মোঃ আবদুল্লাহ-আল-অনিক, বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি:
ধান উৎপাদনে সেচের পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি এ ডব্লিউডি পদ্ধতি ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে নিবেদিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশন (বন্ধু) জলবায়ু বান্ধব ধান চাষ প্রকল্পের আওতায় গত বছর প্রথমবারের মত নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ২০০ হেক্টর জমিতে এ ডব্লিউ ডি পদ্ধতি ব্যবহার করে। তাতে কৃষকরা লাভবান হলে এবছর ওই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেই দ্বিতীয় বারের মত উপজেলার ৫০০ হেক্টর জমিতে ওই পদ্ধতি ব্যবহার করছে কৃষকরা।
জানা যায় প্রতিষ্ঠানটি ধান উৎপাদনে সেচের পানি সাশ্রয়ী এই প্রযুক্তিটি বিনামূল্যে কোন লাভ ছাড়ায় কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করে থাকে। বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশনের রিজিওনাল এগ্রিকালচার ম্যানেজার সোহেল রানা বলেন, এ ডবিøউ ডি এই পদ্ধতিকে বিভিন্ন স্থানে ম্যাজিক পাইপ, জাদুর নল, পানি মাপার পাইপ, পানি সাশ্রয়ী সেচ প্রযুক্তি প্রভৃতি নামে ডাকা হয়। প্রচলিত কাদা পদ্ধতির ধানের জমিতে দাঁড়ানো পানি না রেখে জমির প্রয়োজন অনুসারে পালাক্রমে ভেজানো ও শুকানোই হলো এডবিøউডি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ধানের জমিতে সুবিধামত জায়গায় ছিদ্রযুক্ত একটি পাইপ বসিয়ে এর ভেতরে পানির অবস্থান সময়ে সময়ে পর্যবেক্ষণ করতে হয় এবং প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হয়। এই পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য ৭ থেকে ১০ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট ৩০ সেমি লম্বা একটি প্লাস্টিক পাইপ খাঁড়াভাবে মাটিতে পুঁতে দিতে হয় যাতে করে ১০ সেমি মাটির উপরে এবং বাকি ২০ সেমি মাটির নিচে থাকে। মাটির নিচের অংশ ছিদ্রযুক্ত হবে কিন্তু উপরের অংশে কোন ছিদ্র থাকবে না। পাইপের দুই মুুখই খোলা থাকবে। মাটির নিচের অংশে ৫ থেকে ৮ সেমি পর পর ০.৫ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট ছিদ্র থাকবে যাতে করে সহজে মাটির ভেতরের পানি পাইপে প্রবেশ করতে পারে আবার প্রয়োজনে বের হয়ে যেতে পারে। মূল জমিতে কাদা করে চারা রোপণের পর হতে ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত জমিতে ২ থেকে ৪ সেমি দাঁড়ানো পানি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তারপর পর্যবেক্ষণ পাইপের ভেতরের পানি কমতে কমতে মাটির লেভেল থেকে ১ থেকে ২০ সেমি নিচে নেমে গেলে বা পাইপের ভেতরের পানি শুকিয়ে গেলে পুনরায় এমনভাবে সেচ দিতে হবে যাতে দাঁড়ানো পানির পরিমাণ ৩ থেকে ৫ সেমি হয়। এই প্রক্রিয়া ধান গাছে ফুল আসা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ফুল আসার পর থেকে দুই সপ্তাহ জমিতে ৩ থেকে ৫ সেমি দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে। এক সেচ থেকে পুনরায় সেচ দেওয়ার অবস্থায় আসতে মাটি ভেদে ৫ থেকে ৮ দিন সময় লাগবে। ফুল আসার পর্যায়ে যেন পানির ঘাটতি না হয় সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে বোরো মৌসুমে বাংলাদেশে গড়ে ১৩টি সেচ লাগে।
তবে এ ডব্লিউ ডি পদ্ধতি অনুসরণ করলে সেচ সংখ্যা ৮ টিতে নামিয়ে আনা অর্থাৎ গড়ে ৫টি সেচ (৩৮%) সাশ্রয় করা যাবে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সেচের পানি সাশ্রয় হবে, সেচের খরচ কমবে, অধিক জমি সেচের আওতায় আসবে, ধানের উৎপাদন বাড়বে, দেশ হবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং নিশ্চিত হবে খাদ্য নিরাপত্তা।
স্থানীয় কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, গতবার আমি বন্ধু ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রথমবারের মত এই প্রযুক্তির ব্যবহার করে লাভবান হয়েছি। এ মৌসুমেও আমার ২৫ হেক্টর জমিতে তাদের উদ্যোগেই ওই পদ্ধত্তি ব্যবহার করেছি। এই পদ্ধত্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের পানি কম লাগে ফলে ডিজেল বা বিদ্যুৎ খরচ কম হয় এবং বিঘা প্রতি ফসলের ১ থেকে ২ মণ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ওই ফাউন্ডেশনের কৃষি প্রোগ্রাম সংগঠক সেলিম রেজা বলেন, আমরা উপজেলার সকল কৃষককে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করছি এবং কোন লাভ ছাড়াই কৃষকদের মধ্যে এই প্রযুক্তি সরবরাহ করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. ভবসিন্ধু রায় বলেন, এ ডব্লিউ ডি সেচের একটি নতুন প্রযুক্তি। এটি ব্যবহারের ফলে কৃষকরা লাভবান হয়। এর উদ্দেশ্য হল মাটির নিচের পানির কম ব্যবহার করা। এতে ভবিষ্যতের জন্য পানি মজুত রাখা যাবে। এটি পরিবেশবান্ধব একটি প্রযুক্তি।
এমআই