বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

রমজানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

সোমবার, মার্চ ২৭, ২০২৩
রমজানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস পবিত্র মাহে রমজান। পবিত্র রমজান মাস আসলেও বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশ ছাড়াও অনেক দেশে নিত্যপণ্যের দাম গ্রাহকদের জন্য কমিয়ে আনা হয়। তবে বাংলাদেশে রমজান আসলেই সাম্প্রতিক সময়ে দৃশ্যমান হয় উলটো চিত্র। রমজানের ঠিক আগ মুহুর্তে দেশের কাঁচাবাজারগুলোতে অভাবনীয় হারে বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের দাম। এবারের রমজানেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ঠিক রমজানের কাছাকাছি সময়ে নয়, দু-এক মাস আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। যাতে নতুন করে রমজানের সময় খুব বেশি বাড়াতে না হয় কিংবা বাড়ানোটা চোখে না পড়ে। এর বেশি প্রভাব পড়ছে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, শ্রমিক শ্রেণি ও শিক্ষার্থীদের  উপর।

এ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন দেশের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা, তাদের  প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান।

নাজমুস সাকিব,
শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।

রোযার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পেছনে দায়ী অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট। সাধারণত পন্যের মূল্য বৃদ্ধি পায় তখন যখন বাজারে চাহিদা বেশি কিন্তু পণ্য কম থাকে অথবা পণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় বা আনুসাঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু রোযার কিছু কিছু পণ্য বাদ দিয়ে বাকি গুলোর জন্য এই যুক্তি প্রযোজ্য হয় না। শুধু অধিক মুনাফার আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে। এসময় ভোগান্তির শিকার হয় স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী পরিবারগুলো। সার্ভিস দেয়া মানুষেরা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সাথে তাদের সেবার মূল্য বৃদ্ধি করে, কিন্তু স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী মানুষগুলোর এই সুযোগ থাকে না। তাদের খরচ কমিয়ে মানিয়ে নিতে হয়।

পবিত্র রমজান মাসে এক শ্রেণির লোক ব্যবসার নামে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ কৃত্রিমভাবে কমিয়ে বেশি মুনাফা লাভে দ্রব্যসামগ্রীর দাম বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্যে ভেজাল মেশায়। এসব কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র নিপীড়নমূলক ও অনৈতিক কাজই নয় বরং তা মানুষের অধিকারের ওপর চরম হস্তক্ষেপ এবং অত্যাচার-নির্যাতনের মতো মারাত্মক অপরাধও বটে।

এ কে আজাদ
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মজুদদার, আড়তদার আর বড় বড় ব্যবসায়ী যারা সিন্ডিকেটের অপব্যবহার করে অবৈধ সুবিধা নিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও রমজানে দাম বাড়িয়েছে অনেক বেশি। তার বিরূপ প্রভাব ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি স্তরে চরমভাবে  স্পষ্টত দৃশ্যমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের উপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির নেতিবাচক প্রভাব অসামান্য।

আগে যে খাবার ৪০-৫০ টাকায় পেতাম, সে খাবারের জন্য এখন আমাকে গুনতে হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। আবার ইফতারিতেও আমাকে আলাদা করে ৬০-৭০ টাকার একটা প্রতিদিনের বাজেট রাখতে হচ্ছে। অনেক সময় তাতেও হচ্ছে না। পাশাপাশি, দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসের দাম বেড়েই চলছে যা আমার পক্ষে মানিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সীমিত বাজেটের মধ্যে আমার জীবনযাপন আর সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাসায় চলে যাবো।খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে অনেক পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের খরচ কমাতে বাধ্য করেছে।

মোঃ রকিবুল ইসলাম
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ,
বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি।

কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পবিত্র রমজান মাসে অসাধু পথ অবলম্বন করে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভিন্ন ভাবে তাদের সরলতার সুযোগ গ্রহণ করতেছে। কারণ এই রমজান মাসেই মানুষ বাধ্য হয়েই কেনাকাটা করতেছে। রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ফলে রোজাদার ঈমানদারদের কষ্ট ও দুর্ভোগ চরমভাবে বেড়ে যায়। 

বিশেষ করে ডাল, গরম মসলা, চিনি, ছোলা, শাকসবজি ও তরি-তরকারি; যেগুলো রমজানে বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়, সেসব দ্রব্যসামগ্রীর দাম ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় রোজাদারের সাহরি ও ইফতার করতে গিয়ে বিশেষ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন শিক্ষার্থীরাও। গত দুই এক মাস ধরে বিশেষ করে রমজান মাসে বাজারে চাল, ডাল, চিনি, আটা ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। থেমে নেই কাঁচাবাজারে সবজির দামও। চড়া দামে ক্রয় করতে হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব দ্রব্যসামগ্রী। 

এতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ এবং হোস্টোলে থাকা শিক্ষার্থীরাক্ষুব্ধ।দ্রব্যমূল্য  ঊর্ধ্বগতি রোজা পালনে বেশ প্রভাব ফেলে মেসে বা হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীদের। ক্রয়ক্ষমতার অভাবে অনেকেই পর্যাপ্ত খাদ্য কিনতে পারবেন না। ফলে ঠিকমতো সেহরি ও ইফতার করতে পারে নাহ।

মোঃ মিজানুর রহমান বিজয়
আইন বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।  

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এটি আর কোনো নতুন বিষয় নয় আমাদের দেশে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এখন বিশেষ খবরে পরিণত হয়েছে। এর জন্য দায়ি এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা,যারা এই রমজান মাসকে ঘিরে এই সময়কে কেন্দ্র করে ব্যবসাকে পরিণত করেছে টাকার ব্যবসায়। রমজান মাসে বিশেষ করে চাল,ডাল,সবজি,তেল সহ নানা দ্রব্যের যে পরিমাণ দাম হওয়ার কথা ছিল,তার দ্বিগুণ হয়েছে।

আমাদের হোস্টেলে আগে মিল চার্জ ছিল ৫৫ টাকা এখন দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার কারণে সেই মিল চার্জ ৭০ টাকায় বেড়ে গেছে। এই ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা অভিমত দেন যে, সরবরাহ কম,জ্বালালি অর্থাৎ ডিজেল পেট্রোলের দাম বাড়ায় পরিবহন খাতেও বেশি অর্থ লাগে যার ফলে সব কিছুর দাম উর্ধ্বগতি। কিন্তু সাধারণ জনগণ নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী শ্রেণির হাতে জিম্মি। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা মৌসুম ভেদে সব রকম দ্রব্য সংরক্ষণ করে এবং পরে সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করে,সাধারণ জনগণে বিভ্রান্তে ফেলে দেয়।

তাই এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে পরিবহণ চাঁদাবাজি বন্ধ,বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা, ন্যায্যমূল্যে পণ্য  সরবরাহ নিশ্চিত, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো সহ ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।এ সমস্যা সমাধানে সরকার,ব্যবসায়ী জনগণসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে,তবেই সম্ভব দ্রব্যসামগ্রীর উর্ধ্বগতি কমানো।

কৌশিক রায় শুভ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। 

রমজান আসার সঙ্গে সঙ্গে নিত্যদিনের দ্রব্যমূল্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত এমনকি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে সাধারণ 
মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। যা সব শ্রেণির মানুষের জন্যই অত্যন্ত কষ্টকর।

দেশে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা সব সময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। সুযোগ পেলেই তারা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটেন।

রোযা আসলেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি মুনাফা অর্জন করার চেষ্টা করে। আর এসময়  চাহিদাও বেশি থাকে।অনেকেই রোযার আগে থেকেই বাড়তি পণ্য কিনে রাখে।আর এ বছর সকল পণ্যর দাম আগে থেকেই বেশি থাকার কারণে তার প্রভাব পড়েছে রমজান মাসেও।

বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগজনক। এখন বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১১৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা কেজি, বোতলজাত সয়াবিন তেল এক লিটার ১৮৫ টাকায় বিক্রি হয়। যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। এজন্য দরকার সঠিক বাজার মনিটরিং। 

মেরাজুল ইসলাম মারুফ
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ।

রমজানে পণ্য দ্রব্যের দাম বাড়ার প্রধান কারণ হলো মধ্যসত্ত্বভোগীদের লোভী মনোভাব।রমজান আসার আগেই এক শ্রেণির লোভী ব্যবসায়ীরা পণ্যদ্রব্য মজুত করে রাখে।ফলে বাজারে দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট তৈরী হয়ে দাম বেড়ে যায়।এছাড়াও আমাদের দেশের লোকদের মাঝে একসাথে রমজানের সব রকম পণ্য কেনার একটি ঐতিহ্য লক্ষ্য করা যায়।রমজান আসলে তারা মনে করে পুরো রমজানের সব বাজার তারা একসাথে করে রাখবে।এতে বাজারে অতিরিক্ত চাহিদার সৃষ্টি হয়।ফলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।

এখন খোলা চিনির দাম ১১৫-১২০ টাকা কেজি ছুঁয়েছে, যা গত বছরের রমজানে ছিল ৮০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ চিনির ক্ষেত্রে ভোক্তার খরচ বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। যদিও সরকার নির্ধারিত চিনির দাম ১০৭ টাকা, কিন্তু এ দামে ক্রেতারা কিনতে পারছেন না কোথাও। একই অবস্থা সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রেও। খোলা সয়াবিন ১৬৭-১৭২ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত রমজানে ১৪০ টাকার কমে পাওয়া যেত। বোতলজাত সয়াবিনের দাম প্রায় একই সময়ের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে এখন ১৮৫ থেকে ১৮৭ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অর্থাৎ দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। যা একজন শিক্ষার্থীর ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে।

পণ্যদ্রব্যের অতিরিক্ত দাম বাড়ানোর ফলে সমাজের নিম্ন শ্রেণির লোকদের খুব বেশি কষ্ট হয়।তাদের সীমিত আয়ের কারণে তারা তাদের নিত্তদিনের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খায়।মুনাফা ভোগীরা অতিরিক্ত লাভের ফলে এক শ্রেণির লোকদের অসৎ উপায়ে বেশি লাভ হয় অন্যদিকে দাম বাড়ার ফলে সমাজের এক শ্রেণির লোকজন খুব কষ্ট করে দিন অতিবাহিত করে।সরকার এখন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার তদারকির মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল করার জন্য বদ্ধপরিকর।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল