শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের আদিতমারীতে তিস্তার চড়ে ৪৯ কোটি টাকা ব্যায়ে চলমান বেরিবাধের (বাম তীর সংরক্ষণ) নির্মাণ কাজে ব্যপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম না মেনেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকদের ম্যানেজ করে যাচ্ছেতাই কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারের লোকজন। ব্লক ও জিও ব্যাগ ডাম্পিং এ অনিয়ম লক্ষ করা গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে নিষেধ করার পরেও ক্ষমতা দেখিয়ে অনিয়ম চলছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায় ছয়টি ওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলীন। ইউনিয়নটিকে রক্ষায় এই আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ গেলো বছর ৪৯ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি বেরিবাধের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
কাজের প্যাকেজের অংশ হিসেবে রংপুরের ঠিকাদার ফরহাদ হোসেন ৭ নম্বর প্যাকেজটি পান। স্থানীয় ঠিকাদার নুরে আলম সিদ্দিকি বাবুকে তিনি কাজের দেখভালের দায়িত্ব দেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি নানান অজুহাতে অনিয়ম করে কাজ করে যাচ্ছেন। স্থানীয় বিএনপিতে শক্ত অবস্থান থাকায় প্রভাব খাটিয়ে পাউবোর লোকজনকে ম্যানেজ করে তিনি এ কাজ করে যাচ্ছেন।
এর আগেও তার কাজের অংশে জিও ব্যাগ ডাম্পিং না করেই ব্লক লুকানোর অভিযোগ উঠে। এছাড়াও বেরিবাধের কাজের অংশ থেকে মেশিন ও ভেকু লাগিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে যাচ্ছেন।
কিন্তু গত দুতিন দিন থেকে তিনি প্রকাশ্যে ব্লক ডাম্পিং শুরু করেছেন। ৮/১০ ফিট গর্তে পাউবো অনুমোদিত বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে তার উপর কয়েক স্তরের ব্লক ফেলার কথা থাকলেও সম্প্রতি ঢাকা থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তা বালু ভর্তি জিও ব্যাগে ত্রুটি পাওয়ায় অনুমোদন দেননি। তারপরেও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাদের ম্যানেজ করে বস্তা ডাম্পিং না করে গভীর গর্তে ব্লক ফেলা হচ্ছে। এতে যেমন কাজের অনিয়ম হচ্ছে তেমনি কাজের স্থায়ীত্ব নিয়েও সংশয় দেখা দিচ্ছে।
সম্প্রতি লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের চাকুরী জনিত বদলি হওয়ায় নতুন কর্মকর্তা এখনো যোগদান করেননি। সে সুযোগে অনিয়ম আরও বেড়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে কর্মচারীদের সর্দার এনামুল হক উলটা কাজ আরও শক্ত হচ্ছে দাবী করে বলেন, এখনো ২য় দফায় জিও ব্যাগ অনুমোদন হয়নাই। আপাতত পিচিং এর জন্য ব্লক ফেলা হচ্ছে। কাজের মানের বিষয়ে তিনি বলেন, বস্তা ফেলার চেয়েও কাজ শক্ত হয়েছে। অনেক ব্লক ফেলানো হচ্ছে তাই কাজ আরও ভাল হচ্ছে। পরে জিওব্যাগ ফেলানো হবে
বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারের প্রতিনিধি নুরে আলম সিদ্দিকি বাবুকে (01711-075318) কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি উত্তর দেননি।
বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত পাউবোর কর্মকর্তা উপ সহকারী প্রকৌশলী রতন সরকার বলেন, আজ অন্য কাজে ভিজিটে যাওয়ায় ওইদিকে যেতে পারিনি। সকালে এই খবর শুনেই ঠিকাদারকে মানা করা হয়েছে। জিও ব্যাগ না ফেলে কোনভাবেই ব্লক ফেলার নিয়ম নেই। এতে কাজের মান খারাপ হবে। তিনি আবারও ঠিকাদারকে নিষেধ করবেন বলে জানান।
বিষয়টি নিয়ে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী এটিএম রেজাউর রহমান বলেন, জিও ব্যাগ না ফেলার পর ব্লক ফেলতে হবে। আগামী বন্যা মোকাবিলায় আমরা সাইডে পিচিং এর কাজ করছি,বস্তা ডাম্পিং করছি। গতকাল বিষয়টি জানার পর লোক পাঠিয়ে ঠিকাদারকে নিষেধ করা হয়েছিলো। বস্তা না ফেলে ব্লক ফেলানোর বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সময় জার্নাল/এলআর