দেন। তারা তাকে নিচে নেমে সামনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে সিটে গিয়ে বসতে বলেন। এসময় তিনি প্রতিবাদ করলে উভয়পক্ষে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এসময় ছাত্রলীগ কর্মী ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম ক্যাম্পাসে নেমে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
পরে রাত সাড়ে আটটায় বাস ক্যাম্পাসের সাদ্দাম হলের সামনে থামলে সে নামামাত্রই তারা তার উপর চড়াও হয়। তারা তার জামার কলার ধরে ৮-১০জন মিলে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করেন। পরে তার বন্ধুরা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যান।
মারধরের সময় সামিউলের সাথে সিএসই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নাবিল আহমেদ ইমন, সিয়াম, বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের তরিকুল ইসলাম তরুন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মিন্টু হোসাইন ও ইংরেজি বিভাগের একই বর্ষের সৌমিক ছিলেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জানা যায়, এদের মধ্যে ইমন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের ছোট ভাই। বাকি সবাই নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী।
ভুক্তভোগী রিয়াদ হোসেন বলেন, 'সামান্য একটি ঘটনা। বাসে স্বাভাবিকভাবেই এগুলো ঘটে থাকে, আবার সেখানেই বিষয়গুলোর সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু তারা এভাবে আমার উপর চড়াও হবে কখনও ভাবিনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে মার খেয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে হচ্ছে আমার। এর থেকে বড় আফসোস কি আর হতে পারে? এ ক্যাম্পাস সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য না। সামান্য একটি বিষয় নিয়ে তারা আমাকে অন্যায়ভাবে মারধর করলো। আমি তাদের সকলের বিচার চাই। ক্যাম্পাসে তো এখন অন্য কোনো সংগঠন নেই। ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায়ই এগুলো হচ্ছে। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরাতো এগুলো করবেই না।'
এবিষয়ে অভিযুক্ত সামিউল ইসলাম বলেন, 'বাসের মধ্যে প্রচুর ভিড় থাকায় তাকে ভিতর দিয়ে যেতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ও না শুনে আমাদের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। পরে ক্যাম্পাসে নেমে তাকে ডেকে বোঝাতে গেলে সে আমার হাত ঝাড়ি মেরে আবারো তর্ক করতে থাকে। এসময় ও ওর বন্ধুদের নিয়ে আমাদের ওপর চড়াও হলে হাতাহাতি হয়। আমি তাকে হুমকি ধমকি দেইনি।'
অভিযুক্ত তারিকুল ইসলাম তরুণ বলেন, 'বাসে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদির মধ্যেই তাড়াহুড়ো করে সামনে যেতে চাইলে কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়। পরে ক্যাম্পাসে নেমে তাকে ডেকে কথা বলতে গেলে উল্টো আমাদের উপরই চড়াও হয়। তখন ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আমরা কয়েকজন ছিলাম একসঙ্গে, তার সাথেও তার বন্ধুরা ছিল।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, 'আমি যতটুকু শুনেছি, বাসে কথা কাটাকাটির পর ক্যাম্পাসে রিয়াদ ও তার বন্ধুরা সামিউলদের উপর চড়াও হয়। এতে হাতাহাতি হয়। এখন আবার দেখছি রিয়াদ প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।'
এবিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, 'লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে বসে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের বক্তব্য শুনে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবো।'
ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন বলেন, 'আবেদনপত্র হাতে পেয়েছি। ব্যস্ততা থাকাতে আজ বসতে পারিনি। আগামীকাল উভয়পক্ষকে নিয়ে বসবো এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করবো।'
সময় জার্নাল/এলআর