ইসাহাক আলী:
নাটোরের জনতা ব্যাংক দিঘাপতিয়া শাখার ম্যানেজারের বিরুদ্ধে নানা ভাবে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। গ্রাহক ছাড়াও ওই ম্যানেজারের বিরুদ্ধে কাজে অসহযোগিতা ও নিগ্রহের কথা স্বীকার করেছেন খোদ কর্মচারীরাও। তবে সব অভিযোগ
স্বীকার না করলেও গ্রাহকদের সাথে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে স্বীকার করেন অভিযুক্ত ম্যানেজার শংকর গোবিন্দ সাহা। এদিকে গ্রাহক হয়রানি ও ম্যানেজারের দায়িত্বহীনতা থাকলে খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।
সোমবার দুপুরের দিকে জনতা ব্যাংক লিমিটেড দিঘাপতিয়া শাখায় একাউন্ট খুলতে যান দিঘাপতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৭১তম প্রতিষ্ঠিা বার্ষিকী ও পূনর্মিলনী অনুষ্ঠান পরিচালনা কমিটির আহবায়ক, সদস্য সচিব ও যুগ্ম আহবায়ক। এ সময় ম্যানেজারকে জানানোর পরও কোন সৌজন্য না দেখিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলে হয়রানীর স্বীকার হয়ে তারা ফিরে আসেন। একই সময়ে ঐ শাখায় বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়েও ফিরে আসেন কয়েকজন গ্রাহক। এছাড়া কোন পূর্ব ঘোষনা ছাড়া ক্যাসিয়ার অসুস্থ্য এমন অযুহাতেও অনেককে ফেরত আসতে হয় বলে জানান গ্রাহকরা। এছাড়া ম্যানেজারের দূর্ব্যবহারের অতীষ্ঠ কর্মচারীরাও এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।এর আগে রবিবারেও ম্যানেজার যৌথ একাউন্টের ক্ষেত্রে ৩জনের নামে নিয়ম থাকলেও দুই জন ছাড়া করা যাবে না বলে জানান। ফলে ব্যাংকে দুইদিন ঘুরেও একাউন্ট করতে পারেনি এই কমিটি।
দিঘাপতিয়া পি.এন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও অনুষ্ঠান পরিচালনা কমিটির আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল মনসুর অভিযোগ করে বলেন, আগামী ৩০ জুন প্রতিষ্ঠানটির ১৭১ বছর পুর্তি ও পূনমিলনী অনুষ্ঠানের রেজিষ্টেশন চলছে। কমিটির সভায় রেজিষ্টেশনের অর্থ দিঘাপিতয়া জনতা ব্যাংক শাখায় জমা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। গত রোববার অফিস সময়ে তিনি ব্যাংকে হাজির হলেও একাউন্ট ব্যাপারে ম্যানেজারকে জানান। তিনি এসময় নিয়ম থাকলেও ম্যানেজার শংকর গোবিন্দ সাহা জানান দুজনের নামে একাউন্ট খুলতে হবে। তবে ব্যাংকের শাখা ও তাদের উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের সাথে কথা বলে ৩জনের নামে
একাউন্ট খোলায় কোন বাধা নেই জেনে পরে সোমবার আরো দুই সদস্যকে নিয়ে ওই শাখার ম্যানেজারের কাছে যান। গিয়েই তিনি ও অন্য দুই সদস্য একাউন্ট খোলার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু তাদের বসিয়ে রেখে অন্যদের সাথে মোবাইলে কথা বলাসহ স্টাফদের সাথে কথা বলতে থাকেন। সে সব কথা শেষ হলেও তিনি তাদের মূল্যায়ন না করে মোবাইল টিপতে থাকেন। এক পর্যায়ে কমিটির যুগ্ম আহবায়ক তফিকুল হোসেন তিনি ব্যস্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বিরক্তি নিয়ে জানতে চান কি দরকার। কেন এসেছেন। এতে তারা অপমানিত ও হয়রানির স্বীকার হয়ে ব্যাংক ছেড়ে চলে আসেন। তিনি বলেন, অন্যান্য ব্যাংক যেখানে গ্রাহক টানতে নানা উদ্যোগ নেন সেখানে এই ম্যানেজারের আচরণ গ্রাহক তাড়িয়ে ব্যাংক বিমুখ করার ন্যায়। একজন শিক্ষক হিসাবে এতে তিনি মর্মাহত।
এদিকে তফিকুল হোসেন বলেন, এই ব্যাংকে গ্রাহক হয়রানী চরম পর্যায়ে পৌছেছে। বিশেষ করে ম্যানেজার সাহেব কারও সাথে ভালো ব্যবহার করেননা। সাধারণ গ্রাহকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাংক গ্রাহকহারা হচ্ছে।
এদিকে একই সময়ে ব্যাংকে বিদ্যুৎ বিল দিতে গিয়েই বিল না দিতে পারা গ্রাহক ও বাজারের বিশিষ্ট খন্দকার রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী তৌকির আহমেদ সুমন বলেন, ম্যানেজারের খামখেয়াল মতো ব্যাংক চলে। এখানে নিয়মের কোন বালাই নেই। কোন ঘোষনা ছাড়াই আজ বিল নেয়া বন্ধ রাখায় তিনি বিল দিতে পারেননি।
এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার অধীনস্ত কর্মচারীরা তার দ্বারা হয়রানি ও নিগ্রহের স্বীকার হন বলে জানান।
তবে অভিযুক্ত ম্যানেজার শংকর গোবিন্দ সাহা বলেন, কয়েকজন একাউন্ট করতে এসেছিলেন। কিন্তু সে সময় তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে মোবাইল ফোনে জরুরী কথা বলছিলেন। পরে তাদের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু তারা ব্যাংক থেকে বের হয়ে চলে যান। একটু ভূল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে যৌথ একাউন্টের ব্যাপারে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তার দাবি, গ্রাহক হয়রানী হচ্ছে অভিযোগটি সত্য নয়। তাহলে ঘোষনা ছাড়া বিল না নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ক্যাসিয়ার সামান্য অসুস্থ্য হওয়ায় কিছু গ্রাহকের বিল নেয়া যায়নি।
এদিকে এ ব্যাপারে জনতা ব্যাংক নাটোরের ডিজিএম শফিকুল ইসলাম জানান, যৌথ একাউন্টের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যতয় করে পরামর্শ দেয়া তার দায়িত্বহীনতা। আর গ্রাহত হয়রানি ও তার দায়িত্বহীনতার অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমআই