এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুর সদর উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন পরিষদের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৬ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সে লক্ষ্যে মনোনয়ন জমা, যাচাই বাছাই কার্যক্রমও শেষ হয়েছে। যদিও মনোনয়ন যাচাই বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর নতুন করে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মনোনয়ন পরিবর্তন করায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। এতে পুর্বে নির্ধারণ করা নৌকা প্রতীক পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। এ ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত হোসেন এবং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহসভাপতি মো. সাইফুল আলম কামাল উভয়েই নৌকা প্রতীক দাবি করে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন।
জানা গেছে, এই ইউনিয়নে প্রথমে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পান বর্তমান চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত হোসেন। ১৯ ফেব্রুয়ারী ছিলো মনোনয়ন জমাদানের শেষ তারিখ। ওই দিন সকালে আকষ্মিকভাবে প্রার্থী মনোয়ন পরিবর্তনের করে মো. সাইফুল আলম কামালকে মনোনয়ন দেয়ার খবর আসে কেন্দ্র থেকে। পরে কামাল আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক চেয়ে মনোনয়ন দাখিল করেন। অপরদিকে ফকির মো. বেলায়েত হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেন। পরদিনে ২০ ফেব্রুয়ারী তফসিল অনুযায়ী মনোয়ন যাচাই বাছাই সম্পন্ন হয় বিকাল চারটা পর্যন্ত। এতে উভয় প্রার্থী সঠিক বলে বিবেচিত হন। কামাল হোসেনকে দেয়া হয় নৌকা প্রতীক। কিন্তু সন্ধার পর ফের মনোনয়ন পরিবর্তন করে ফকির মো. বেলায়েত হোসেনকে পুনরায় আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দেয়ার ঘোষনা আসে। এতেই শুরু হয় জটিলতা। প্রার্থী তালিকা চুড়ান্ত হওয়ায় জেলা নির্বাচন অফিস থেকে প্রতীক পরিবর্তনের আইনগত সুযোগ না থাকায় ফকির মো. বেলায়েত হোসেন আদালতের স্মরণাপন্ন হন।
ফকির মো. বেলায়েত হোসেন জানান, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট করার পর ২৮ ফেব্রুয়ারী মহামান্য আদালত আমাকে নৌকা প্রতিক প্রদানের জন্য রিটার্ণিং কর্মকর্তাকে আদেশ প্রদান করেন। তিনি জানান. অপর প্রার্থী সাইফল আলম কামাল ওই দিনই মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আপীল করলে ০১ মার্চ বুধবার আদালত স্থিতিবস্থা জারি করে ০৫ মার্চ চুড়ান্ত শুনানীর তারিখ ধার্য করেন।
শুক্রবার রাতে ফকির মো. বেলায়েত হোসেন সংবাদকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন, আদালত আমাকে নৌকা প্রতীক দেয়ার নির্দেশ দিলেও সাইফুল আলম কামাল আদালতের নির্দশনা অমান্য করে নৌকা প্রতীক নিজের দাবী করে প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি পোস্টার ছাপিয়ে বিভিন্ন এলাকায় লাগিয়েছেন এবং মাইকিংও করছেন। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়ে কোন প্রতিকার হয়নি দাবী করে তিনি জানান, এতে সাধারণ ভোটাররা বিভ্রান্ত হচ্ছেন এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কামাল পেশি শক্তি প্রয়োগ করায় আগামী নির্বাচনের সুষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, দল ও আদালতের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করেই আমি নীরব ভুমিকা পালন করছি ও প্রচার প্রচারণা বন্ধ রেখেছি। রোববার আদালত যে নির্দেশনা দিবে আমি তা মাথা পেতে নিবো।
অপর দিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাইফুল ইসলাম কামাল জানান, আমি দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সন্মান রেখে বলতে চাই, আমি আদালত অবমাননার মত কোন কাজ করি নাই। আমাকে যখন আমার আইনজীবি বিষয়টি জানিয়েছে, এরপর থেকে আমি কোন পোস্টার লাগাইনি, যে সকল পোস্টার ছিলো তা সবই পূর্বের লাগানো। তাই আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গের অভিযোগ সত্য নয়। তিনি দাবী করেন, ফকির মো. বেলায়েত হোসেনই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
এই বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল আমীন বলেন, দুই পক্ষই উচ্চ আদালতে গিয়েছে। রবিবার শুনানী রয়েছে। আদালতের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না নৌকা প্রতীক কে পাচ্ছেন। ওই রায় না আসা পর্যন্ত দুই পক্ষই স্থিতিশীল অবস্থায় থাকবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৬ মার্চ কানাইপুরসহ ফরিদপুর সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের নির্ভাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্ভাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬৯জন, সাধারণ সদস্য পনে ৩৫৮জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১১৩ জন প্রতিদন্দিতা করছেন।
এমআই