মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রক্সিতে পাস করে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীকে আটক করে চাঁদা দাবি ছাত্রলীগের

শুক্রবার, আগস্ট ১৮, ২০২৩
প্রক্সিতে পাস করে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীকে আটক করে চাঁদা দাবি ছাত্রলীগের

জাহিদুল ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি :

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে ভর্তি হতে আসা এক শিক্ষার্থীকে আটক করে ৩ লাখ টাকা চাদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে ভর্তি ইচ্ছুর মা প্রক্টর দপ্তরে অভিযোগ জানালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যাদের বিরুদ্ধে আটক করে চাদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে তারা হলেন, শের-ই- বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী রাজু আহমদে, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মহিবুল মমিন সনেট ও শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণ। 

আটক ভর্তিচ্ছু হলেন আহসান হাবীন। গত ২৯ মে বিজ্ঞান ইউনিটের তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় তার হয়ে অন্যজন পরীক্ষা দেন ও উত্তীর্ণ হন তিনি। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত পপুলেশনস সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগে ভর্তি হতে আসেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আহসান হাবীন তার মাকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল রাজশাহী আসেন। আজকে দুপুরে ওই শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তবে ওই শিক্ষার্থীর প্রক্সির জন্য একটি গ্রুপের সঙ্গে ৪ লাখ টাকার চুক্তি করেন। রাজশাহীতে এসে গতকাল ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি ৬০ হাজার টাকার জন্য আজ দুপুরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের দিকে ডেকে নিয়ে যান ওই গ্রুপের সদস্যরা। কিন্তু তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সেখান থেকে তাকে শের-ই-বাংলা হলে নিয়ে এসে আটক রেখে তার বাবার কাছে ফোন দেওয়া হয়। ওই গ্রুপটি আরও ৩ লাখ টাকা দাবি করে। পরে ওই শিক্ষার্থীর খোঁজ না পেয়ে তার মা বিশ্ববিদ্যালয়  প্রশাসনের শরনাপন্ন হন। পরে প্রশাসন ওই শিক্ষার্থীর বাবার মাধ্যমে জানতে পারেন আহসান হাবীনকে শের-ই-বাংলা হলে আটক করে রাখা হয়েছে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে৷ একপর্যায়ে তিনি প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন বলে স্বীকার করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ করে। 
 
আটক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মা বলেন, আজকে দুপুরে ছেলেকে ভর্তি করার উদ্দেশ্যে রাজশাহী আসেন। তার ছেলে তাকে বসিয়ে রেখে ভর্তি হতে যায়। কিন্তু বিকাল ৫টা বাজলেও ছেলে না আসলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন। পরে সেখান থেকে আহসান হাবীনকে ফোন করলে  শের-ই-বাংলা হলে আছেন বলে জানান তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার ছেলেকে উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে তারা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। 

আহসান হাবিনের  মা আরও বলেন, 'আমার ছেলে যদি অপরাধ করে থাকে তাহলে তার শাস্তি হোক। কিন্তু যারা আমার ছেলেকে গুম করে আটকে রেখেছিল তাদেরও শাস্তি দিতে হবে।' 

তবে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন শের-ই- বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ। তিনি বলেন, 'সনেট ও প্রাঙ্গণ এঘটনার মূল কারিগর। ওই শিক্ষার্থী প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন। তাদের সঙ্গে চুক্তিতে কিছু টাকা বাকি থাকায় আমার পাশের রুমে নিয়ে আসে। ঘটনা জানার পরে আমি তাদেরকে হল থেকে বের করে দেয়। পরে প্রভোস্ট স্যার ফোন দিয়ে বলে তাদের ডেকে আনতে। যেহেতু আমি হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এরপর তাদের ফোন দিয়ে প্রভোস্ট স্যারের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীকে প্রশাসনের কাছে তুলে দেই। আমি এ ঘটনায় জড়িত নই।'

অপর দুই অভিযুক্ত শাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণ ও মহিবুল মমিন সনেটের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও বন্ধ পাওয়া যায়। 

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, 'আটকের ঘটনায় রাজু সম্পৃক্ত ছিল না। যেহেতু সে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, ঘটনা জানার পর সে ওই শিক্ষার্থীকে প্রশাসনের কাছে তুলে দিতে গিয়েছিল।'

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, 'ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ বিষয়ে একটি মামলা করা হবে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।'

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আটক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি মামলা করা হবে। মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক করে চাদা দাবি বা আদায়ের কোনো সম্পৃক্ততা থাকলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল