নাঈম হাওলাদার ওলি :
এক মাসের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছে জিহাদ, বিগত ৫ বছরের অধ্যায়নকালে এত বেশি ছুটি কাটানোর কখনো সুযোগ পায়নি,পেলেও সর্বোচ্চ ৭/৮ দিনের ঈদ ছুটি ।তখন ছুটি শেষ হওয়ার ভয় থাকলেও, এবার আর তা নেই,আরো প্রফুল্লতা ছড়িয়ে আছে তার মনজুড়ে। প্রফুল্লতা থাকবেই না বা কেন? গত পরশুদিন তার নামের আগে ডাঃ শব্দটি বসেছে, অর্থাৎ জিহাদ এখন আর জিহাদ নেই, তাকে "ডাঃআশরাফুল রহমান জিহাদ" নামে ডাকতে হবে।
যদিও মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই সবাই তাকে ডাক্তার ডাক্তার বলেছে, কিন্তু এখনকার ডাক্তার বলা আর তখনকার ডাক্তার বলার মধ্যে অনেক তফাত ছিল, ছাত্র থাকা অবস্থায় অনেকে তাকে তিরস্কার অর্থেও ডাক্তার বলে ডাকতো।
অনেকেই বলতো--
--কিরে ডাক্তার, শুনলাম তুই নাকি প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি হইছস।
--হ্যা,
--তাহলে তো তুই প্রাইভেট ডাক্তার হবি..হে হে..
আবার এভাবেও বলতো,
--প্রাইভেট মেডিকেলেতো টাকা দিয়েই ডাক্তার হওয়া যায়, রুগী না দেখেই ডাক্তার হওয়া যায়..
--GPA-5 পেয়েই বা কি লাভ হলো, প্রাইভেট মেডিকেলেই পড়তে হলো, অমুকে তো সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হইলো, তুইতো পারলি না.।
প্রতিত্তোরে জিহাদ যদি বলতো,
--প্রাইভেট মেডিকেলেও পরীক্ষা দিয়েই চান্স পেতে হয় ভাই,ওখানেও চান্স পাওয়া লাগে।
--টাকা হলেই প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি হওয়া যায়..হে হে..
এমন সব কথা জিহাদ যাদের থেকে শুনতো, সে তাদের বিরুদ্ধে মনে মনে প্রতিশোধ ঘোষনা করতো। যেমন, ঐসব লোকদের ডাক্তার হওয়ার পর চিকিৎসা দিবে না। কোন ধরনের সাহায্য করবে,কথাও বলবে না। মাঝে মাঝে তাদের উপরের রাগ, অভিমান, ক্ষোপের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে প্রকাশ করতো। তাতেও তাকে কম লাঞ্ছিত হতে হয়নি। অনেকেই টিটকারি মেরে কমেন্ট করতে দেরিও করতো না।
এখন আর জিহাদের সেই দিন নাই। সে এখন ডাক্তার। একজন নোবেল প্রফেশনের মেমবার। এখন আর কেউ তাকে অপমান সূচক কোন উক্তি করবে না দৃঢ় বিশ্বাস তার। প্রফুল্ল মন নিয়ে, চা-নাস্তা করতে বের হলো জিহাদ। একই সাথে গ্রামটাও ঘোরা হবে, দেখা সাক্ষাত হয়ে যাবে অনেকের সাথে। সাথে আছে ছোট বেলার বন্ধু নয়ন। চায়ের দোকানের সামনে যেতেই, ডাক্তার কেমন আছো, কেমন আছো, কখন আসছো, এখন থেকে আমরা ভিজিট ছাড়াই MBBS ডাক্তার দেখাতে পারবো, রোগ নিয়ে ওহন আর ভয় করা লাগবো না, চায়ের বিল দিও না, আমি দিমুনে.....এমনি বলতে থাকলো দাদা, চাচারা।
এগুলো শুনতে ভালোই লাগছে জিহাদের। ডাক্তার যে সম্মানের পেশা তা তার খুব ভালো ভাবেই উপলব্ধি হতে লাগলো। কিছু প্রশ্নের উত্তর বুঝানোও লাগতেছে তাকে,যেমন-
--বাবা তুমি কোন বিষয়ের উপর MBBS পাশ করছো,
--কত পয়েন্ট পাইয়া পাশ করছো?
