স্পোর্টস ডেস্ক:
শীর্ষে ওঠার হাতছানিতে মাঠে নেমে উল্টো হারতে বসেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তবে ঘটনাবহুল ম্যাচে দুবার পিছিয়ে পড়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল দলটি। শেষের আগের মিনিটে সৌভাগ্যও হয় সঙ্গী। তাতে জয় না মিললেও উজ্জীবিত সেভিয়ার বিপক্ষে স্বস্তির এক পয়েন্ট পেল জিনেদিন জিদানের দল।
আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামে রোববার রাতে ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছে।
ফের্নান্দোর গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় সেভিয়া। মার্কো আসেনসিও বদলি নেমে সমতা টানার পর ইভান রাকিতিচের স্পট কিকে আবারও পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী গোলে হার এড়ায় তারা।
জিতলেই লা লিগার শিরোপা ভাগ্য হাতে নিতে পারত রিয়াল। উল্টো আগের মতোই নির্ভর করতে হবে আতলেতিকো মাদ্রিদের হোঁচট খাওয়ার ওপর। সঙ্গে জিততে হবে নিজেদের বাকি সব ম্যাচ।
৩৫ রাউন্ড শেষে ৭৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আতলেতিকো। রিয়াল ও বার্সেলোনার পয়েন্ট সমান ৭৫। তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে দুইয়ে রিয়াল। ৭১ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে সেভিয়াও আছে শিরোপা লড়াইয়ে।
আসরে প্রথম দেখায় সেভিয়ার মাঠে তাদের গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনোর আত্মঘাতী গোলে কোনোমতে জিতেছিল রিয়াল। এবারও প্রতিপক্ষের ভুলেই পয়েন্ট পেল তারা।
ম্যাচে প্রথম সুযোগেই জালে বল পাঠিয়েছিলেন বেনজেমা। তবে তাকে ক্রস বাড়ানো আলভারো ওদ্রিওসোলা বল ধরার সময় অফসাইডে ছিলেন। গোল না মিললেও এরপর কিছুক্ষণ বেশ গোছালো ফুটবল খেলে রিয়াল।
তবে তাদের চাপ ধরে রাখার মাঝেই ২২তম মিনিটে এগিয়ে যায় সেভিয়া। ডান দিক থেকে সতীর্থের ক্রসে রাকিতিচ হেডে জটলার মধ্যে খুঁজে নেন ফের্নান্দোকে। ছয় গজ বক্সের বাইরে ঠাণ্ডা মাথায় এক ঝটকায় কাসেমিরোকে ছিটকে ওদ্রিওসোলার দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে জড়ান ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার।
এগিয়ে গিয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে সেভিয়া। যদিও প্রথমার্ধে আর কোনো নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। ৩১তম মিনিটে সমতা ফিরতে পারতো, তবে বেনজেমার উঁচু শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলরক্ষক।
দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে অনেক দূর থেকে চেষ্টা করেন লুকা মদ্রিচ। সোজাসুজি থাকলেও বোনো বল হাতে জমাতে পারেননি, কর্নার পায় রিয়াল। ওই কর্নারেই ডি-বক্সে সেভিয়ার একজনের হাতে বল লাগলে পেনাল্টি আবেদন জানায় স্বাগতিকরা, তবে সাড়া দেননি রেফারি।
৬৫তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন ভিনিসিউস জুনিয়র। মদ্রিচের পাস ধরে টনি ক্রুস বাড়ান গোলমুখে। কিন্তু শট নিতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। তার হাঁটুতে লেগে বল যায় বাইরে।
দুই মিনিট পরই কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় রিয়াল। দারুণ পাসিং ফুটবলে গড়া আক্রমণে ক্রুসের পাস ডি-বক্সে ডান দিকে পেয়ে কাছের পোস্ট দিয়ে গোলটি করেন আগের মিনিটেই মদ্রিচের বদলি নামা আসেনসিও।
৭৫তম মিনিটে দুই অর্ধের দুই ঘটনায় চরম উত্তেজনা ছড়ায়। দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া বেনজেমাকে ফাউল করেন বোনো। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তবে ভিএআরে পাল্টে যায় সিদ্ধান্ত; আক্রমণের শুরুতে রিয়ালের ডি-বক্সে এদের মিলিতাওয়ের হাতে বল লেগেছিল। উল্টো পেনাল্টি পায় সেভিয়া।
সফল স্পট কিকে দলকে আবারও এগিয়ে নিতে কোনো ভুল করেননি রাকিতিচ।
নির্ধারিত সময় শেষে ম্যাচ গড়ায় যোগ করা সময়ে। রিয়াল শিবিরে জেগেছিল হারের শঙ্কা। অবশেষে যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটের ওই গোল। ক্রুসের দূর থেকে নেওয়া শট ডিফেন্ডার দিয়েগো কার্লোসের পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়।
শেষ মুহূর্তে অবশ্য জয়ও পেতে পারতো শিরোপাধারীরা। কিন্তু কাসেমিরোর জোরালো দূরপাল্লার শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে গেলে হতাশায় নুইয়ে পড়ে রিয়াল।
লিগে এই নিয়ে টানা ১৫ ম্যাচ অপরাজিত রইলো রিয়াল। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এই অপরাজেয় যাত্রা খুব সুখকর নয় তাদের। লিগে শেষ পাঁচ ম্যাচে এই নিয়ে তৃতীয় ড্র করল দলটি। আর সব মিলিয়ে শেষ আট ম্যাচে জয় মাত্র দুটি।
একমাত্র হারটিও ভীষণ তেতো। গত সপ্তাহে চেলসির মাঠে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় তারা।
খুব দ্রুত কক্ষপথে ফিরতে না পারলে লা লিগার শিরোপা লড়াই থেকে আরও পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা জোরালো হবে রিয়াল মাদ্রিদের।