সর্বশেষ সংবাদ
ঋণের শর্ত বাস্তবায়নে ভোক্তার ওপর চাপ আরও বাড়বে * আইএমএফ’র মতো বিশ্বব্যাংকও ঋণ দিতে শর্ত চাপাচ্ছে
দেলোয়ার হুসেন : আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নতুন করে বড় ঝুঁকির মুখে পড়েছে দেশের সার্বিক অর্থনীতি। তাদের শর্ত মানতে ইতোমধ্যে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ানো হয়েছে। এতে বেড়েছে সব ধরনের সেবা ও পণ্যের দাম। উৎপাদন ব্যয় বেশি মাত্রায় বাড়ায় শিল্প খাত পড়েছে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। নিম্নমুখী মূল্যস্ফীতির হার আবার ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। ডলার সংকট আরও প্রকট হয়েছে। আমদানি কমিয়েও সংকট মোকাবিলা করা যাচ্ছে না, উলটো আরও বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এখন নতুন করে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ নিয়ে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণের চাপ সবচেয়ে বেশি।সূত্র জানায়, বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিকভাবে আগে থেকেই বাংলাদেশ সংকটের মুখে পড়ে। এ সংকট এখন আরও প্রকট হয়েছে। এতে ডলারের দাম বেড়ে গিয়ে টাকার মান কমে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি দেশের বাজারে সব ধরনের পণ্য ও সেবার দাম বাড়ে। এতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট (আগের বছরের কোনো মাসের সঙ্গে চলতি বছরের একই মাসের তুলনা) ভিত্তিতে আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠেছিল। এক বছরের হিসাবে এ হার ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এরপর থেকে পয়েন্টু টু পয়েন্ট হিসাবে মূল্যস্ফীতির হার টানা ৫ মাস কমেছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে আবার বেড়েছে। আগামীতে এ হার আরও বাড়তে পারে। এদিকে এক বছরের গড় হিসাবে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাচ্ছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট হিসাবে জানুয়ারিতে এ হার কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমেছিল। যদিও ওই সময়ে প্রায় সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে উঠেছে। জানুয়ারিতে এক বছরের হিসাবে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে তা আরও বেড়ে ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এ হার ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এর কারণ হিসাবে জানা গেছে, শীতে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়ার কারণে সরবরাহ বাড়ে। এ কারণে এ সময়ে কিছু পণ্যের দাম কমে। এর মধ্যে রয়েছে-সবজি, আটা, পেঁয়াজ ইত্যাদি। এতে সাম্প্রতিক সময়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমেছে। তবে আগের কয়েক মাস এ হার বেশি হওয়ায় গড় হিসাবে বেড়েছে। এরই মধ্যে তিন দফায় বিদ্যুৎ ও দুই দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রভাবে এখন মূল্যস্ফীতির হার আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।গত আগস্টে সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতির হার পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে বাড়লে তা নিয়ে চিন্তিত নন। গড় হিসাবে বাড়লে চিন্তার কারণ। কিন্তু এখন গড় হিসাবে এ হার বাড়তে শুরু করেছে। সূত্র জানায়, আইএমএফ’র ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করতে ভর্তুকি কমাতে সাম্প্রতিক সময়ে তিন দফায় বিদ্যুতের দাম খুচরা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর আগে পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে ১৭ শতাংশ। গ্যাসের দাম দুদফায় গড়ে শত ভাগের বেশি বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৪২-৫২ শতাংশ। এর প্রভাবে অন্যান্য প্রায় সব পণ্যে দাম বাড়ছে। এছাড়াও শীতের পর গ্রীষ্ম ও বর্ষায় খাদ্যপণ্যের সরবরাহ কমে গিয়ে দাম বাড়ে। একই সঙ্গে আইএমএফ’র শর্ত বাস্তবায়নের ফলে ডলারের দাম আরও কিছুটা বাড়বে, কমে যাবে টাকার মান। এসব মিলে আগামীতে মূল্যস্ফীতির হারে চাপ আরও বাড়তে পারে। এতে অর্থনীতিতে আবার নতুন করে বহুমুখী চাপ তৈরি হবে। ভোক্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকারি খাতের ব্যয় বাড়বে। বৈদেশিক দায়দেনাও বাড়বে।ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা করতে আইএমএফ থেকে সরকার ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে। প্রতি ৬ মাস পরপর ছয় কিস্তিতে এ ঋণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২ ফেব্রুয়ারি ঋণের প্রথম কিস্তি বাবদ প্রায় ৪৮ কোটি ডলার পেয়েছে। এতে রিজার্ভ সামান্য বাড়লেও এখন আবার কমে গেছে। রিজার্ভ এখন ৩ হাজার ১১৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপকভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করে রিজার্ভ ওই পর্যায়ে ধরে রাখা হয়েছে। রোজা ও ঈদের কারণে আমদানি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে জুনের পর থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এ খাতে শুধু রপ্তানি শিল্পের ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে বকেয়া দেনা ১১৮ কোটি ডলার। মোট স্বল্পমেয়াদি ঋণ ১৬০০ কোটি ডলার। মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ৯৪০০ কোটি ডলার। স্বল্পমেয়াদি ঋণের বড় অংশই চলতি বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।আগামীতে আমদানি বৃদ্ধি ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপের কারণে ডলারের ওপরও চাপ বাড়বে। কারণ আমদানি বেশি দিন নিয়ন্ত্রণ করলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও সংকুচিত হয়ে পড়বে। গত বছরের মার্চ থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় ইতোমধ্যে অনেক শিল্পের কাঁচামালের সংকটে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গ্যাস, জ্বালানি তেল ও কয়লা আমদানি কমানোর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে এ ঘাটতি চরম আকার ধারণ করতে পারে। এতে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত ও জনভোগান্তি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে আইএমএফ’র ঋণেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। তবে কিছুটা উপশম মিলেছে।এদিকে ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করতে সরকার দ্রুত গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। আরও বাড়ানোর চাপ রয়েছে। এতে বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর চাপ বেড়েছে। মানুষের চাহিদা কাটছাঁট করায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিও কমেছে। ফলে প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হবে।তবে আইএমএফ’র ঋণের বড় ইতিবাচক দিক হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অন্যান্য সংস্থা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের ওপর আস্থা পাবে। এতে অন্যান্য সংস্থার ঋণ ছাড় বাড়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। এখন আইএমএফ’র পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকও ঋণের শর্ত নিয়ে দর কষাকষি করছে। একই অবস্থা অন্যান্য সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রেও। সময় জার্নাল/এসএম
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল