বুধবার, ফেব্রুয়ারী ৮, ২০২৩
সময় জার্নাল ডেস্ক:
নওগাঁ সদর উপজেলার ইলশাবাড়ি গ্রামের আলমগীর হোসেন। ঝুট কাপড় থেকে দড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রায় দেড় যুগ আগে তিনি এসব কাজে লাগাতেন। পরবর্তীতে তার হাত ধরে দড়ি তৈরি শুরু হয়।
নওগাঁ সদর উপজেলার ইলশাবাড়ী সরদার পাড়া গ্রামের গৃহবধূ মিনা বেগম। ১০ বছর আগেও তাদের সংসারের অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। ভ্যানচালক স্বামী আব্দুস সালামের আয়ে কোনোরকম চলতো চার সদস্যের সংসার। তবে ঝুট কাপড় থেকে তৈরি করা দড়িতে তাদের অভাব ঘুচেছে। স্বামীর পাশাপাশি মিনার আয়ে এখন সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।
শুধু মিনা বেগম নয়, তার মতো এ গ্রামের আরও শতাধিক বাড়িতে গৃহবধূরা ঝুট কাপড় দিয়ে দড়ি তৈরি করছেন। এছাড়া জেলার সদর উপজেলা, রানীনগর ও আত্রাই উপজেলায় অন্তত ৫ হাজার নারী দড়ি তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
গ্রামের গৃহবধূরা এক সময় সাংসারিক কাজ শেষে অলস বসে থাকলেও এখন দড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। এসব দড়ি পানের বরজ ও বিভিন্ন বাগানে গাছ বাঁধার কাজে ব্যবহার করা হয়। টেকসই হওয়ায় চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। এসব দড়ি চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়।
দড়ি তৈরির উপকরণ ঝুট কাপড় স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রকারভেদে ২৫ টাকা এবং ৫০ টাকা কেজি দরে কেনা হয়। যার প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি এবং ৮০ কেজি ঝুট কাপড় থাকে। যে দামে ঝুট কেনা হয় দড়ি বিক্রি পর তার অর্ধেক লাভ হয়। তবে দড়ির দাম কমে যাওয়ায় এখন লাভের পরিমাণ কমেছে বলে জানান কারিগররা।
সাংসারিক কাজের পাশাপাশি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে দড়ি তৈরি। প্রতিটি মেশিন দিয়ে দিনে অন্তত ১০০-১৫০ পিস দড়ি তৈরি হয়। এ কাজে পুরুষরাও সহযোগিতা করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি মায়েদের দড়ি তৈরি কাজে সহযোগিতা করছে সন্তানরাও।
একই গ্রামের গৃহবধূ লাভলি পারভীন বলেন, সংসারের কাজ শেষ করে অধিকাংশ সময় গল্প করে সময় কাটাতে হয়। এ সময়টুকু এখন বসে না থেকে দড়ি তৈরি করে বাড়তি লাভ হচ্ছে। প্রতি মাসে খরচ বাদে প্রায় ৪ হাজার টাকা থাকে। একজন মেশিনে থাকে আর দুজন ঝুট কাপড় ছেড়ে দেয়। যদি দুজন হয় তাহলে একজন মেশিনে থাকে অপরজন কাপড় ছেড়ে দেয়। দিনে শতাধিক দড়ি তৈরি করা যায়।
সদর উপজেলার ইলশাবাড়ী গ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী জুয়েল হোসেন বলেন, জেলায় প্রায় ১২ জন পাইকারি ব্যবসায়ী আছেন। তারা প্রতি মাসে প্রায় ৩৬ ট্রাক ঝুট কাপড় চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসেন। আর এসব কাপড় দেশের বাইরে থেকে আনেন আমদানিকারকরা। প্রতি ট্রাকে ঝুট কাপড়ের পরিমাণ প্রায় ১২ টন। প্রতি মাসে প্রায় ৭২ লাখ টাকার মালামাল আসে। এসব কাপড় বিক্রি করে প্রতি ট্রাকে ব্যবসায়ীদের লাভ থাকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। জেলার সদর উপজেলা, রানীনগর ও আত্রাই উপজেলায় অন্তত ৫ হাজার গ্রামীণ নারীরা এ দড়ি তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
বিভিন্ন গ্রামে নারীরা কুটির শিল্প বা হস্তশিল্পের কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে পুরুষদের পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছে। পাশাপাশি ঝুট কাপড়ে দড়ি তৈরি করে গ্রামীণ নারীরা এখন তাদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করছে। তারা আর ঘরে বসে নাই। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। নারীদের যদি আরেকটু কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে অর্থনীতির চাকাও সচল হবে।
সময় জার্নাল/এলআর