--বাবা তুমি, মেডিসিনের ডাক্তার,নাকি সার্জারির??
--BCS দিবা কবে?
এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পূর্বে তার বিরক্ত লাগলেও,এখন আর লাগছে না। ভালোই লাগছে তার এসব নিয়ে গল্প গুজব করতে। কথাবার্তা চলছে, কেউ চলে যাচ্ছে, কেউ নতুন যুক্ত হচ্ছে... এমনি নতুন যুক্তদের মধ্যে সালাউদ্দীন চাচা একজন,এর আগেও কয়েকবার সালাউদ্দীনের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে জিহাদ, আজকেও হতে হলো, পূর্বের তুলনায় আরো ঝাঁঝালো প্রশ্নের সম্মুখীন।
---কি ডাক্তার হইয়া গেলা হুনলাম
---জি চাচা, আপনাদের দোয়ায়
---কত টাহা খরচ ঐলো ডাক্তার ঐতে?
---তা ঠিক জানিনা চাচা
---টাহা ছারাতো প্রাইভেটের ডাক্তার ওয়া যায় না, হিসাব রাখবা না?
---রাখা হয়নি চাচা
---ডাক্তারি হইছো ভালো কতা, ভুল চিকিৎসা দিয়া গ্রামের মানুষ মাইরো না আবার, প্রাইভেডে পর...ছো...
এগুলো শুনার পর, আর এক মিনিটও দাড়ালো না জিহাদ। নয়নকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল। চায়ের দোকানে পিনপন নিরবতা...নয়ন জিহাদকে বিভিন্নভাবে শান্তনা দেওয়ার চেস্টা করে যাচ্ছে। জিহাদ মন খারাপ করেই আছে। মনে মনে সালাউদ্দীনের প্রতি প্রতিশোধ ঘোষনা করতে দেরি করলো না জিহাদ। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষনা করে দিল। ১০ মিনিট হাটার পড়ে, চায়ের দোকানের ঐ দিক থেকে উচ্চস্বরের চিল্লাপাল্লা শোনা গেল। কেউ আওয়াজ করে ডাকছে, জিহাদ ভাই,জিহাদ ভাই এদিকে আসেন, তাড়াতাড়ি আসেন.!!
তারপরে কি বলতেছে তা শোনা গেল না,শুধু "সালাউদ্দীন চাচা" বারবার বলতেছে এতটুকু শোনা যাচ্ছে।
নয়ন বললো
---চলতো জিহাদ ডাকে কেন দেখে আসি
--- না উনার কাছে আর যাব না🤬
নয়ন মোটামুটি জোড়াজুড়ি করে জিহাদকে নিয়ে চায়ের দোকানের দিকে নিয়ে গেলে।
--ডাক্তার দেখতো সালাউদ্দিন এমন করে কেন, মরে যায় যায় অবস্থা
ভিড় ঠেলে, জিহাদ সালাউদ্দিনের নিকট গেল, দেখলো সালাউদ্দিন বুকে হাত চাপা দিয়ে শুয়ে আছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, বাচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতেছে.... জিহাদও মনে মনে ঠিক করলো, এটাই উপযুক্ত সময় প্রতিশোধ নেওয়ার। সব হিসেব কষা হবে এখনি।
জিহাদ সালাউদ্দিনকে পাশের ফার্মাসিতে নিতে বললো, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিল,...
সালাউদ্দীন মোটামুটি সুস্থ, জিহাদের দিকে তাকিয়ে আছে, জিহাদ মুচকি হাসছে, মনে মনে ভাবছে, "প্রাইভেট মিশন কম্পিলিট, প্রতিশোধ নেওয়া শেষ"। এর মধ্যে, সালাউদ্দীন জিহাদকে ডেকে বললো,
---বাবা তোমারে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব, তা খুজে পাচ্ছি না
---চাচা, ধন্যবাদ দেওয়া লাগবে না। শুধু প্রাইভেট কম্পানির বিঁড়ি সিগারেট, জর্দা, খাবেন না। কারন ঐ গুলো প্রাইভেটের।
নয়ন হাসতেছে, ভিড় করা জনগন হাসতেছে। সবার হাসি দেখে চাচা সালাউদ্দীনও হাসতেছে...। ডাক্তারদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়া চলছে.. পৃথিবী ধ্বংসের পূর্ব পর্যন্ত চলবে ।