নিজস্ব প্রতিনিধি:
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বিশ্ববাজারে এক লাফে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ৩৬ ডলার। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে দামি এই ধাতুটির দাম ঊর্ধ্বমুখীই থাকলো। এর মাধ্যমে টানা দুই সপ্তাহ বিশ্ববাজারে বাড়লো সোনার দাম। হঠাৎ করেই বিশ্ববাজারে সোনার দামে বড় উত্থান হয়েছে।
বিশ্বাজারে সোনার এমন দাম বাড়লেও এখনই দেশের বাজারে দাম বাড়ানো হচ্ছে না। দেশের বাজারে সোনার দাম নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সংশ্লিষ্টরা আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সোনার দাম পর্যালোচনা করতে মঙ্গেলবার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি বৈঠকে বসবে। যদি বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে এবং স্থানীয় বাজারে পাকা সোনার দাম বাড়ে, তাহলে ওই বৈঠক থেকে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, সপ্তাহের শেষদিন বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করেছি। কিন্তু আমরা দাম বাড়ানো বা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি স্থানীয় বাজারের ওপর ভিত্তি করে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও স্থানীয় বাজারে সেইভাবে প্রভাবটা পড়েনি। তাই আমরা আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখবো।
তিনি বলেন, সোনার দাম পর্যালোচনা করতে আমরা মঙ্গলবার বৈঠকে বসবো। যদি বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে এবং স্থানীয় বাজারে পাকা সোনার দাম বাড়ে, তাহলে আমরা দাম বাড়াবো। আর যদি বাজার পরিস্থিতি এমনই থাকে, তাহলে হয় তো দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নাও আসতে পারে।
এদিকে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার আগে এক মাস ধরে টানা দরপতন হয় সোনার। এতে এক মাসের মধ্যে প্রতি আউন্স সোনার দাম ১৩৫ ডলার কমে যায়। বিশ্ববাজারে টানা দরপতনের মধ্যে সম্প্রতি দেশের বাজারে দুই দফায় সোনার দাম কমানো হয়েছে। অবশ্য তার আগে টানা ছয় দফা দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হয়। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেশের বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছে সোনা।
চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি দাম বাড়ার মাধ্যমে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয় ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা। এর আগে কখনো দেশের বাজারে সোনার ভরি ৯৩ হাজার টাকা স্পর্শ করেনি। রেকর্ড দাম হওয়ার পর ফেব্রুয়ারিতে দুই দফা সোনার দাম কিছুটা কমানো হয়।
সর্বশেষ ২৬ ফেব্রুয়ারি সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম এক হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে ৯১ হাজার ৯৬ টাকা করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ৫০ টাকা কমিয়ে ৮৭ হাজার ১৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৮৭৫ টাকা কমিয়ে ৭৪ হাজার ৫৯১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ৬৯৮ টাকা কমিয়ে ৬২ হাজার ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস। বর্তমানে দেশের বাজারে এ দামেই সোনা বিক্রি হচ্ছে।
দেশের বাজারে সোনার এই দাম কমানোর পর বিশ্ববাজারে দাম বাড়তে দেখা যাচ্ছে। দেশের বাজারে সোনার দাম যখন কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয় সে সময় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল এক হাজার ৮১০ ডলার। এখন বেড়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৬৭ দশমিক শূন্য ৯ ডলারে। অর্থাৎ দেশের বাজারে দাম কমানোর পর বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ৫৭ ডলার।
এর মধ্যে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বেড়েছে ৩৬ দশমিক ২০ ডলার বা এক দশমিক ৯৮ শতাংশ। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে সোনার দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সোনার দামে বড় উত্থান হলেও প্রথম তিন কার্যদিবস টানা দরপতন হয়।
গত সপ্তাহের লেনদেন শুরু হওয়ার আগে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল এক হাজার ৮৫৫ দশমিক ২৫ ডলার। সেখান থেকে ৮ মার্চ লেনদেনের এক পর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম এক হাজার ৮১০ ডলারে নেমে আসে। অর্থাৎ তিনদিনে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৪৫ ডলার কমে যায়। এমন বড় পতনের পর আবার বড় উত্থান হয়। সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ৫২ ডলার।
সময় জার্নাল/এলআর