রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

খুবিতে গবেষণা

লবণাক্ত এলাকায় গো খাদ্যের চাহিদা মেটাবে পাকচোং ঘাস

মঙ্গলবার, জুন ২০, ২০২৩
লবণাক্ত এলাকায় গো খাদ্যের চাহিদা মেটাবে পাকচোং ঘাস

মোঃ মিরাজুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো গো-খাদ্যের অভাব ও দানাদার খাদ্যের উচ্চমূল্য। মাটি ও পানিতে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের জমিতে ঘাসের উৎপাদন আশানুরূপ হয় না। গবাদিপশু পালনের জন্য খামারিকে শুধুমাত্র খড় এর উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে এ অঞ্চলের খামারিরা গবাদিপশু পালনে ক্রমান্বয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এ কারণে ক্রমশ: এ অঞ্চলে গবাদিপশু থেকে দুধ বা মাংসের প্রত্যাশিত উৎপাদন পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় গো-খাদ্য বিশেষ করে উচ্চফলনশীল সবুজ ঘাসের ঘাটতি দূর করতে পাকচোং জাতের ঘাস চাষ করে সাফল্য পেয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গবেষকরা। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তিন উপজেলায় দুই শতাধিক খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই এ গবেষণালব্ধ ফলাফল এ অঞ্চলের খামারিদের উপকারে আসবে এবং গবাদিপশু থেকে মাংস ও দুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা গবেষকদের।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. সফিকুল ইসলাম এই গবেষণার প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পিএইচডি শিক্ষার্থী পিযুষ কান্তি ঘোষ এই পাকচোং চাষের মূল গবেষক। তিনি ইতোমধ্যে তাঁর গবেষণাকর্মটি সম্পাদন করেছেন। 

প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. মো. সফিকুল ইসলাম জানান, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ‘ম্যাক্সিমাইজিং ফরেজ প্রোডাকশন ইন স্যালাইন প্রন এরিয়া অব সাউথ-ওয়েস্ট কোস্টাল বেল্ট থ্রু ইমপ্রুভড ম্যানেজমেন্ট প্রাকটিসেস’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রকল্পের আওতায় দুই ধাপে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় এ গবেষণাকর্মটি পরিচালিত হয়। প্রথমধাপে এ অঞ্চলে কি পরিমাণ গবাদিপশু আছে এবং গবাদিপশু কি কি কারণে কমে যাচ্ছে সেটা খুঁজে বের করা হয়। খামারিরা কোন কোন ঘাস বা গো-খাদ্য ব্যবহার করেন সে বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হয়। সেখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ১৭টি ঘাসের জাত নিয়ে ৫টি লবণাক্ততার মাত্রা তৈরি করে টবে চাষ করা হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. পূর্নেন্দু গাইন মাঠ গবেষণাগারের সেমিকন্ট্রোলড সেডে এগুলো চাষ করা হয়। সেখান থেকে ভিন্ন ভিন্ন লবণাক্ততার মাত্রায় যেগুলো ভালো উৎপাদন হয় সেগুলোর মধ্যে ৪টি ঘাস (নেপিয়ার-৪, পাকচোং, জার্মান ও হাইব্রিড জামবু জাত) পরবর্তী ধাপে গবেষণার জন্য নির্বাচন করা হয়। এই ৪টি ঘাসের জাত বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঠ পর্যায়ে গবেষণার জন্য পাঠানো হয়। মাঠ গবেষণার পর এই ৪টি জাতের মধ্যে সবচেয়ে ভালো উৎপাদন আসে পাকচোং থেকে।

ড. সফিক আরও জানান, পাকচোং ঘাস ৬০ দিনেই গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত হয়। তবে গবেষণার জন্য এটি ৯০ দিন পর্যন্ত রাখা হয়েছিলো। ঘাস চাষের পর প্রথম কাটিং ৬০ দিন পর কেটে গবাদিপশুকে খাওয়ানো যায়। এরপর উন্নত পরিচর্যার মাধ্যমে প্রতি ৪৫ দিন পর পর ঘাস কর্তন করা যায়। একবার রোপণ করলে সামান্য যত্নে ৫ বছর পর্যন্ত এই ঘাস উৎপাদন হবে। এ অঞ্চলে এ ঘাসের গড় উৎপাদন ৬০ দিনে হেক্টর প্রতি ৪৪.৭৭ টন এবং ৯০ দিনে হেক্টর প্রতি ৭৫.৮০ টন। এই ঘাস রোপনের উপযুক্ত সময় ফাল্গুন-চৈত্র মাস (মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য এপ্রিল)। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে কাটিং রোপণ করা উচিত নয়। 

জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে জন্মানো পাকচোং ঘাস পুষ্টিমান বিবেচনায় খুবই উন্নত। এই ঘাসটি নরম হওয়াতে গবাদি পশু খুবই আগ্রহ সহকারে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এ ঘাসে ৭০% এর উপরে জলীয় পদার্থ থাকে। এ ঘাসে খাদ্যের উপাদানের সবচাইতে দামি অংশ প্রোটিন বা আমিষ তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ঘাসের প্রায় সমান থাকে। এ ঘাসে খাদ্যের আরেটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফাইবার (আঁশ) পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। এ ঘাসে গড়ে ১.৫% এর উপরে ফ্যাট থাকে, যা গবাদি পশুর দেহের পুষ্টিমান চাহিদা পূরনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ঘাস সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক খাদ্য বলে এটি গ্রহণে প্রাণির রুমেনে কোন ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয় না। এমনকি প্রাণী থেকে উৎপাদিত দুধ এবং মাংস মানব স্বাস্থ্যের জন্যও নিরাপদ।

এ বিষয়ে গবেষক পিযুষ কান্তি ঘোষ বলেন, পাকচোং ঘাস চাষাবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে ঘাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, গবাদিপশু লালন-পালন অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হবে এবং খামারিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন ও তাঁদের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটবে। একই সাথে বেকারত্ব দূর হবে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সর্বোপরি, আমার বিশ্বাস উপকূলীয় অঞ্চলের গবাদিপশুর উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে এদেশে প্রাণিসম্পদের বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে গবেষণা অনুদান দেওয়া হচ্ছে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণায় অনেক বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। এর বাইরেও সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নে তারা নানা ধরনের গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করছেন। এসব গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের আপামর জনগোষ্ঠির উপকারে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল