মুহা: জিল্লুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে কৃত্রিম সংকট এড়াতে এবং সাতক্ষীরায় পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিত ভ্রাম্যমান আদালতের একটি টিম ভোমরা স্থলবন্দরের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এছাড়া পেঁয়াজ, রসুনসহ সকল প্রকার মজুদকৃত পন্য রমজানের আগেই বাংলাদেশের বিভিন্ন বাজারে বিপননের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রোববার (১৯ মার্চ) ভোমরা স্থলবন্দরের বিভিন্ন পেয়াজের গুদামে এ অভিযান পরিচালনা করেন, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল আমিন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির একটি লিখিত পারমিশন বা ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) ছিল। কৃষি মন্ত্রনালয়ের উদ্ভিদ পণ্য আমদানি পারমিটের(আইপি) জন্য আবেদন করলে প্রতি বছর আইপির মেয়াদ দেয়া হয় ৯০ থেকে ১২০ দিন। চলতি বছরে সেই আইপির মেয়াদ দেয়া হয়েছিল ১৫ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু পরে এই পর মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি। ফলে ইমপোর্ট পারমিটের মেয়াদ না থাকায় বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে সব ধরনের ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি বছর দেশীয় পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য কৃষি বিভাগ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ি আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে অধিক মুনাফা লাভের আশায় পরিকল্পিতভাবে পেঁয়াজ মজুদ করতে শুরু করে। ফলে দেশের বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকা সত্তেও সিন্ডিকেটের কারণে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত ৩/৪ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৮/১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৮ টাকা দরের দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি। যা কয়েকদিন আগেও ছিল মাত্র ২৫ টাকা কেজি। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় নিন্ম আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্তরা।
তবে আমদানিকারকদের কেউ কেউ বলছেন, তারা পেঁয়াজ মজুদ করেননি। দ্রুত গোডাউনে রাখা পেঁয়াজ বাজারে ছাড়বেন। কিন্তু তার পরও বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অপরদিকে রোজায় দ্রব্যমূল্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিতের লক্ষ্যে অসাধু চক্রদের ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। এজন্য সাতক্ষীরায় পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু হয়েছে। রোববারের অভিযানে ভোমরায় গোডাউন ভর্তি ভারতীয় ও দেশী জাতের পেঁয়াজ মজুদ রাখার প্রমাণ পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ।
ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকায় জেলা প্রশাসনের নির্দেশে রোববার (১৯ মার্চ) দিনভর ভোমরা স্থলবন্দরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল আমিন ভ্রমাম্যান আদালত পরিচালনা করেন। এসময় তিনি বন্দর অভ্যন্তরে পেঁয়াজ আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও গোডাউনে মজুদ রাখার অভিযোগে ভোমরা বন্দরের শুভ এন্টারপ্রাইজ এর মালিক বিকাশ চন্দ্রকে ১০ হাজার টাকা, রাফসান এন্টারপ্রাইজ মিজানুর রহমানকে ২৫ হাজার এবং এস আর এন্টারপ্রাইজ এর মালিক সাদ্দাম হোসেনকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া নিশি এন্টারপ্রাইজ এর মালিক খোরশেদ আলম এর কাছ থেকে মুচলেকা নেয় ভ্রাম্যমান আদালত।
ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকালে উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমুল হাসান, র্যাব ৬ সাতক্ষীরা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর গালিব, সাতক্ষীরা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এস এম আব্দুল্লাহ, বিজিবি ভোমরা ক্যাম্প কমান্ডার শামীম হোসেনসহ সঙ্গীয় ফোর্স উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল আমিন এ সময় বলেন, গোডাউনে পেঁয়াজ মজুদ রেখে রমজানকে সামনে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির একটি চেষ্টা চলছে। যার ফলে খোলা বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই খবরে বন্দরের বিভিন্ন গুদামে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে সতর্কতা হিসেবে ব্যবসায়ীদের রমজানের আগেই মজুদকৃত পেঁয়াজ, রসুনসহ সকল প্রকার মজৃদকৃত পণ্য বাজারে বিপননের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, আগে থেকে ব্যবসায়িদের সর্তক করে দেয়ার পরও পেঁয়াজ মজুদ রেখে বাজারে মূল্য বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। আসন্ন রমজান উপলক্ষে যাতে ব্যবসায়িরা বাজারে পেঁয়াজ সহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে না পরে সেজন্য এই অভিযান অব্যহত থাকবে।
উল্লেখ্য, পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দিন থেকে টাস্কফোর্সের অভিযানিক দলটি সাতক্ষীরা শহর ও ভোমরা স্থলবন্দরে ঘুরে ঘুরে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করলেও গুরুত্ব না দেয়ায় এই জরিমানা করা হয়েছে।
এমআই