রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভিজিএফ-এর টাকা বিতরণ করার সময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার দুপুরের সদর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা এসময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অভিযোগ তুলেও তাকে গালমন্দ করেন। হামলার শিকার হয়ে দিনভর নানা চাপের মুখে সন্ধা রাতে এবিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন পিআইও।
হামলার শিকার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ সাংবাদিকদের বলেন, ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ এর টাকা বিতরণ করার সময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আ'লীগ সভাপতি আব্দুল হাই কমান্ডারের নেতৃত্বে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা আমার উপর হামলা চালায়। এসময় তারা আমার উপর উপর্যপুরি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এবং আমার ধর্মীয় পরিচয় নিয়েও গালমন্দ করেন। পরে কয়েকজন সহকর্মী ও ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে , বুধবার সকাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ভিজিএফ এর টাকা বিতরণ শুরু হয়। মাইকে সুবিধাভোগীদের নাম ডেকে নিশ্চিত হয়ে টাকা বিতরণ করা হচ্ছিল। দুপুরের দিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ'লীগ সভাপতি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে আসে।এসময় পিআইও টাকা বিতরণ করছিলো। উপজেলা চেয়ারম্যান পিআইওর সাথে টাকা বিতরণের বিষয় কথা বলেন এবং পিআইও তাকে জানান, দুপুরের মধ্যে টাকা বিতরণ শেষ করতে হবে। তাদের কথা চলাকালে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেক পিআইওর শার্টের কলার চেপে ধরে ঘুষি দেয়। এসময় তাদের অনুসারীরাও পিআইওকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে।
পরে স্থানীয় কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যায়। হামলার শিকার পিআইও রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে বলে হাসপাতালে সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এঘটনায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ বাদী হয়ে রাজীবপুর থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ এই ঘটনায় রাজীবপুর সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা কে আটক করেছে।
পিআইও উপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন (হিরো) বলেন, আমি তার (পিআইও'র) সাথে কথা বলার সময় তিনি চেয়ারে বসে ছিলেন এবং দুপুর একটার মধ্যে টাকা বিতরণ শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করছিলেন। এজন্য স্থানীয় জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধাক্কা দিয়েছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা তার উপর হামলা চালায়নি দাবি করে তিনি বলেন আমরা তাকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করেছি। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাও মিথ্যা ও উদ্দেশ্যে প্রণোদিত বলেও জানান তিনি।
সরকারী কর্মকর্তার উপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন রাজীবপুর- রৌমারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মাহফুজ রহমান। তিনি বলেন, এই ঘটনার সঠিক তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল আলম বাদল বলেন ঘটনার সময় আমি রুমের ভিতর ছিলাম হইচই শুনে বাহিরে বের হয়ে এসে শুনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে মারধোর করেছে। এটা খুব দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। তিনি আরও জানান সদর ইউনিয়নে মোট ভিজিএফ ধারীর সংখ্যা ৬ হাজার ৬৮৫ জন। প্রায় ৫ হাজার জনের মধ্যো টাকা বিতরন করা হয়েছে বলেও জনিয়েছেন তিনি।
পিআইওর উপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবিরুল ইসলাম বলেন, সরকারি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়া খুব দুঃখজনক। তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে রাজীবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নবিউল হাসান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে। এই ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে কার কার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে- সেই নাম গুলো বলা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
সময় জার্নাল/ইএইচ