আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সৌদি আরব সফরে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি এমন একটি সময় সৌদি সফরে গিয়েছেন যখন দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বে ফাটল ধরেছে।
ফলে সফরের আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল যে, মূলত সম্পোর্কন্নয়নই হতে যাচ্ছে ব্লিঙ্কেনের সফরের মূল উদ্দেশ্য। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে যে, আর্থিক সহযোগিতা, ক্লিন এনার্জি ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে কথা বলতেই সৌদি সফরে গেছেন ব্লিঙ্কেন।
আল আরাবিয়া জানিয়েছে, মঙ্গলবার সৌদি আরব সফরে গিয়ে দেশটির যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেন। সৌদি শহর জেদ্দায় তাদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক নিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাট মিলার জানিয়েছেন, বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অব্যাহত প্রচেষ্টার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। উভয় পক্ষ ইয়েমেনে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা অর্জনের জন্য একটি ব্যাপক রাজনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য এবং এর বাইরেও স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য তাদের অঙ্গীকার নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ডয়চে ভেলের খবরে জানানো হয়েছে যে, ব্লিঙ্কেনের সৌদি সফরের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট কিছু মতবিরোধের সমাধান করা। যুক্তরাষ্ট্র আবারও সৌদির ঘনিষ্ট হতে চায়। ইরান, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও তেলের দাম নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এরমধ্যে সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আবার চালু করেছে সৌদি আরব।
ব্লিংকেন অন্য সৌদি নেতাদের সঙ্গেও দেখা করেন। সৌদি আরব সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, তাদের তেল উৎপাদন দিনে ১০ লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনা হবে। মূলত তেলের দাম যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র খুশি নয়। ফলে তারা সৌদিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সোচ্চার হচ্ছে। ব্লিঙ্কেনের এই সৌদি সফরের মূলত দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, জ্বালানি তেল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বজায় রাখা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব খর্ব করা। তাছাড়া তাদের আশা, সৌদি ও ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্কও এবার ভালো হবে।
ওয়াশিংটনের থিংক ট্যাংক ফাউন্ডেশন অফ ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসিস-এর পরামর্শদাতা রিচার্ড গোল্ডবার্গ বলেছেন, ব্লিঙ্কেনের এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো, চীন ও সৌদি আরব যাতে খুব কাছাকাছি না আসে তা নিশ্চিত করা। ব্লিঙ্কেন সৌদি আরবকে বোঝাবার চেষ্টা করবেন, চীন কেন সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চাইছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে থাকলে সৌদির কী লাভ হবে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট যদিও জানিয়েছে, ব্লিঙ্কেন ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গভীর করা নিয়ে আলোচনা করেছেন, বিশেষ করে ক্লিন এনার্জি এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে।
সম্প্রতি সুদানে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে দেশটি থেকে শত শত মার্কিন নাগরিককে সরিয়ে নিতে সৌদি আরবের সহযোগিতা এবং সেখানে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে কূটনৈতিক আলোচনায় রিয়াদের চলমান অংশীদারিত্বের জন্য প্রিন্স সালমানকে ধন্যবাদ জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সময় জার্নাল/এলআর