সর্বশেষ সংবাদ
সময় জার্নাল প্রতিবেদকঃ
গোপালগঞ্জ শহরের
পোস্ট অফিস রোডের বাসিন্দা রমজান শেখ (৫২) বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে রাতে ঘুম হচ্ছে
না। জেলার জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক জানান,
লোডশেডিংয়ে অপারেশনসহ জরুরি সেবা ব্যাহত হচ্ছে। বগুড়া জেলায় দৈনিক ১৯০ মেগাওয়াট
চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ১১৫ মেগাওয়াট।
নড়াইল উজিরপুর বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শায়েদ আলী
বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যশোর সদরের নওয়াপাড়ার
কলেজশিক্ষক হীরামতি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ বার লোডশেডিং হয়েছে।
আশুগঞ্জের আল মদিনা এগ্রো ফুডের পরিচালক আজিজুল হক বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে চাল
উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নোয়াখালীর মাইজদীর ইসলামিয়া সড়কের
বাসিন্দা গৃহবধূ ঝুমুর আক্তার জানান, গত ১৫ দিন থেকে চলছে তীব্র লোডশেডিং।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে দিনে ১০ থেকে ১২ বার লোডশেডিং হচ্ছে। সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায়
পিডিবি ১৫-১৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছে। এসব চিত্রই দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির
ভয়াবহতা তুলে ধরছে। খোদ রাজধানীতেই গড়ে তিন-চার ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।
জ্যৈষ্ঠের তীব্র গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। এর সঙ্গে যুক্ত
হয়েছে মাত্রাছাড়া লোডশেডিং। এতে জনজীবনের ভোগান্তি সীমা ছাড়িয়েছে।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য, তাঁরা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল দিয়ে যাচ্ছেন, তাহলে কেন এই
দুর্ভোগ। সরকার বলছে, ডলার সংকটে তেল-গ্যাস আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। তাই চাহিদা
অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, চলতি সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা
নেই। এর মধ্যে আজ রোববার থেকে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা
পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে লোডশেডিং নিয়ে কোনো সুখবর দিতে পারছে
না বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, আরও কিছুদিন এমন
পরিস্থিতি থাকবে।
দেশজুড়ে ভোগান্তি
গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রাতে
ঘুমাতে পারছেন না। ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে চার্জার ফ্যান ও এসি কিনছেন অনেকে।
জেনারেটর চালানোর জন্য ডিজেলের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ডিজেল সংকট
দেখা দিতে পারে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে কলকারখানার উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। সারাদেশে একই
চিত্র।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে
ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং করা হচ্ছে। শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা
পর্যন্ত চট্টগ্রামে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ৩০০ মেগাওয়াটেরও বেশি। কক্সবাজারে পিডিবির
নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের গনি জানিয়েছেন, ঘাটতি বেশি হওয়ায় লোডশেডিং করে
পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। বান্দরবানে শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায়
লোডশেডিং হয়েছে কমপক্ষে ১০ বার। রাঙামাটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ থেকে ৬ বার বিদ্যুতের
লোডশেডিং করা হচ্ছে।
নোয়াখালীতে চাহিদা ৫৪ মেগাওয়াট, পাওয়া যায় ২৪ মেগাওয়াট। নোয়াখালীর
ল ইয়ার্স কলোনির বাসিন্দা ঢাবি শিক্ষার্থী আনিকা জানান, প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুৎ না
থাকায় ফ্রিজে রক্ষিত মাছ-মাংস, তরিতরকারিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পচে যাচ্ছে।
লক্ষ্মীপুরে শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৫ ঘণ্টারও বেশি সময়
বিদ্যুৎ ছিল না। লক্ষ্মীপুর হাউজিং এলাকার বাসন্দিা স্কুল শিক্ষিকা নুর নাহার
বলেন, গ্রামে এত বেশি লোডশেডিং হয় যে দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎই থাকে না। ফেনীতে
২৪ ঘণ্টায় লোডশেডিং করা হয়েছে অন্তত ১০ থেকে ১২ বার।
খুলনা: নগরীর শেখপাড়া
এলাকার বাসিন্দা আরাফাত হোসেন জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে শনিবার বিকেল ৩টা
পর্যন্ত তিন দফায় ৩ ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ ছিল না। সাতক্ষীরা পৌরসভার পারকুখরালী
গ্রামের ইয়ারুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে শনিবার ৩টা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টা
লোডশেডিং ছিল। তার রাইস মিল বন্ধের উপক্রম। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার জয়রামপুর
গ্রামের বাসিন্দা শাহিন আলম বলেন, আমাদের গ্রামে ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সহগোলপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক হাসানুজ্জামান লাভলু বলেন,
২ জুন বিকেল ৩টা থেকে ৩ জুন বিকেল ৩টা পর্যন্ত অন্তত ১০ বার বিদ্যুৎ গেছে।
শুক্রবার দুপুর ৩টা থেকে শনিবার দুপুর ৩টা বাগেরহাটের ৯টি উপজেলার মধ্যে গড়ে সদর
উপজেলায় বিদ্যুৎ ছিল না ৬ ঘণ্টা। যশোর শহরের এলাকাভেদে এখন প্রতিদিন ১ থেকে ২
ঘণ্টা; আর সদর উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে ৩-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকছে। অন্যান্য উপজেলাতে
লোডশেডিংয়ের মাত্রা ৫-৬ ঘণ্টা।
সিলেট: এ বিভাগে গত
২৪ ঘণ্টায় পিডিবি ১৫-১৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছে। উপজেলাগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭
ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। সিলেট বিভাগের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা
লোডশেডিং করে। মৌলভীবাজার জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না।
হবিগঞ্জ পিডিবির সহকারী প্রকৌশলী রাকীবুল হাসান জানান, জেলায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা
লোডশেডিং হয় বিভিন্ন এলাকায়। সুনামগঞ্জ জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেওয়া
সম্ভব হয়নি।
রাজশাহী: নগরীতে শনিবার
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনবার লোডশেডিং হয়েছে। বগুড়া জেলায় ৩ ঘণ্টা পর পর ১
ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকায় গড়ে ৮ ঘণ্টার
বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।
নাটোরে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার অধিকাংশ এলাকায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ
ছিল না। সিরাজগঞ্জে নেসকোর গ্রাহকদের তুলনায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের দুর্ভোগ
তুলনামূলক বেশি। জয়পুরহাটে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বেশ
কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের
গ্রাহকরা জানান, গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত শহরে দুইবার
লোডশেডিং করা হয়েছে।
রংপুর: শুক্রবার
বিকেল ৪টা থেকে শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঘাটতি ছিল ২০০ মেগাওয়াটের বেশি। ১ ঘণ্টা
পর পর লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে নর্দান
ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)।
ময়মনসিংহ: শনিবার দুপুর
পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলার লোডশেডিং ছিল ৪৫ মেগাওয়াট। শেরপুরে ঘাটতি ছিল ১৫
মেগাওয়াট। জামালপুর জেলায় লোডশেডিং ছিল ২০ মেগাওয়াট। নেত্রকোনায় ঘাটতির পরিমাণ ২৫
মেগাওয়াট। শিল্পাঞ্চল ভালুকায় চাহিদার তুলনা বিদ্যুৎ প্রাপ্তির ঘাটতি রয়েছে ২৫
থেকে ৩০ শতাংশ। উপজেলার পনাশাইল গ্রামের আবাসিক গ্রাহক সাইফুল ইসলাম খান জানান,
কিছুদিন ধরে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ আসে এবং একই পরিমাণ সময় থাকে আবারও চলে
যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা লোডিং শেডিং চলছে, যা
দেশের অন্যতম বড় বিদ্যুৎ হাব। উপজেলার লালপুর ইউনিয়নে রাত ১০টা থেকে ১১টা, ১২টা
থেকে ১টা, ২টা থেকে ৩টা এবং সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা এবং সাড়ে ১২টা থেকে
দেড়টা পর্যন্ত মোট সাড়ে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল।
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের আকুপুর গ্রামের
বাসিন্দা মো. কবির মিয়া বলেন, দিনের বেলা কখন বিদ্যুৎ আসে আর কখন যায়, তা এখন বলা
মুশকিল।
গোপালগঞ্জ ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন,
শহরকে পাঁচটি ফিডারে ভাগ করে ২ ঘণ্টা পর পর ১ ঘণ্টা করে প্রতি ফিডারে লোডশেডিং করা
হচ্ছে।
রাজধানীতেও ভোগান্তি
ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী ডেসকোর গতকাল ঘাটতি ছিল ৩১৭ মেগাওয়াট আর
ডিপিডিসির ৩২৫ মেগাওয়াট। এলাকাভেদে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে।
কেন লোডশেডিং
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। জ্বালানি
সংকটে গড়ে সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। ডলার
সংকটে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানি বিঘ্নিত হওয়ায় চাহিদা অনুসারে
বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কয়েকটি
বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখায় গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম
হয়। বাকি ১৭ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার মধ্যে গড়ে উৎপাদন হয় সাড়ে ১৩
হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা থাকে গড়ে সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট।
প্রতিমন্ত্রী যা বললেন
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সাংবাদিকদের
বলেছেন, কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় লোডশেডিং বেড়েছে। কিছুদিন এ পরিস্থিতি
থাকবে। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের ওপরে লোডশেডিং চলছে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে
সহযোগিতা করেছেন সময়জার্নালের জেলা প্রতিনিধিরা।
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল