শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

ইবিতে নিরাপত্তাকর্মীর সাথে অসদাচরণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

সোমবার, জুলাই ১৭, ২০২৩
ইবিতে নিরাপত্তাকর্মীর সাথে অসদাচরণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি: 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এস্টেট অফিসের নিরাপত্তা সেলের সুপারভাইজার ও উপ-উপাচার্যের পিএস'র সাথে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গত শনিবার (১৫ জুলাই) প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ফরিদ উদ্দিন নামের ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তবে অভিযোগকারীদের দ্বারা উল্টো তারাই হেনস্তা ও হুমকির স্বীকার হয়েছেন মর্মে আজ পাল্টা অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন দুই অভিযুক্ত শিক্ষার্থী। 

গত ১১জুলাই সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। লিখিত অভিযোগে ওই দুই শিক্ষার্থী ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রেদওয়ান মাহমুদ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফাতেমাতুর জোহরা বলে উল্লেখ করেন ফরিদ উদ্দিন। 

অভিযোগে তিনি বলেন, 'গত ১১ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে একটি মোটর সাইকেল দ্রুতগতিতে এলোমেলো ভাবে চলাচল করছিল। আমি তাদেরকে মোটর সাইকেল থামাতে বলি এবং তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা ক্ষুব্ধ হন। পরে তাদের পরিচয় জানতে পারি তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করি এলোপাতারী মোটর সাইকেল চালাচ্ছেন কেনো? তখন রেদোয়ান নামের শিক্ষার্থী বলেন, আমি যেভাবেই মোটর সাইকেল চালায় তাতে আপনার কি? আপনার গায়ের সাথে তো লাগেনি এবং আপনি বলার কে?

এসময় আমার সাথে চিকিৎসা কেন্দ্র পরিদর্শন করতে আসা দুইজন র‍্যাবের প্রতিনিধিও ছিলেন। এছাড়া পরে উপ-উপাচার্যের পিএস সোহেল রানা সেখানে উপস্থিত হন। পরে আমাদের প্রত্যেকের সাথে তারা খারাপ আচরণ করেন। কথার এক পর্যায়ে ফাতেমাতুর জোহরা নামের আরেক শিক্ষার্থী আমাকে বলেন, আমি কি করতে পারি আপনি জানেন? এখন যদি ছাত্রদের ডাকি তাহলে আপনার কি অবস্থা হবে? ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আপনি এবং আপনার প্রশাসন আমার কিছুই করতে পারবে না।' এছাড়া ওই শিক্ষার্থীরা প্রশাসন এবং নিরাপত্তা সেল সম্পর্কে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এবং তাদের সাথে করা এমন অসদারণের সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।

এদিকে পাল্টা অভিযোগে ওই নিরাপত্তা কর্মী এবং উপ-উপাচার্যের পিএস'ই প্রথমে তাদেরকে হেরেসমেন্ট করেছেন বলে দাবি করেন অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। যার ফলে অসুস্থ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা এবং বর্তমানেও তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন বলে জানান তারা।

অভিযোগপত্রে রেদওয়ান মাহমুদ বলেন, 'আমি গত ১১ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে লাইব্রেরি সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে মোটর সাইকেলে গন্তব্যে যাওয়ার পথে এস্টেট অফিসের নিরাপত্তা সেলের সিকিউরিটি সুপারভাইজার ফরিদ উদ্দীন দ্বারা হেনস্তার স্বীকার হই। ঐ সময়ে তিনি হঠাৎ আমাকে হাতের ইশারায় থামতে বলেন। স্বাভাবিকভাবেই আমি তার কাছে গিয়ে থেমে যাই এবং তাকে সম্মান প্রদর্শন পূর্বক সালাম দিই। তখন তিনি আমার পরিচয় জানতে চাইলে আমি পরিচয় দিই। ঐ সময় তিনি আমাকে ধমকের সুরে জিজ্ঞাসা করেন এই ছেলে৷ তুমি কি পুলিশ? আমি উত্তরে বলি, জ্বী না।

তখন তিনি আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, তাহলে তুমি পুলিশের স্টিকার লাগানো বাইক কেন চালাচ্ছো? আমি আবারো উত্তর দিই বাইকটি একজন পুলিশ কর্মকর্তার। তিনি আমাকে বলেন, পুলিশের স্টিকার লাগানো বাইক তো তুমি চালাতে পারবা না, এখনি বাইক থেকে নামো। তখনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপ উপাচার্য মহোদয়ের পিএস সোহেল রানা। শুরুতেই তিনি উগ্রভাবে তেড়ে আসেন এবং আমাকে প্রশ্ন করেন, তুমি রাস্তার মাঝে বাইক কেন রাখছো? তখন আমি তাকে বুঝানোর চেষ্টা করি আমাকে ফরিদউদ্দীন কর্তৃক হঠাৎ দাড় করানো হয়েছে। কিন্তু তিনি আমার কথা কর্ণপাত না করেই আমার উপর চড়াও হন এবং আমি তার মুখের উপর কেন কথা বললাম এজন্য বারংবার হুমকি দিতে থাকেন। ঐ সময় আমার সাথে থাকা শিক্ষার্থী উনাকে বুঝানোর চেষ্টা করলে তিনি তার উপর ও চড়াও হন এবং বাজে ভাবে হেনস্তা করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে ঐ দুইজন ব্যক্তির ক্ষমতা প্রদর্শন পূর্বক আমাদেরকে হুমকি প্রদান করা হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'এই ঘটনার জন্য ঐ শিক্ষার্থী এবং আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি এবং আমার সাথে থাকা শিক্ষার্থী অসুস্থ হয় পড়ে। তখন তাকে ইবি মেডিকেলে ভর্তি করা হয় এবং পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত তিনি অসুস্থ আছেন।' 

শেষে প্রশাসনের নিকট তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং উক্ত ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন জানান তিনি।

পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'তারা যে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছে সেটা আমি শুনিনি। কি অভিযোগ করেছে সেটাও জানিনা। ওই শিক্ষার্থীদেরকে তো আমরা চিনিই না। তাহলে হুমকি দিবো কিভাবে? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়াই হচ্ছে আমাদের কাজ। সেই হিসেবে তাদেরকে সতর্ক করা। এর থেকে বেশি কিছু করার অধিকার তো আমাদের নেই।'

উপ-উপাচার্যের পিএস সোহেল রানা বলেন, 'ঐদিন বিকালে বাজারে যেতে দেখি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনের রাস্তায় একটি বাইক আড়াআড়ি করে রাখা আছে। এসময় দুই শিক্ষার্থীর সাথে নিরাপত্তা কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন ও ওইদিন তদন্ত করতে আসা দুই র‍্যাব কর্মকর্তার সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। ওই শিক্ষার্থীদের পরিচয় জিজ্ঞাস করলে পরিচয় না দিয়ে তারা উল্টো আমার উপর চড়াও হয়। এবং বলে আমি কে? আপনাকে উত্তর দিতে হবে নাকি? এরপর আমি তাদেরকে বোঝনোর চেষ্টা করলে তারা আমার উপর চড়াও হয়। আর বলে আপনারা যা করার করেন গিয়া।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, 'আমরা অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। আমাদের মিটিং হয়েছে। যেহেতু পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, তার জন্য যাচাই-বাছাই প্রয়োজন। এজন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য রেজিস্ট্রার বরাবর সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। হয়তো দুই একদিনের মধ্যেই একটি কমিটি গঠন করা হবে।'

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল