শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

চৌদ্দগ্রামে মসজিদের অর্থ আত্মসাত ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

মঙ্গলবার, মে ৯, ২০২৩
চৌদ্দগ্রামে মসজিদের অর্থ আত্মসাত ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

মোঃ এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ছোটখিল জামে মসজিদের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও ইউনিয়ন আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ আলী মজুমদার কর্তৃক অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে গ্রামবাসী।

মঙ্গলবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে গ্রামবাসীর পক্ষে  লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা আনোয়ার হোসেন ও সাইফুল ইসলাম। এদিকে সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে ইউসুফ আলী মজুমদারের সহযোগী যুবলীগ নেতা সোহাগ হামলা চালিয়ে সাংবাদিকদের লাঞ্চিত করে। এ সময় বেশ কয়েকটি ক্যামেরাও ভাংচুর করে। 

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, মসজিদের বর্তমান কমিটির সভাপতি হাজী তাজুল ইসলাম মেম্বার। তার ছোট ছেলে মুন্সিরহাট ইউনিয়ন আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। সেক্রেটারীর দায়িত্বে রয়েছেন সভাপতির বড় ছেলে খিরনশাল ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শিক্ষক মাওলানা মোস্তফা মজুমদার। এক ঘরের তিনজনই কমিটির শীর্ষপদ আকড়ে ধরে মসজিদ, মক্তব ও কবরস্থানকে তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রুপ দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে আসছে। তারা মসজিদের বিভিন্ন অনুদান, বার্ষিক চাঁদা, এককালীন অনুদানসহ অর্থ আতœসাৎ হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।  

মুলত: ইউসুফ আলী মজুমদার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। তারই অনুগত সোহাগ নামের একজনের মাধ্যমে মসজিদের ক্যাশ পরিচালনা করে আসছে। ক্যাশের দায়িত্ব পালনকারী সোহাগ এলাকায় সুদি সোহাগ হিসেবে পরিচিত। যাকে দিয়ে ইউসুফ আলী মজুমদার বার্ষিক চাঁদা, বিভিন্ন অনুদান ও জুমার দিনের কালেকশান ইত্যাদি অর্থ গচ্ছিত রাখার দায়িত্বে রাখায় সেই টাকা সোহাগ এলাকার বিভিন্ন মানুষের নিকট চড়া সুদের বিনিময়ে ঋন প্রদান করেন।

ইউসুফ আলী মজুমদার মসজিদের সৌন্দর্য বিনষ্ট করার লক্ষে খাস জায়গা দখল করে মসজিদের সামনে পাকা দেয়াল স্থাপন করেন। যার ফলে রাস্তা থেকে মসজিদটি কোনভাবেই দেখা যায় না। বিগত ৮ বছর ধরে ইউসুফ আলী মজুমদার এককভাবে মসজিদ, মক্তব পরিচালনা করতে গিয়ে মসজিদের অর্থ গচ্ছিত রাখার জন্য কোন ধরনের যৌথ ব্যাংক একাউন্ট ছাড়াই সেই অর্থ তার নিজ হেফাজতে রেখে আসছে। এমতাবস্থায় মসজিদ ফান্ডের প্রায় ৬-৭ লক্ষ টাকার কোন হদিস পায়নি গ্রামবাসী। সে কোন সময়েই এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা না করে এককভাবে তার খেয়াল খুশিমতো বার্ষিক চাঁদা নির্ধারন ও আদায় করে থাকে।

সমাজের বিভিন্ন মানুষের অনুদানের অর্থে মসজিদে এয়ার কন্ডিশন লাগানো হলেও ইউসুফ আলীর অনুমতি ব্যতিত তা চালানো যায়না। অনুমতি ছাড়া এসি চালানোর দায়ে সমাজের অনেককেই ইউসুফ আলীর দ্বারা অপমান অপদস্থ হতে হয়েছে। মসজিদের বিষয়ে কেউ কোন কথা কিংবা পরামর্শ দিতে চাইলে মসজিদ থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া এবং মামলার আসামী করার হুমকিও প্রদান করে থাকে। গত ঈদুল ফিতরের দিন গ্রামের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম মাওলানা আনোয়ার হোসেনের প্রস্তাব উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে মসজিদ কমিটি পূর্ণগঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ওইদিন আছরের নামাজের পরে গ্রামের সবাইকে নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষে মসজিদ প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার এক পর্যায়ে ইউসুফ আলী মজুমদার প্রস্তাব করেন, মসজিদ কমিটির সভাপতি হতে হলে ২০ লক্ষ টাকা ও সেক্রেটারী হতে হলে ১০ লক্ষ টাকা আমাকে দিতে হবে। অন্যথায় কেউ সভাপতি কিংবা সেক্রেটারী হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু উপস্থিত সবাই তার এই প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে গ্রামবাসী নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে গেলে ইউসুফ আলী মজুমদার সুদি সোহাগকে আবারো কমিটিতে রাখার জন্য চাপ দিলে সবাই তা নাকচ করে দেন। একপর্যায়ে সেখানে হাতাহাতি ও হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।

ওই সময় ইউসুফ আলী মজুমদার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে হুংকার দিয়ে বলেন, মসজিদ ফান্ডের টাকা দিয়েই সবার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হবে এবং যারা বাড়াবাড়ি করছে তাদের সবাইকে জেলের ভাত খাওয়ানো হবে। এ ঘটনার পরও গ্রামবাসী একটি সুন্দর সমাধানের জন্য অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু ইউসুফ আলী গং তা না করে গত ৫ মে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় পূর্বের কমিটি বহাল রাখার ঘোষণা দেন। এমতাবস্থায় সাধারন মুসল্লীরা এমন অন্যায় সিদ্ধান্ত, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও পরিবারতন্ত্র কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আদর্শ সমাজ গঠনে ইউসুফ আলী মজুমদার গংয়ের বিচারও দাবি করেন গ্রামবাসী। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, ইউনিয়ন আ’লীগ নেতা মোহাম্মদ মিয়া, বেলায়েত হোসেন বেলু, সামাজিক ব্যক্তিত্ব জাফর আহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। 

এ ব্যাপারে ইউসুফ আলী মজুমদার ঘটনাস্থলে বলেন, ‘সুন্দরভাবে মসজিদ পরিচালনা করা হচ্ছে। একটি চক্র নিজেদের স্বার্থের জন্য আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে’।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে’।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল