নিজস্ব প্রতিবেদক:
এবার ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম চড়া। এখন বাজারে সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও নাগালে আসেনি দাম। ফলে বেশির ভাগ মানুষের পাতে এখনো ইলিশ ওঠেনি। এক কেজি ছোট আকারের ইলিশ এখনো ৬০০ টাকার নিচে মিলছে না। বাজারে গেলে ইলিশের চড়া দাম নিয়ে ক্রেতাদের ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায়।
সোমবার (২৮ আগস্ট) ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত একমাসের ব্যবধানে ইলিশের দাম কিছুটা কম। তবে ভরা মৌসুম বিবেচনায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এখনো বেশি। এক-দেড় কেজি আকারের ইলিশ এখন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা অন্যান্য বছরের এ সময় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে থাকতো।
রামপুরা বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম এখন ১৫০০ টাকা, দেড় কেজি ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা। ছোট ইলিশের মধ্যে ৮০০ গ্রামের ইলিশের দাম ১৪০০ টাকা, ৭০০ গ্রাম ১২০০ টাকা, এবং ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
তবে একই আকারের নদীর ইলিশের দাম কিছুটা বেশি। বাড্ডা বাজারে দেড় কেজি ওজনের বড় ইলিশ ৩০০০ হাজার টাকা দাম হাকাচ্ছেন বিক্রেতা। পাশে একই আকারের আরও কিছু ইলিশ রয়েছে, যেগুলো সাগরের বলে দাম ৫০০ টাকা কম বলছেন। বিক্রেতা বলেন, নদীর সঙ্গে সাগরের মাছের স্বাদের পার্থক্য রয়েছে, দামেও তেমন। ভালো খেতে হলে বেশি গুনতেই হবে।
ভরা মৌসুমে ইলিশের দাম কেন কমছে না এ প্রশ্নের উত্তরে জেলে, পাইকার, ঢাকার আড়ৎদার ও মৎস্যবিশেষজ্ঞরা বলেন, এ বছর সাগরে ইলিশের দেখা মিললেও নদ-নদীতে এখন খুব মিলছে না ইলিশের। আর নদীর ইলিশ সুস্বাদু হওয়ায় ভোক্তাদের কাছে এ ইলিশের চাহিদা বেশি। চাহিদার কারণে অনেকে সাগরের ইলিশ নদীর বলে চড়া দাম হাঁকছেন। নদীর ইলিশ চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় এখনো আকার ভেদে দেড় হাজারের নিচে খুচরা বাজারে ইলিশ মিলছে না। তাই বাজারে সাগরের যে ইলিশ মিলছে তার দামও অপেক্ষাকৃত বেশি।
আবার ব্যবসায়ীরা এ-ও বলছেন, কয়েক বছরের ব্যবধানে জ্বালানি তেল ও বাজারে নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। যার একটি প্রভাব পড়েছে ইলিশের দামে।
যদিও দেশের মৎস্যখাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে ইলিশ। উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস ইলিশ। তাদের নিরলস পরিশ্রমে ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ইলিশ উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ। জাটকা নিধন বন্ধ, নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে অভিযানসহ সরকারের নানামুখী কঠোর ব্যবস্থাপনায় গত এক যুগে দেশে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন লাখ টন।
যার প্রভাব পড়ার কথা এখন ভরা মৌসুমে। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসার কথা। কিন্তু কোনো কোনো জেলায় ভরা মৌসুমেও আশানুরূপ ইলিশ মিলছে না। সুস্বাদু এ মাছের উৎপাদন নির্ভর করে বৃষ্টিপাত, পানির অবস্থা, প্রবাহ, তাপমাত্রা, এমনকি পূর্ণিমা ও অমাবস্যার ওপর। এসব উপাদানের ছন্দপতন ঘটলেই বিপত্তি।
মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, দেরিতে ইলিশ পাওয়ার বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হলো, জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টির সময়ও পরিবর্তন হয়েছে। সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায়, উপকূলীয় নদ-নদীর পানির লবণাক্ততা কমছে না। ফলে লবণাক্ততা না কমায় দেরিতে প্রবেশ করছে মা-ইলিশ। যেখানে ইলিশ মূলত ডিম ছাড়ার জন্য মোহনা থেকে মিঠা পানির নদ-নদীতে প্রবেশ করে। এছাড়া বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। পানি যত বাড়ে নদীতে ইলিশের আধিক্যও দেখা যায়।
এমআই