সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শনিবার (০৪ মার্চ) দুপুর ১২ টায় উপাচার্যের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ডিসিপ্লিন কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া সভায় দোষীদের কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না সাত দিনের মধ্যে তাদেরকে তার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের বেশ কিছু নির্দেশনা আমরা ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন করেছি। যেমন, ফুলপরীকে তার পছন্দমতো হলে সিট দেওয়া, তার নিরাপত্তার জন্য পাবনা ও কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া, প্রভোস্টকে সরিয়ে নেওয়া। আরেকটি নির্দেশনা ছিলো ওই পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়ে। সেটার মূল চিঠি এখনও আমরা পাই নি। আমাদেরকে মেসেজ দেওয়া হয়েছে। সেটার সিদ্ধান্তও আমরা নিয়েছি। আজ বেলা ১২টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত উপাচার্যের কার্যালয়ে ডিসিপ্লিন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। দোষীদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এবং তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কার না করার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদেরকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে চূড়ান্ত বহিষ্কার করা হবে। এছাড়া হাইকোর্টের সকল নির্দেশনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। আইন প্রশাসক এবং প্রক্টরকে দায়িত্ব দিয়েছি। আপনারা ওনাদের মাধ্যমেই জানতে পারবেন।’
সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন- শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া, আইন বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী। প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের কর্মী।
এর আগে গত সোমবার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় দোষীদের হল থেকে বহিষ্কার করেছিল হল কর্তৃপক্ষ। এবং গত বুধবার তাদেরকে ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে ভুক্তভোগী ফুলপরীকে আগামী তিনদিনের মধ্যে তার পছন্দমতো হলে আবাসিকতা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলো আদালত। নির্দেশনা বাস্তবায়নে ভুক্তভোগীকে ক্যাম্পাসে ডেকেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে পছন্দের হল বাছাই করতে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় পাবনা ও কুষ্টিয়া পুলিশের নিরাপত্তায় ক্যাম্পাসে ফিরেছেন ভুক্তভোগী ও তার বাবা আতাউর রহমান। ভুক্তভোগীর পছন্দের ভিত্তিতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে তাকে আবাসিকতা প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, ‘হাইকোর্টের একটা নির্দেশনা ছিলো ফুলপরিকে তার ইচ্ছানুযায়ী হলে সিট প্রদান করার বিষয়ে। ইতোমধ্যেই সেটা কার্যকর করা হয়েছে। উপ-উপাচার্য স্যারের কাছে হাইকোর্টের মেসেজ আসার পর তিনি আমাকে অবহিত করলে আমরা তার সাথে যোগাযোগ করি। সে আজকে আসার ইচ্ছা পোষণ করে। আজকে সে বলছে যেহেতু শেখ হাসিনা হলে তার একটা খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাই সে আর সেখানে থাকতে চায় না। সে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছে। হলে আবাসন স্বল্পতা থাকার পরেও হল প্রভোস্ট হাইকোর্টের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সকল ফর্মালিটি মেইনটেইন করে তার পছন্দমতো হলের ৫০১ নম্বর রুমে তাকে আবাসিকতা প্রদান করা হয়েছে। এবং প্রশাসন কর্তৃপক্ষ তার সাথে দেখা করেছে। তাকে অভয় দেওয়া হয়েছে। সে সেখানে নিয়মিত থাকবে বলে জানিয়েছে।’
উল্লেখ্য, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাাণিত হওয়ায় গত বুধবার (১ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ দোষী সাব্যস্ত পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার ও আগামী তিনদিনের মধ্যে ভুক্তভোগীকে তার পছন্দমতো হলে আবাসিকতা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এর পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদনে হল প্রভোস্টের দায়িত্বহীনতা ও গাফিলতির বিষয় উঠে আসায় তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ওইদিনই দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তার পরিবর্তে ওই হলের সিনিয়র হাউজ টিউটর আহসানুল হককে সাময়িকভাবে প্রভোস্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে উপাচার্য প্রভোস্টের মূল দায়িত্ব প্রদান করবেন বলে জানা যায়।
এমআই