মোঃ ইমরান মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি:
যে দূর্গম চরাঞ্চলে একসময় পায়ে হেটে যাতায়াত করাও ছিলো কষ্টের কাজ। সেই দূর্গম চরে এখন পল্লী বিদ্যুতের সারি সারি খুটি। অন্ধকার নেমে আসলে জ্বলে উঠে বৈদ্যুতিক বাতির আলো। সেই বাতির আলোয় এখন আলোকিত জামালপুরের ইসলামপুরের যমুনা নদীর দূর্গম চরাঞ্চলের সাধারন মানুষের জীবন।
২০২২ সালের শুরু দিকে জামালপুরের ইসলামপুরে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয় ৪ ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষকে। সেই সময় যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে ২টি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ৮৯ কিলোমিটার এলাকায় ২ হাজার ৮৮৮টি সংযোগ প্রদান করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এরপর থেকেই পল্লী বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে বদলে যেতে শুরু করে দূর্গম চরাঞ্চলের জনজীবন। এক বছরের ব্যবধানে সেই ৪ ইউনিয়নে এখন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। সরাসরি বিদ্যুতের সেবা পাচ্ছেন অর্ধলক্ষ সাধারন জনগন। এখন সেই দূর্গম চরের ঘরে রয়েছে বাতি, ফ্যান ও টেলিভিশনসহ ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী। এছাড়া বিদ্যুতের কারণে এই চরগুলোতে প্রসার হয়েছে ব্যবসা-বানিজ্যের।
উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের দূর্গম এলাকা পূর্ব মন্ডলপাড়া গ্রামে বুধবার দুপুরে কথা হয় মো: হাসু মন্ডলের সাথে।
মো: হাসু মন্ডল বলেন, “আমরা আগে কোনোদিন চিন্তা করি নাই যে এখানে বিদ্যুৎ আসবে। এখানে বিদ্যুৎ আসার পর আমি সংযোগ নেই। আমার ৪ ঘরে ৪টা ফ্যান ও ৪টা বাতি জ্বলে। বিলও অনেক কম আসে। এছাড়াও এখন আর আগের মতো লোডশেডিং হয় না। দিনে দুই একবার সর্বোচ্চ এক ঘন্টা লোডশেডিং হয়।”
একই গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, “আগে একটা মোবাইল কেনার আগে হাজার বার চার্জ করার বিষয় নিয়ে চিন্তা করতাম। এখন আমাদের সবার হাতে হাতে স্মার্ট মোবাইল। এটাই হচ্ছে পরিবর্তন। এই দূর্গম চরে বিদ্যুতের কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমরা ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছি।”
একই ইউনিয়নের পশ্চিম মন্ডলপাড়া এলাকার মুদি দোকানী আব্দুল মোতালেব (৩৫) বলেন-“বিদ্যুৎ আসার আগে আমি দিনে ৪-৫ হাজার টাকা বিক্রি করতাম। এখন বিদ্যুত আসার পর আমি ফ্রিজ কিনেছি। এছাড়াও কিছু বাড়তি জিনিস বিক্রি করা শুরু করেছি। এখন আমি দিনে ৭-৮ হাজার টাকা বিক্রি করি। এই বাজারে বিদ্যুত আসাতে আমার দৈনিক ২-৩ হাজার টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে।”
মুদি দোকানী আব্দুল মোতালেব আরো বলেন,“ এই মন্ডল বাজারে আরো ৫০-৬০টি দোকান রয়েছে। বিদ্যুৎ আসার পর এখানের সব দোকানেই বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। সবাই এখন আগের চেয়ে অনেকটা স্বাবলম্বী।”
একই গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, “আগে আমাদের গ্রামের সবাই তেল দিয়ে সেচ পাম্প চালাইতো। এতে খরচ বেশি হতো। এখন সবাই বিদ্যুতে পাম্প চালাই। তেলের দাম এখন বেশি। এই এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকলে আমরা বিপদে পড়ে যেতাম।”
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ইসলামপুর জোনাল কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোঃ আলীবর্দী খান সুজন জানান- “গত ৬মাসে ৩৩/১১ কেভি ২০ এমভিএ উপকেন্দ্রের বাস বার সম্প্রসারণ, অভার লোড ফিডার বিভাজন করতে নতুন ৪টি ফিডার নির্মানের উদ্যোগ, ১২০ ফিট বোরিং গ্রাউন্ডিং করতে ৬টি ফিডারে ক্যাপাসিটর ব্যাংক স্থাপন, ১৫০টি স্থানে ২৫ কেভিএ বা এর চেয়ে বড় আকারের ট্রান্সফরমারের বোরিং গ্রাউন্ড, ক্লাইম্বিং অনুপযোগী ঝুঁকিপূর্ণ এবং পিডিবির নষ্ট স্টিলের ২০০টি খুঁটি পরিবর্তন, গুনগত মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে টুইস্টিং পরিহার করে কানেক্টর স্থাপন, দীর্ঘ দিনের ব্যবহৃত ডি১ সাইজের তার ডি৩ সাইজে পরিবর্তন এবং নির্দিষ্ট দূরত্বে থান্ডারিং হতে লাইনকে নিরাপদ রাখতে গ্রাউন্ডিং করা হয়েছে।”
মোঃ আলীবর্দী খান সুজন আরো বলেন, “আমরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সবসময় গ্রাহকদের সেবায় কাজ করে থাকি। তবে ইসলামপুরে কিছু একটি শ্রেণীর লোকজন আছে। যাদের কারণে গ্রাহকদের অনেক অর্থ অপচয় হয় এবং গ্রাহকরা অনেক ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। গ্রাহকদের কাছে শুধুমাত্র একটি অনুরোধ থাকবে যে- যেকোনো প্রয়োজনে তারা যেনো ওই শ্রেণীর লোকজনের কাছে দ্বারস্থ না হয়ে সরাসরি পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে যোগাযোগ করে। ”
এমআই