শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের পাটগ্রামে আটক হওয়া ভারতীয় ৩২টি গরু ৪৯ দিন লালন-পালনে ব্যয় লেখা হয়েছে ৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এতে প্রতি গরু লালন-পালনে প্রতিদিন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ শত ৪৩ টাকা। একটি গরু লালন-পালনে প্রতিদিন ৪ শত ৪৩ টাকা ব্যয় হয়েছে এমন আজব বিল ভাউচার নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন গরু খামারিয়া।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারি টাকা আত্মসাত করতেই এমন বিল ভাউচার তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই গরু গুলো নিলামে বিক্রিতেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে নিলাম কমিটির বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, ওই উপজেলার দহগ্রাম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র গত ১১ মার্চ ভারতীয় ৩৩টি গরু আটক করেন। গরু গুলো নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত পেতে কালক্ষেপণ হওয়ায় ওই গরু গুলো লালন-পালনের দায়িত্ব দেয়া হয় দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদকে। গরুগুলো পালনে দায়িত্ব অবহেলার ফলে ১টি গরু মারাও যায়। ৪৯ দিন পর আদালতের অনুমতি ক্রমে গত ২৭ এপ্রিল গরুগুলো প্রকাশ্য নিলামে ২৫ লাখ টাকা ধরে বিক্রি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বম্মর্ণের নেতৃত্বে নিলাম কমিটি।
এ নিলামকে কেন্দ্র করে ওই দিন দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংর্ঘষও বাঁধে। এ ছাড়া নিলামেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে নিলাম কমিটি’র বিরুদ্ধে।
সাধারণ গরু ব্যবসায়ীদের নিলামে অংশগ্রহণের সুযোগ না দিয়ে তাড়াহুড়া করে নিলাম শেষে ইউনিয়ন পরিষদ ত্যাগ করেন নিলাম কমিটি’র সদস্যবৃন্দ। যা নিয়ে সাধারণ গরু ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ দিকে ওই গরুগুলোকে ৪৯ দিন লালন-পালনের জন্য দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ ৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখিয়ে বিল ভাউচার নিলাম কমিটি’র কাছে অনুমোদন নিয়েছেন। যাতে প্রতিটি গরুর পিছনে প্রতিদিন ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪ শত ৪৩ টাকা। ওই বিল ভাউচার মতে একটি গরু প্রতিদিন ২ শত ২২ টাকার শুধু খাদ্যই খেয়েছেন এবং অন্যান্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। যা কোনো ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয় এমন দাবী স্থানীয় গরু খামারিদের।
কয়েকজন খামারি জানান, খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শ্রমিক সব মিলে প্রতিদিন একটি গরুর পিছনের ২ শত টাকাও ব্যয় হবে না সেখানে কীভাবে ৪ শত ৪৩ টাকা হয়? সঠিকভাবে লালন পালন না করায় একটি গরু মারা গেছে সেহেতু ওই গরুগুলোর পিছনে পরিমাণ মত ব্যয় করা হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারি টাকা আত্মসাত করতেই এমন বিল ভাউচার তৈরি করে অনুমোদন নেয়া হয়েছে। যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এ অনিয়মের সাথে একটি সিন্ডিকেট জড়িত এমন অভিযোগ রয়েছে।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, আমি শুধু খাদ্য সরবরাহ করেছি। এতে ৪৯ দিনে ৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকার খাদ্য গিয়েছে। বাকি ব্যয়ের সাথে আমি জড়িত নই।
পাটগ্রাম উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র বলেন, প্রতিটি গরুর পিছনে প্রতি দিন ৪ শত ৪৩ টাকা ব্যয়ে হয়েছে এটা অতিরিক্ত নয়। সকল নিয়ম মেনেই ব্যয় হয়েছে।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নিলাম কমিটি’র সভাপতি রামকৃষ্ণ বর্ম্মণ বলেন, গরু গুলো ২৫ লাখ টাকায় প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি হয়েছে। ওই গরুগুলো লালন পালন বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। ব্যয় অতিরিক্ত ধরা হয়েছে কি না তা আমি বলতে পারবো না। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন।
সময় জার্নাল/এমআই