মোঃ আরিফুল ইসলাম : আপনি যখন ছোট একটা ওয়েবসাইট অথবা ওয়েবসাইট ছাড়াই শুধু মাত্র ফেসবুক পেজ নিয়ে বিজনেস শুরু করেন তখন ধরেই নেয়া যায় যে সেটা আপনি একা একাই করছেন খুব বেশি হলে দুইজন, কিন্তু কাজ তো অনেক, সিদ্ধান্তের ব্যাপারও থাকে অনেক।
কি করছেন এরকম অবস্থায়? সব সিদ্ধান্ত একাই নিচ্ছেন, নাকি আশেপাশের অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছেন , যা খুবই জরুরি। অভিজ্ঞদের পরামর্শ অনেকেই নিচ্ছে সেটা আমি জানি আবার অনেক ফেসবুক পেইজ, যারা নিয়মিত ফেসবুকে পেইড ক্যাম্পেইন চালায় তাদের পেজ দেখে মনে হয় তারা কারো কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছে। নিচে কিছু ব্যাপার পয়েন্ট আকারে তুলে ধরছি:
আপনি বিজনেস শুরু করবেন নাম কেমন হবে
আপনি বিজনেস শুরু করবেন নাম কেমন হবে, নিজে নিজেই একটা নাম ঠিক করলেন, তারপর সেটাই ফাইনাল করে ফেল্লেন,অন্য কাউকে জিজ্ঞাসও করলেন না, বিজনেসের ক্ষেত্রে নাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই সেটা ঠিক করার আগে আপনার এটা নিয়ে গবেষণা করা উচিৎ। দেখা গেলো নাম সুন্দর কিন্তু ডোমেইন খালি নেই, আপনি সেটা জানেনও না, নিজের ভালো লাগলো নাম দিয়ে ফেসবুক পেইজ খুললেন, যখন ওয়েবসাইট বানানোর প্রয়োজন হবে তখন এই নামে তো বানাতে পারবেন না, নামের আগে,পরে কিছু অ্যাড করতে হবে, যেটা খুব ভালো দেখায় না।
তাই আইটিতে অভিজ্ঞ একজনের কাছে আপনি যদি জানতে চান তাহলে সে আপনাকে পরামর্শ দিবে "ডোমেইন জেনারেটর" ধরনের ওয়েবসাইট থেকে নাম বাছাই করুন তাহলে ডোমেইনও খালি পাবেন।
এরকম আরো অনেকগুলা লেখা নিয়ে মার্কেটে আমার নিজের লেখা একটা বই আছে, যা মূলত যারা ব্যবসা করছেন তারা যেন ফেসবুক বুস্ট ছাড়াও যে অনেক কিছু করা লাগে, করতে হয় সে জন্য লেখা,। আগ্রহী হলে আমাকে ইনবক্স করতে পারেন।
লোগো বানাবেন, সেটা কেমন হবে
একটা বিজনেসের পরিচিতির জন্য লোগো খুব গুরুত্বপূর্ণ, আপনি বিজনেস করছেন তার মানে এই না যে আপনাকে সব কিছু পারতে হবে, সব কিছু বুঝতে হবে, এটা সম্ভবও না, আপনি অভিজ্ঞ কাউকে লোগো বানাতে দিন, কিছু টাকা বেশি লাগুগ, লোগো তো দুই দিন পরপর পরিবর্তন করাও ঠিক না, অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে লোগো বানালে সে সুন্দর করে একটা লোগো বানিয়ে দিবে,এখানে দেখা যায় প্রফেশনাল একজন ডিজাইনার তার ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে লোগো ডিজাইন করতে পারে না, যার লোগো, ব্র্যান্ড, আইডেন্টিটি ইত্যাদি সম্পর্কে কোন আইডিয়া নাই সেও বিভিন্ন রকম শর্ত জুড়ে দেয়, সেইভাবে ই ডিজাইনারকে লোগো তৈরি করতে হয়, মানে ক্লাইন্ট যা বলে তাই, তারও তো কোন উপায় নাই। এটা বলছি না যে লোগো ডিজাইনার যা করে আপনাকে সেটাই মানতে হবে, অবশ্যই আপনার মতামত থাকবে তবে যে ডিজাইন করছে তার কথাও শুনুন, তার যুক্তিও শুনুন এরপর দুইজন মিলে একটা সিধান্ত নিন। এটা শুধু লোগো ডিজাইনের ক্ষেত্রে না, সব রকম ডিজাইনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
ফেসবুকে পেইড প্রোমশন করবেন, সেটা কেমন হবে
