সৌরভ শুভ, জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) গণতান্ত্রিক পর্ষদ সমূহে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটরিয়ার শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।
লিখিত বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান বলেন, 'গণতান্ত্রিক সকল পর্ষদের নির্বাচনের বিষয়ে উপাচার্যকে ছয়বার সশরীরে উপস্থিত হয়ে এবং বিবৃতির মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক সমিতির নির্বাহী পরিষদ গত ২ ফেব্রুয়ারী এবং ২০ মে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে মেয়াদোত্তীর্ণ গণতান্ত্রিক পর্ষদ সমূহের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি করলেও তিনি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুসংহত না করে বিভিন্ন বিভাগ, অফিস ও আবাসিক হলে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ দেয়ায় ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে গত ২৩ জুলাই উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে মেয়াদোত্তীর্ণ সকল পর্ষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছি। নির্বাচনের দাবিতে গত ২৪ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত গণসংযোগ কর্মসূচিতে বিরাজমান গণতন্ত্রহীনতায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, ২০০৫ সালের আগে ক্ষমতায় থাকাকালীনও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আন্দোলনে স্বোচ্চার ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক নির্বাচনের ব্যবস্থা না করে একদিকে উপাচার্য দায়িত্বে অবহেলা করছেন অন্যদিকে কাল ক্ষেপণের মাধ্যমে তিনি সহকর্মীগণের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। উপাচার্য নির্বাচনের সুস্পষ্ট রূপরেখা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি সহকর্মীগণের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট হবেন বলেন তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এসময় অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, 'প্রশাসনের কথা ও কাজে মিল খুঁজে পাই না। দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচি দিলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে। বর্তমান প্রশাসনের কার্যক্রমে আমরা হতাশ। শিক্ষক সমিতি যেহেতু গণতান্ত্রিক সংগঠন তাই, গণতান্ত্রিক পর্ষদে নির্বাচনের দাবিতে আমরা শিক্ষক সমিতির সাথে কথা বলেছি। আগামী ৮ আগস্ট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে। আমাদের দাবি আদায় না হলে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
অধ্যাপক শামছুল আলম বলেন, ' ৮ তারিখে শিক্ষার্থীদের সভায় কি সিদ্ধান্ত আছে তা দেখার অপেক্ষায় আছি। এরপর কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিবো। আশাকরি শিক্ষকদের পাশাপাশি ছাত্ররাও আমাদের সাথে একাত্ম হবে।'
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বক্তারা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা চর্চা করা ছাড়া প্রশাসন সব কাজ করে যাচ্ছে। প্রশাসন একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য গণতান্ত্রিক পর্ষদের নির্বাচন দিচ্ছে না। গগণতান্ত্রিক চর্চার অভাবে সাড়ে ১৪শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প মাস্টার প্ল্যান ছাড়া ব্যয় করা হচ্ছে। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সহ সংশ্লিষ্টরা এর সুফল ভোগ করতে পারছে না। এ সময় তারা জাকসু নির্বাচন সহ ক্যাম্পাসে দল মত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দলের শিক্ষার্থীদের সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সিনেট হতে সিন্ডিকেট সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ২০১৮ এর মে মাসে ডীন, জুনে সিন্ডিকেট, শিক্ষক পর্ষদ, অর্থ কমিটি, একই বছর অক্টোবরে সিনেট (শিক্ষক প্রতিনিধি) এবং ২০২১ এর জানুয়ারিতে সিনেট রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এছাড়াও দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে হচ্ছে না জাকসু নির্বাচন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান, অধ্যাপক শামছুল আলম, অধ্যাপক মো. সোহেল রানা, অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক শাহ নেওয়াজ, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, অধ্যাপক অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ড. শফিকুল ইসলাম সহ প্রমুখ।
সময় জার্নাল/এলআর