নিজস্ব প্রতিবেদক:
মার্কিন প্রতিনিধি দল দেশে অবাধ সুষ্ঠু ও ঝামেলাবিহীন নির্বাচন প্রত্যাশা করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে এ কথা জানান। এ ছাড়াও মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো নিয়ে কোনো প্রসঙ্গ আসেনি, কোনো আলোচনাই হয়নি। তাঁরা এতটুকু বলেছেন যে, তাঁরা কোনো পার্টিকে এনকারেজ (উৎসাহিত) করার জন্য এখানে আসেননি। তাঁরা কোনো দলকে সাপোর্ট করেন না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে যাতে একটি অবাধ সুষ্ঠু, সহিংসতামুক্ত এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়, এর বাইরে তাঁরা কিছুই চান না, কিছুই বলেননি। তাঁরা বারবার বলে গেছেন, কোনো দল বা ব্যক্তিকে তাঁরা সমর্থন করার জন্য এখানে আসেননি।’
মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, ‘তাঁরা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আসেনি বলেও আমাদের জানিয়েছেন। তাঁরা কারও প্রতি বিরাগভাজন হয়ে এখানে আসেননি। তাঁরা চাচ্ছেন বাংলাদেশের যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, সেটিই স্মুথলি যাতে চলতে থাকে। তাঁরা যে ভিসা রেস্ট্রিকশন দিয়েছেন, সেটা সবার জন্য। সেটা কোনো দলকে উদ্দেশ্য করে দেয়নি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে, সেটি তাঁরা আমাদের জানিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গেছেন, এ সবকিছু নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট, সেটা তাঁরা আমাদের কাছে বলে গেছেন। আমাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে, বাংলাদেশ যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় তাঁরা খুশি।’
মার্কিন প্রতিনিধি দল গতকাল দুই দলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রশংসা করেছেন জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা নিয়ে আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সমস্যার কত দ্রুত সমাধান হবে, সেটা নিয়ে আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানব পাচারকারীরা যে খেলাধুলা করছে, সেটা যাতে না করতে পারে, তা নিয়ে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমরা বলেছি-মানবপাচার রোধে আমরা টায়ার থ্রি থেকে টায়ার-টুতে চলে এসেছি। এটা তাদেরই মূল্যায়ন, সেটাকেও তাঁরা অ্যাপ্রিশিয়েট করেছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তাঁরা সবকিছু নিয়েই সন্তুষ্ট। তাঁরা বলেছেন, আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু এবং ভায়োলেন্স ফ্রি হয়, সেটা তারা দেখতে চান। আমরা বলেছি-সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সময় আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেভাবেই তারা কাজ করবে। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৈরি আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার বিশেষ কিছু বাহিনীকে তারা যে প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছে, সেটাও আমি তাদের মনে করিয়ে দিয়েছি।’
র্যাব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘না, র্যাব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সুষ্ঠু, অবাধ এবং সহিংসতামুক্ত একটি নির্বাচন তাঁরা চেয়েছেন। আমরা বলছি-আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৈরি আছে, তোমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) ট্রেনিং নিয়ে তারা উজ্জীবিত আছে। আশা করি তাঁরা একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন...ইতিমধ্যে অনেকগুলো নির্বাচন হয়ে গেছে, সেগুলো অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ হয়েছে। সে রকম জাতীয় নির্বাচনটাও শান্তিপূর্ণ হবে, আমরা সেটিই আশা করছি।’
প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের পরিবেশ নিয়ে খুশি, কিন্তু তারা তাদের নাগরিকদের চলাফেরায় সতর্কতা জারি করেছে-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এ রকম কথা বলেনি।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের জন্য মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁরা বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের জন্য আমরা সব সময় তোমাদের পাশে আছি।’
এমআই