সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিশোধ নিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে একই শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিরুদ্ধে। মারধর শেষে পরবর্তীতে আর ক্যাম্পাসে দেখে গেলে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
রবিবার (৯ জুলাই) বেলা ১১টায় ঝাল চত্বরে এই মারধরের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা ও অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী শরীফুজ্জামান শোভন। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন ইংরেজি বিভাগের মাসুদ রানা, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের ওলিউর রহমান ওলি, বাংলা বিভাগের তাওহীদ তালুকদার ও হিউম্যান রিসোর্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সজিব আহমেদ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্যক্তিগত কার্যকালাপ ও মতের অমিলের কারণে অভিযুক্ত ওলিউর রহমান ওলির সাথে দীর্ঘদিনধরে কথা বলেন না ভুক্তভোগী। গত ২৫মে প্রধান ফটক এলাকায় ওলি শোভনকে উদ্দেশ্য করে আজেবাজে কথা বলতে থাকলে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। হাতাহাতির একপর্যায়ে ওলিকে একটি চড় মারেন ভুক্তভোগী। তখন ওলি সেখান থেকে চলে যান। তার একটু পরেই তিনি তাঁর বন্ধু মাসুদকে নিয়ে আসে শোভনকে মারার জন্য। তখন শোভনের সাথে তার বিভাগের বন্ধু সাকিব হাসানও উপস্থিত ছিলেন। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। মারামারির সময় অভিযুক্ত মাসুদের একটি দাঁত ভেঙে যায় বলে জানা গেছে। পরে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত উভয় পক্ষের মাঝে বিষয়টি সমাধান করে দেন।
এ ঘটনার জের ধরেই প্রতিশোধ নিতে আজ বেলা ১১ টার দিকে ঝালচত্ত্বরে নাস্তা করার সময় মুল অভিযুক্ত মাসুদের নেতৃত্বে তাওহীদ, সজিব, ওলিসহ ১০-১২ জন শোভনের উপর অতর্কিত হামলা চালান। হামলায় তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে মারতে রাস্তার উপর ফেলে দেওয়া হয়। এসময় তার মাথায় আঘাত করতে থাকেন অভিযুক্তরা। এতে তার নাক, মুখ ও হাতের আংঙ্গুলে জখমসহ রক্তপাত হয় এবং মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। মারধরের সময় তার হাতঘড়ি, চশমা, মানিব্যাগ কেড়ে নেন অভিযুক্তরা। পরে তার বন্ধুরা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে আহত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে কর্তব্যরত ডা. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, 'কিল ঘুষির কারণে ওই শিক্ষার্থী মাথার চামড়ায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে। এজন্য তার এখন ব্যাথা হচ্ছে। পরবর্তীতে ব্যাথা আরও বাড়তে পারে। ওর মাথার আঘাতের ব্যাপকতা জানতে তাকে সিটিস্ক্যান করার জন্য বলেছি। সিটিস্ক্যান করলে বোঝা যাবে যে মাথার খুলির ভেতরে আঘাতের কোনো প্রভাব আছে কিনা?
এছাড়াও পরবর্তী সময়ে আর ক্যাম্পাসে দেখা গেলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। তাই নিজের নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন অভিযোগকারী।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মাসুদ, ওলিউর রহমান ওলি ও তাওহীদ তালুকদারের সাথে একাধিকবার মুঠোফোন যোগাযোগের চেষ্টা করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে অন্য অভিযুক্ত সজিব আহমেদ বলেন, 'এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। মারামারির সময় আমি হলে ছিলাম। আমার গেস্টের জন্য নাস্তা আনতে একবার ঝাল চত্বরে গিয়েছিলাম তখন মারামারি হয়েছে কিনা জানি না।'
অথচ ভুক্তভোগী ছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শীরা মারধরের সময় ঘটনাস্থলে সজীবের উপস্থিত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, 'পূর্বের মারামারির ঘটনার জেরে মারামারি হয়েছে বলে নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছে। এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর একটি অভিযোগ পত্রও হাতে পেয়েছি। বিষয়টি আমলে নিয়েছি। আগামীকাল ছাত্র-উপদেষ্টার সাথে কথা বলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবো। '
এমআই
