সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ছাদ থেকে পড়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ল'এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নওরীন নুসরাত স্নিগ্ধার মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন তার বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সম্মুখে 'মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব' ম্যুরালের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে নওরীনের মৃত্যুকে আত্মহত্যা নয়, বরং হত্যা বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদেরকে ‘সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই’, 'রহস্যজনক মৃত্যুর রহস্য উম্মোচিত হোক’, ‘ছাদ থেকে পড়লো নাকি ফেলে দেওয়া হলো?', ‘নওরীনের শেষ বিদায়ে শশুর বাড়ির লোক অনুপস্থিত কেন?’, ‘তদন্তের নামে প্রহসন দেখতে চাই না’সহ নানা স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচারের জোর দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, 'নওরিন নুসরাত এমন একটি চরিত্র যিনি যেকোনো কাজ করার আগে চিন্তাভাবনা করতেন। তিনি কোনো আবেগী চরিত্র নয়। আজকে এমন ধরনের কোনো অবস্থায় পড়লে আমরা হয়তো সবার আগে তার কাছেই যেতাম। তিনি যদি আত্মহত্যাই করতেন, তার জন্য অনেক সহজ ছিলো ফাঁস দিয়ে মারা যাওয়াটা, কারণ তিনি ওই দিন বাড়িতে একা ছিলেন। তার এতটুকু বিবেচনা শক্তি ছিলো, তিনি জানতেন যে ছয় তলা থেকে পড়ে তিনি মারা না গিয়ে পঙ্গুও হয়ে যেতে পারেন।
আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে তার বাবা মা যখন ওইদিন তাদের বাসায় আসতে চেয়েছিলো তার স্বামী তখন তাদেরকে বলেছিলো যে সন্ধ্যা ৬টার আগে আসা যাবে না। আসলে নাকি বাসায় ঢোকা যাবে না। আমাদেরকে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি হতাশায় ভুগছিলেন, এটা আমরা কখনোই বিশ্বাস করিনা। যিনি সবসময় শিক্ষার্থীদের হতাশা দূর করতে কাজ করে গেছেন তার থেকে এমন কিছু আশা করা যায় না। এটা কি আসলেই আত্মহত্যা নাকি এর পেছনে অন্য রহস্য লুকিয়ে আছে তার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাই।'
এসময় মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, ল'এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক সাহিদা আখতার, বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসানসহ বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কিতিক সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে ল'এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক সাহিদা আখতার বলেন, 'নওরীনের মতো মেধাবী শিক্ষার্থী শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের জন্য একটি সম্পদ ছিলো। কিছুদিন আগেই তার বিবাহ হয়েছিল। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করতো। বিবাহের পর তাকে একটি ঘরে বন্দী করে রাখা হতো। এমনকি তাকে তার প্রয়োজনীয় ঔষধ পর্যন্ত সেবন করতে দেওয়া হতো না। সে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কিতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। যে শিক্ষার্থী আত্নহত্যা বিরোধী বিভিন্ন সভা-সেমিনার করতেন, তার মতো শিক্ষার্থী আত্নহত্যা করবে এটা বিশ্বাস হয় না। আমরা চাই তার মৃত্যুর আসল রহস্য উন্মোচন করা হোক।'
সময় জার্নাল/এলআর