অনেকে নিজের বিজনেস নিজেই পেইজ প্রোমশন করে, বুস্ট পোস্ট থেকে বয়স, লিঙ্গ, লোকেশন দিয়ে একটা ক্যাম্পেইন চালু করে দেয়, এরপর কোন সেল পায় না, হতাশা তৈরি হয়, এখানে আমি বলবো নিজের অ্যাড নিজে দিতে চাইলে এটা আগে শিখে নেন, আমি বলছি না অ্যাড এজেন্সির কাছে যান, তবে নিজে শিখে নিতে হবে, আর অ্যাড এজিন্সির কাছে গেলে তাদের কথা শুনতে হবে, তারা আপনার পেইজ গবেষণা করে দেখলো আপনার জন্য ২০-৩৫ বছর টার্গেটিং ঠিক আছে। আপনি মনে করলেন তাহলে বাকিরা তো আমার অ্যাড দেখবে না, আমার লস, কিন্তু এখানে আপনার লজিকটা একদমই ভুল, যেহেতু আপনি ফেসবুক অ্যাড সিস্টেম জানেন না তাই এমন চিন্তা করেছেন, তাই অভিজ্ঞরা যেটা বলে সেটাকে গুরুত্ব দিন, অবশ্যই সাথে আপনার মতামত থাকবে, কাউকে দিয়ে অ্যাড যদি দেন তাকে বলে দিবেন আপনার প্রোডাক্ট এর প্রাইজ রেঞ্জ কত, কোন সব এলাকা থেকে অর্ডার বেশি আসে, তাদের বয়স কেমন থাকে তাহলে যে অ্যাড দিবে তার জন্য ও সহজ হয়ে যাবে ব্যাপার টা বুঝতে।
একটা অ্যাড এজেন্সি যদি বলে আপনি লিড জেনারেশন অ্যাড দেন, আপনার প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসের সাথে এটা মানানসই, আপনি হয়তো লিড জেনারেশন অ্যাডের নামই শুনেন নাই, তাই বলে তাদের পরামর্শকে একদম না করে দিয়েন না, লিড জেনারেশন বলেছে, আপনার কাছে যদি মনে হয় এটা কাজ করবে না তাহলে তাদের কাছেও জেনে নেন তারা কিভাবে বলছে যে কাজ করবে, তারা তো এই সেক্টরে আপনার থেকে অভিজ্ঞ, তাদের সাথে কথা বললে আপনার ধারনা পাল্টে যেতেও পারে।
প্রোডাক্ট এর ফটোগ্রাফি করবেন কিভাবে করবেন
ফেসবুক ঘুরলেই প্রচুর প্রোডাক্ট দেখা যায়, যার যেমন ইচ্ছা ফটোগ্রাফি করছে, বিশেষ করে জামা কাপড়ের বিজনেসে, কিন্তু একটু চিন্তা করলেই আপনার ফটোগ্রাফি অনেক ভালো হতে পারে এবং যেটা খুবই জরুরি।
অনেকে বিছানার উপর, মেঝেতে রেখে আরো ইত্যাদি উপায়ে ফটোগ্রাফি করে থাকে, তাদেরকে বললে শুনতে পাওয়া যায় যে মডেল দিয়ে ফটোগ্রাফি করার মত বাজেট নেই, ফটোগ্রাফি স্টুডিও করার মত বাজেট নেই, আসলেই কি প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি মডেল ছাড়া অচল?আসলেই কি ফটোগ্রাফি স্টুডিও করতে অনেক টাকা লাগে, আমার কিন্তু সেরকম মনে হয় না।
আপনি আপনার নিজের বাসার ওয়ালে একটা হাঙ্গারে জামা ঝুলিয়ে
খুব সুন্দর ফটোগ্রাফি করতে পারেন, প্রোডাক্ট যদি হয় ইলেক্ট্রনিক এক্সেসোরিস তাহলে টেবিলের উপর সাদা অথবা নরমাল একটা চাদর বিছিয়ে সুন্দর প্রফেশনাল লুকের ছবি তুলতে পারেন,গুগল থেকে কেন ডাউনলোড করতে যাচ্ছেন, কপিরাইট ধরে ফেললে আপনার পেজের ই ক্ষতি। এখন তো ফটোগ্রাফির জন্য অনেক কম দামে লাইট বক্স পাওয়া যাচ্ছে, বিভিন্ন সাইজে, আপনিও একদম অল্প টাকা খরচ করে বানিয়ে ও নিতে পারেন।
উপরে যে পয়েন্টগুলা বললাম সেগুলি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ, আমি যেটা সব সময় বলার চেস্টা করি প্রোডাক্ট সেলের জন্য শুধু পেইড প্রমোশন করলেই হবে না, আরো ছোট ছোট কিছু জিনিস আপনাকে করতে হবে, উপরে যে ব্যাপারগুলা নিয়ে লেখার চেষ্টা করলাম সেগুলা কি খুব কঠিন মনে হচ্ছে, আমার মনে হয় না খুব কঠিন, এগুলা আপনার একটু ইচ্ছা থাকলে ই অ্যাপ্লাই করতে পারেন আর অ্যাপ্লাই করলে নিজেই আপনার বিজনেসের আগের এবং পরের পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
লেখক : কো-ফাউন্ডার ও সিইও, টেক প্রো বি।