সৌরভ শুভ, জাবি প্রতিনিধি:
স্বপ্ন ছিলো উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পারি জমানো। দেশের জন্য বিশ্ব মানের জ্ঞান উৎপাদন করা। বাবা-মায়ের অনুমতি না নিয়েই স্বপ্ন জয়ের জন্য নিজের চেষ্টায় কাজ করতে থাকেন তিনি। অনেক চড়াই-উতড়াই পেড়িয়ে পরিশেষে ভারত থেকে একাধিক প্রস্তাব পান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নঈমুল ইসলাম মীম।
সাম্প্রতিক ভারতের উত্তর প্রদেশ এর একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রস্তাব পান তিনি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, বর্তমান কার্যক্রম আর দেশের জন্য ভাবনা নিয়ে গল্প করতে করতেই জানা যায়, একটি নয় বরং তিন-তিন টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক পেয়েছেন এই মেধাবী ছাত্র।
মীম জানান, স্কুলে পড়া অবস্থাতেই প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল দেশের বাইরে পড়বার। স্কুল জীবন শেষ করলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ থেকে। বাবা-মায়ের করা শাসনেই কলেজ জীবনও তাকে পার করতে হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ থেকেই।
সময়টা তখন ভর্তি যুদ্ধের। বন্ধুরা যখন ভর্তি যুদ্ধের লড়াইয়ে ব্যস্ত। মীম তখন ঘুরছেন দেশের বাইরে পড়ার সুযোগ সুবিধা খুঁজতে। খুঁজেও পেলেন কিছু পথ। হাত খরচের কিছু কিছু জমিয়ে তিনি মিটান অ্যাপ্লিকেশনের খরচ। কয়েকটি দেশের বড় বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনও করেন। শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না।
অনেক আশা নিয়ে তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় হাঙ্গেরির ইয়টভস লরান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন কিন্তু সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে প্রথম ধাপ পেড়িয়ে দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে বাদ পরে যান মীম। আশাহত হন তিনি, কিন্তু থেকে থাকার পাত্র নন মীম। একের এক চেষ্টা করতেই থাকেন। তার প্রথম স্বপ্ন এসে ধরা দেয় ২০২২ সালের ৭ই আগস্টের ভোর সকালের একটা ই-মেইল এ। ই-মেইলটি ছিল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর আবার ডাক পান ভারত ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন এন্ড রিসার্চ এর অধীনে আর্কিটেকচার নিয়ে পড়ার জন্য।
কিন্তু মীমের লক্ষ্য ছিলো ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনার। গল্পে গল্পে তার পরিকল্পনাও জানান। তিনি চান গ্রিন ফাইন্যান্স নিয়ে পড়াশোনা করে নিজ দেশের ইকোনোমিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে। তাই আরো চেষ্টা করতে থাকেন মীম। অবশেষে তার ভাগ্য সারা দেয় ইচ্ছা পূরণে। এবার ডাক পান ভারতের উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়ার জন্য। এ নিয়ে তিনটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ পান মীম।
নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে মীম জানান, নিজ চেষ্টায় পর পর তিনটি সরকারি স্কলারশিপ পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন সকলের পূরণ হোক। চকটদার বিজ্ঞাপন ছড়ানো এজেন্সিগুলোর পিছনে সময় ও অর্থ অপচয় না করে নিজ চেষ্টায় স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করা উচিত। আমাদের সময়কার শিক্ষার্থীরা অনেক সহজে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে তথাপিও তারা এজেন্সির উপর নির্ভর করে যেটা তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে হতাশা সৃষ্টি করে। আমি আমার বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার বন্ধু ইমরান আকন্দ প্রতিটা সময় আমাকে বিভিন্নভাবে যতোটুকু সহযোগিতা করেছে এজন্য তার প্রতি সবসময় আমার কৃতজ্ঞতা থাকবে।
ছেলের অভাবনীয় সাফল্যে খুশি হয়ে মীমের বাবা-মা বলেন, আমরা অনেক খুশি আমাদের ছেলে নিজে নিজে এতো কিছু করতে পেরেছে। কিন্তু আমরা চাই না এসময়েই আমাদের ছেলে দেশের বাইরে চলে যাক। কিন্তু ছেলে চাইলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা অবশ্যই দিবো। আমাদের স্বপ্ন হলো নিজের মতো ভাবুক আমাদের ছেলে। সে স্বাধীনতা তাকে আমরা দিয়েছি। আমরা তার উপর সন্তুষ্ট। আমরা তার জীবনের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।
সময় জার্নাল/এলআর