সৌরভ শুভ, জাবি প্রতিনিধি:
ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের কক্ষে ভাঙচুরের ঘটনায় চার ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগ। শনিবার (৫ আগস্ট) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাবিবুর রহমান লিটন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক জরুরী সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, খালিদ হাসান ধ্রুব (সদস্য), নাইম আহমেদ (কর্মী), মাহমুদুল হাসান শাস্ত (কর্মী), রাইসুল ইসলাম রাতুল (কর্মী) দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ১৭ (খ) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা হতে তাদের সদস্য পদ স্থগিত করা হলো।'
এর আগে, গত মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আজিমুশ্বান নওরোজ প্রণয় (কক্ষ নং ২০৮), আরিফুল ইসলাম প্রীতম (কক্ষ নং ২১১), যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. বিপ্লব হোসাইনের (কক্ষ নং ২১০) এর কক্ষে হামলা চালিয়ে কক্ষের তালা ভেঙে ফেলে জুনিয়র কর্মীরা৷ বৈরি আবহাওয়া ও লোডশেডিংয়ের সুযোগ নিয়ে এ ঘটনা ঘটায় প্রায় ১৫-২০ জন কর্মী।
মীর মোশাররফের হোসেন হলের ৪৮ ও ৪৯ ব্যাচের ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হলে পলিটিকাল ব্লকে দীর্ঘদিন ধরেই সিট সংকট চলছে৷ ৪৮ ব্যাচের জন্য মোট ৪টি কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যেখানে মোট ১৭ জন গাদাগাদি করে থাকেন। একইভাবে ৪৯ ব্যাচের ১৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র দুইটি কক্ষ দেয়া হয়েছে। একই অবস্থা ৫০ ব্যাচের বেলায়ও। তারা এখনো মিনি গণরুমে অবস্থান করছেন। সিট সংকটের কারণে কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। ৪৩ ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানের পরও তাদের হলে অবস্থান করায় ক্ষোভ থেকেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় বহিষ্কৃত চারজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের গ্রুপের কর্মী এবং শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের একান্ত অনুসারী৷ সহ-সভাপতি বিপ্লব হোসাইন ও প্রীতম আরিফের সাথে দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে তাদের পদ স্থগিত করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'রাতের অন্ধকারে কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা পরিষ্কার না। পরিকল্পিতভাবে একই বিভাগের চারজনের পদ স্থগিত করা হয়েছে।'
পদ স্থগিত হওয়ার বিষয়ে ছাত্রলীগ কর্মী নাঈম আহমেদ বলেন, 'আমি শাখা ছাত্রলীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী৷ ব্লকে ছাত্রলীগের অনেক কর্মী আছে যারা রাজনীতিতে সক্রিয় না। তাদের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নাই, কিন্তু আমার পদ স্থগিত করা হলো। সিনিয়র ভাইদের মধ্যে বিরোধ থাকতে পারে৷ কিন্তু আমাদের রাজনীতিতে তো কোন সমস্যা নেই। তাছাড়া সভাপতি-সেক্রেটারি দুজনের কেউই এই বিজ্ঞপ্তি অফিশিয়ালি প্রকাশ করেননি৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে এ ব্যাপারে ওনাদের সাথে কথা বলব।'
পদ স্থগিত হওয়ায় এক ছাত্রলীগ কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা ৪৮,৪৯,৫০ ব্যাচ ব্লকে অনেক দিন যাবৎ রুম সমস্যা আছি। আমাদের ৪৯ ব্যাচের জন্য ২ টা ডাবল সিটের রুম বরাদ্দ দিছে। এক রুমে ৮ জন করে থাকি আমরা।যেখানে আমাদের ৩য় বর্ষ শেষ প্রায়। পড়াশোনা করতে পারি না এরজন্য। আমাদের জুনিয়র ৫০ ব্যাচের জন্য ও হলের নেতারা ব্লকে রুম বরাদ্দ দিতে পারে নি। তারাও কষ্টে আছে অনেক।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বার বার আশ্বস্ত করে রুম দেয়নি। অন্য দিকে নেতাদের রিলাস্কের জন্য এ ব্লকেও রুম থাকে আর আমাদের থাকার জায়গা নেই। শেষ পর্যায় তারা রুম দিতে ব্যর্থ হলে ব্যাচ গত সিদ্ধান্তে ৪৭,৪৮,৪৯,৫০ ব্যাচ একত্রে হয়ে বাধ্য হয়ে রুমে তালা কাটে। অথচ বহিস্কৃত ৪ জন রসায়ন বিভাগের। যেখানে তালা ভাঙ্গার সময় ৪৭,৪৮,৪৯,৫০ ব্যাচের সবাই ছিলো।
এ ব্যাপারে শাখা-ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বিপ্লব হোসাইন বলেন, 'সেদিন রাতে যা ঘটেছে তার প্রেক্ষিতে তদন্ত করে এদের পদ স্থগিত করা হয়েছে৷ সভাপতি-সেক্রেটারি তদন্ত করেই ব্যবস্থা নিয়েছে৷ এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।'
সহ-সভাপতি প্রীতম আরিফ বলেন, 'সিনিয়রদের রুমে তালা ভাঙা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা৷ লোডশেডিংয়ে এ চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হয়েছে। প্রতিহিংসা থেকেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তার শাস্তি তারা পেয়েছে।'
সময় জার্নাল/এলআর