জেলা প্রতিনিধি:
বৃষ্টি না হওয়ায় কমে গেছে কক্সবাজারের মাতামুহুরী নদীর পানি। ফলে চকরিয়া-পেকুয়ার বন্যা কবলিত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। মাটির দেয়ালের ঘর মিশে গেছে মাটির সঙ্গে, বাড়িঘরের আসবাবপত্র অনেকের ভেসে গেলেও অধিকাংশ ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
সরেজমিনে বুধবার (৯ আগস্ট) ঘুরে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধ ভেঙে যেমন একাকার হয়ে গেছে, তেমনি সড়ক ভেঙে তৈরি হয়েছে শতশত ক্ষতচিহ্ন। যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কিছু কিছু সড়ক।
এদিকে, বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য আর বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। কারণ বাড়িঘর পানিতে ডুবে থাকায় রান্নাবান্না করা সম্ভব হচ্ছে না।ফলে খাবার পানি আর খাদ্যের জন্য হাহাকার বিরাজ করছে প্লাবিত এলাকায়।
বন্যায় যে কয়টি গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এরমধ্যে লক্ষ্যারচর ও কাকারা ইউনিয়নের মাঝামাঝি এলাকা শাহ উমরাবাদ। এই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বেশিরভাগ এলাকা পড়েছে কাকারা ইউনিয়নে। এটি মাতামুহুরি নদীর উত্তরপাশে অবস্থিত। অন্যান্য এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেলেও বুধবার বিকেল পর্যন্ত সড়কসহ পুরো এলাকাটি পানিতে ডুবে ছিলো। কারণ মাতামুহুরী নদীর পানি প্রবেশ না করার জন্য স্থাপন করা দীর্ঘ গাইডওয়াল ভেঙে গেছে এই এলাকায়।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, সঠিক মাঠ জরিপ ছাড়াই জেলা প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে ৷ বরাদ্দও করেছে অধিকাংশ কাগজে-কলমে। ফলে মাঠ পর্যায়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণ তৎপরতা চোখে পড়েনি।
বুধবার সারাদিন শাহ উমরাবাদ এলাকায় কোন ধরণের খাদ্য সহায়তা পৌঁছেনি। স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার পুরো এলাকা মানুষের মাথা সমান পানিতে ডুবে ছিলো। রাত থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ার পর কোমর সমান পানিতে এসে ঠেকেছে। এখনো লোকজন বাসাবাড়িতে প্রবেশ করতে পারছেন না।
সাহারবিল ইউনিয়নেরও ৯০ শতাংশ এলাকা বন্যায় মারাত্মকভাবে প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়ির পাশাপাশি দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত বেশকিছু এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও ৪০ শতাংশ পানির নিচে দেখা যায়।
সাহারবিল ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোসাইন চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নে ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাছ চাষ, সড়কসহ সবকিছু ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। আমরা মঙ্গলবার থেকেই ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছি। সড়কের ওপর অতিরিক্ত পানি জমে থাকায় ত্রাণের গাড়িও যেতে পারছে না ঠিকমতো। আর ভারী বৃষ্টি না হলে শুক্রবারের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
এদিকে বদরখালীতে কিছু কিছু এলাকা বুধবার বিকেলে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। ফলে এই এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টি না হলে অস্বাভাবিক হারে পানি বাড়বে না।
ডুলহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর বলেন, তার ইউনিয়নের অল্পকিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি থামার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটও মেরামতের দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সময় জার্নাল/এলআর