নিজস্ব প্রতিবেদক: দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বোরহান উদ্দীনের বিরুদ্ধে যেন অভিযোগের শেষ নেই। বিভিন্ন অপকর্ম, অনিয়ম, দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ তুলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে লিখিত অভিযোগ হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন মাধ্যমিক ওই শিক্ষা কর্মকর্তা। শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় হলেও কিভাবে তিনি সরকারি চাকরিতে বহাল রয়েছেন, আর তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, তার শক্তির উৎস কোথায় এমনটি প্রশ্ন বিভিন্ন সচেতন মহলের।
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বোরহান উদ্দিনের কারণে বন্ধ হওয়ার পথে জেলার সদর উপজেলার কেচেরা গ্রামে নির্মিত উত্তরা গ্রীণ টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বৃহৎ চা কারখানা। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকবৃন্দের অভিযোগ, চা শিল্পের প্রতিকৃত আব্দুর রাজ্জাক পঞ্চগড়ে একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন বৃহৎ কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। বৃহৎ পরিসরে শিল্পটি গড়তে কোম্পানীতে যুক্ত করেন কাজী এ.এন.এম আমিনুল হক ও তারিকুল ইসলাম নামের দুই ব্যবসায়ীকে।
বোরহান উদ্দিন পঞ্চগড়ে সদরে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কর্মরত থাকাকালিন তার নিকট হতে চা কারখানা নির্মাণের জন্য জমি ক্রয় করেন। শুরুতে এমডি কাজী এ.এন.এম আমিনুল হকের ৬৫% শেয়ার, পরিচালক আব্দুর রাজ্জাকের ৩০% শেয়ার এবং তারিকুল ইসলামের ৫% শেয়ার ছিল। কিন্তু উক্ত বোরহান উদ্দিন সুকৌশলে চতুরতার মাধ্যমে কোম্পানীর এমডি কাজী এ.এন.এম
আমিনুল হককে ফুশলিয়ে কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে গৃহিনী স্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র পুত্রের নামে ৪৫% ও ভায়রার নামে ১০% সর্বমোট ৫৫% শেয়ার হস্তান্তর করে নেয়। যার এ প্রজেক্টের ৫৫% শেয়ারের মুল্য ১১ কোটি টাকা।
জেলা সদরের কেচেরা গ্রামে নির্মিত উত্তরা গ্রীণ টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় গিয়ে পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক ও এমডির পুত্র মোহাইমিনুল হকের সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘ওই সময় কোম্পানীর এমডি কাজী এ.এন.এম আমিনুল হককে ম্যানেজ করে ২ মাসের মধ্যে ফ্ল্যাট বিক্রি করে পরিশোধের শর্তে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা কোম্পানির চেকে ধার নেন বোরহান সাহেব। পরে সে ধারকৃত টাকা পরিশোধ করতে নানা টালবাহানা তো করছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় নানা কারণ দেখিয়ে এই চা কারখানার বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কারখানার এমডি ইন্তেকালের পর পুরো কারখানা দখলেরও পায়তারা করছেন। তার মধ্যে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভয়ভীতিসহ প্রাণ নাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এসব নিয়ে পঞ্চগড় সদর থানায় একাধিক অভিযোগও রয়েছে। বর্তমান চা কারখানাটি যাতে চালু না করা হয় এজন্য উঠে পড়ে লেগেছে বোরহান। কারখানার মালিক,
কর্মচারী, শ্রমিকদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে। এতে করে বর্তমানে ভীষন সংকটে পড়েছে কারখানাটি। এখন চাষীদের কাঁচা চা পাতা সরবরাহে নিষেধসহ নানান ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে সে।’
এ নিয়ে তেঁতুলিয়া কাচা পাতা ক্রয় কেন্দ্রের ইউনিট তত্বাবধায়ক সফর আলী প্রধান গত ২৯ এপ্রিল কাচা পাতা ক্রয় কাজের সময় বোরহান বিরুদ্ধে মোবাইল ফোনে অকথ্য ভাষা গালিগালাজ ও হুমকি প্রদর্শন করায় মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
কারখানার কয়েকজন শ্রমিক জানান, কারখানা বন্ধের পর থেকে খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। মহামারি করোনাকালিন সময়ে আমরা বেকার হয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনযাপন করছি।
এদিকে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্ম, অনিয়ম, দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ তুলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পঞ্চগড়ের এক সহকারী শিক্ষক। তিনি গত ২৯ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দীন পঞ্চগড় সদর উপজেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য ও ঢাকার বিভিন্ন দপ্তরে দালালী করে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। ঢাকায় ফ্ল্যাট, প্লটসহ পঞ্চগড়ে নামে বেনামে জমি জায়গা, কয়েকটি চা বাগান, গরু ও মৎস খামার করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, পঞ্চগড়ে কয়েকটি চা বাগান (নিজামাবাদ, চাকলাহাট ও ভিতরগড় মৌজা), গরুর খামার (মাধুইপাড়া), মৎস্য খামার, নামে বেনামে অনেক জমিজমাসহ ঢাকাতে কোটি টাকা মূল্যের কয়েকটি ফ্লাট (১/১২ ইকবাল রোড, মোহাম্মদপুর এবং ২৫২/২এ, রোড ৬, মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটি, ঢাকা), সাভারে জমি দামী দুটি গাড়ী ও নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে (পঞ্চগড়ের ইসলামী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ঢাকায় ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক) বিপুল অর্থসম্পদ বানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দীন।
অভিযোগ রয়েছে এই শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিনের কর্মস্থল দিনাজপুরের হাকিমপুরেও। শিক্ষা অফিসের এক কর্মচারী গত ২০ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত বোরহান উদ্দীনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান।
বিষয়টির ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ আশিকুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারনে অফিস স্বাভাবিক না থাকায় নথি না দেখে উল্লেখিত অভিযোগের ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। যদি সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ দেওয়া হয়, তাহলে সেটা কার্যক্রমের মধ্যে পড়বে। তবে এ ধরনের অভিযোগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আসতে সময় একটু বেশি লাগে।
সময় জার্নাল/এমআই