স্পোর্টস ডেস্ক:
মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বোলারদের পর ব্যাটাররাও দিয়েছেন ব্যর্থতার পরিচয়। বাংলাদেশ হেরেছে ১৩২ রানের বিশাল ব্যবধানে। এতে তিন ম্যাচ সিরিজ এক ওয়ানডে বাকি থাকতেই ২-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে ইংল্যান্ড।
লক্ষ্য ছিল ৩২৭ রানের। বাংলাদেশের দরকার ছিল দারুণ শুরু। কিন্তু হলো তার উল্টোটা। প্রথম ওভারেই সাজঘরের পথ ধরলেন লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন শান্ত।
স্যাম কারানের ওভারের চতুর্থ বলে লিটন (১ বলে ০) ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন। এর পরের বলে শান্তও মারেন গোল্ডেন ডাক (১ বলে ০), উইকেটরক্ষক জস বাটলারকে দেন ক্যাচ।
অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম হাল ধরবেন কি, ৫ বলে ৪ করে স্যাম কারানকে তৃতীয় উইকেট উপহার দেন, তিনিও উইকেটরক্ষক বাটলারের ক্যাচ।
একে একে সাজঘরের পথ ধরেছেন টপ অর্ডারের তিন ব্যাটার। ইংলিশ পেসার স্যাম কারানের তোপে ২.২ ওভার হতেই ৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা। দায়িত্ব পড়ে অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল আর সাকিব আল হাসানের কাঁধে।
দলের চরম বিপদের মুহূর্তে হাল ধরেছিলেন সাকিব আর তামিম। তাদের ১১১ বলে গড়া ৭৯ রানের লড়াকু জুটিটি ভেঙে যায় তামিম আউট হলে। ৬৫ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৩৫ করে তামিম হন মঈনের শিকার।
তামিম ইকবালের পর ফিফটি করে আউট সাকিবও। ৫৯ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫৮ রান করে সাকিব হন আদিল রশিদের শিকার। ১২২ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। টাইগারদের সিরিজ বাঁচানোর স্বপ্ন বলতে গেলে শেষ তখনই। কেননা তখন ওভারপ্রতি দরকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশের কাছাকাছি।
হারের ব্যবধান কমানোর মিশনে দাঁড়িয়ে সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি আফিফ হোসেন আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আফিফ ২৩ আর মাহমুদউল্লাহ ৩২ করে হন আদিল রশিদের শিকার। রশিদের চতুর্থ উইকেট মেহেদি হাসান মিরাজ (৭)। শেষ পর্যন্ত ৪৪.৪ ওভারে ১৯৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে জেসন রয়ের সেঞ্চুরি আর জস বাটলারের ফিফটিতে ভর করে ৭ উইকেটে ৩২৬ রানের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড।
মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসভাগ্য সহায় ছিল বাংলাদেশের। টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টাইগার দলপতি তামিম ইকবাল।
ইংলিশদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে দুই প্রান্ত থেকে স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন তামিম। তবে সাকিব আল হাসান আর তাইজুল ইসলাম প্রথম চার ওভারে তেমন বিপদে ফেলতে পারেনি ইংল্যান্ডকে।
সপ্তম ওভারে এসে বাংলাদেশ সাফল্য পায় তাসকিন আহমেদের হাত ধরে। তাসকিনের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন ফিল সল্ট (৭)। প্রথম স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্ত নেন মাটিতে ঘেষা দুর্দান্ত এক ক্যাচ। ২৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
এরপর ডেভিড মালানকে নিয়ে ৫৪ বলে ৫৮ রানের ঝোড়ো জুটি গড়েন জেসন রয়। আগের ওয়ানডেতে বিপদের মুখে হার না মানা সেঞ্চুরি করে ইংল্যান্ডকে জিতিয়েছিলেন মালান। এবার অবশ্য ইংলিশ এই ব্যাটারকে ভয়ংকর হতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ।
মিরাজের ঘুর্ণিতে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন মালান, ফেরেন ১১ করে। এরপর জেমস ভিন্সকে দ্রুতই সাজঘরের পথ দেখান তাইজুল ইসলাম। ভিন্স ৫ করে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ হন।
টপঅর্ডারের চার ব্যাটারের মধ্যে তিনজনকেই ইনিংস বড় করতে দেয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু ওপেনার জেসন রয় এরই ঠিকই দাঁড়িয়ে যান। দারুণ ব্যাটিং করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ইংল্যান্ডের ডানহাতি এই ব্যাটার।
৯৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। জস বাটলারের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে রয় গড়েন ৯৩ বলে ১০৯ রানের জুটি।
বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরি হাঁকালেন। জেসন রয় যতক্ষণ উইকেটে থাকবেন, রানের ফোয়ারা ছুটবেই। ক্রমেই ভয়ংকর হচ্ছিলেন। অবশেষে মারকুটে এই ব্যাটারকে ফেরান সাকিব আল হাসান।
সাকিবের ঘূর্ণি মিস করে এলবিডব্লিউ হন রয়। ১২৪ বলে ১৩২ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ১৮টি বাউন্ডারি আর একটি ছক্কা হাঁকান ইংলিশ ওপেনার।
রয় ফেরার ঠিক পরের ওভারেই তাসকিন আউট করেন উইল জ্যাকসকে (১)। শর্ট মিডউইকেটে সাকিব ধরেন ক্যাচ। ২০৮ রানে ইংল্যান্ডের ৫ উইকেট তুলে নিয়ে লড়াইয়ে ফেরে বাংলাদেশ।
কিন্তু জস বাটলার ঝড় তুলে সেখান থেকে অনেকটা এগিয়ে দেন দলকে। অবশেষে বাটলার ঝড় থামে মেহেদি হাসান মিরাজের দারুণ এক ফিরতি ক্যাচে। ৬৪ বলে ৫ চার আর ২ ছক্কায় ৭৬ রান করে ফেরেন বাটলার।
এরপর মঈন আলির ৩৫ বলে ৪২ রান আর শেষদিকে স্যাম কারানের ১৯ বলে ৩৩ রানের ক্যামিওতে ৭ উইকেটে ৩২৬ রানের পাহাড় গড়ে ইংলিশরা।
বাংলাদেশের বোলারদের সবাই খরুচে ছিলেন। তাসকিন আহমেদ ৬৬ রান দিয়ে নেন ৩টি উইকেট। মেহেদি মিরাজ ৭৩ রানে নেন দুটি।
সময় জার্নাল/এলআর