মাহমুদুল হাসান, কুবি প্রতিনিধি:
সেকশন করে শিফট ভিত্তিক ক্লাস করানো, বড় পরিসরে বড় হলরুমে এক বেঞ্চে একজন করে বসিয়ে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব দিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রয়োজনীয়তার কথা জানান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য ড. শেখ মকছেদুর রহমান।
রবিবার (১৬ মে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'ফেসবুকে' এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ড. শেখ মকছেদুর রহমান বলেন, 'করোনার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলেও প্রাইভেট বিশ্বিবদ্যালয়গুলো তাদের একাডেমিক কার্যক্রম শুধু পুরোদমেই চালিয়ে যাচ্ছে না, নতুন নতুন সেশনে ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে, ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করাচ্ছে। আমরা সবাই জানি, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা তুলনামূলকভাবে মেধাবী। এই মেধাবী শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে কিন্তু এ ব্যাপারে কারো মধ্যে তেমন কোন উদ্বেগ দেখছি না! সত্য কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯% শিক্ষার্থী এখন হতাশাগ্রস্ত! এ ছেলে-মেয়েদের দিকে তাকানো যায়না!
প্রকৃতপক্ষে হতাশা থেকে আমরা শিক্ষক সমাজ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে চাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছাত্রছাত্রীদের মত শিক্ষকগণও ক্লাসে ফিরতে চায়, পরীক্ষা নিতে চায়। কলকাকলীতে মুখরিত ক্যাম্পাস শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর প্রকৃত ঠিকানা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক মনে করে শিক্ষার্থীরা তাদের হৃদস্পন্দন। প্রয়োজনে আমরা শিক্ষর্থীদেরকে সেকশন করে শিফট ভিত্তিক ক্লাস করাবো, বড় পরিসরে বড় হলরুমে এক বেঞ্চে একজন করে বসিয়ে পরীক্ষা নিব। এখন প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সরকারি সিদ্ধান্ত।'
তার দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি শ্রেণীকক্ষে পাঠদান ও অনলাইন ক্লাসে পাঠদানের তুলনা করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করছে ঠিকই কিন্তু তেমন ফলপ্রদ হচ্ছে না। সমস্যা হচ্ছে, অনলাইন ক্লাসে একদিকে যেমন ছাত্র-ছাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না অন্যদিকে শিক্ষকদের জন্যও স্বস্তিদায়ক নয়, তাছাড়া নেটওয়ার্কজনিত সমস্যা এবং উন্নত ডিভাইস (কম্পিউটার, ট্যাব, এন্ড্রয়েড ফোন ইত্যাদি) সবার কাছে থাকে না (মনে রাখা দরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০% ছেলেমেয়ে গ্রাম থেকে উঠে আসা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান) এছাড়া ক্লাসে প্রত্যক্ষ পঠন-পাঠনে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকের মধ্যে যে মনোরম ও দ্বিমুখী যোগাযোগ হয় সেটা অনলাইন ক্লাসে সম্ভব নয়। আবার ব্যবহারিক শিক্ষা নির্ভর বিষয়ে অনলাইন পাঠদান তেমন কার্যকর নয়। তাই প্রত্যক্ষ পাঠদানের কোন বিকল্প নেই।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলে তাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে নিন্দুকেরা বলতে শুরু করেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ১৪ মাস বন্ধ, শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ছে এ ব্যাপারে শিক্ষকদের কোন মাথা ব্যাথা নেই, তাদের মাথা ব্যাথা থাকবে কেন? তারা তো নিয়মিত বেতন ভাতা পাচ্ছে' আসলে এমন কথার পরিপেক্ষিতে বলতে হয়, সরকারি সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ এখনই ক্লাসে ফিরতে আগ্রহী কিন্তু মনে রাখতে হবে সরকারি সিদ্ধান্তের বাহিরে শিক্ষকদের কিছুই করার নেই।'
এছাড়া 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে করোনার বিস্তার বেশি হবে' এ যুক্তিকে খণ্ডিত করতে শিক্ষা ব্যাবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের দিকে আঙ্গুল তুলে তিনি বলেন, 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। আমরা দেখছি দূর পাল্লার গাড়ি ব্যতীত জেলার অভ্যন্তরে সকল প্রকার গাড়ি-ঘোড়া চলছে, গার্মেন্টসসহ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা, অফিস চলছে, দোকানপাট, প্রার্থনালয় সবই উন্মুক্ত। এখানে যদি করোনার বিস্তার না ঘটে তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে করোনার বিস্তার ঘটবে এমন চিন্তা অমূলক নয় কি? মনে প্রশ্ন জাগে, করোনার দোহাই দিয়ে শিক্ষা ব্যাবস্থা ধ্বংসের কোন ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়ে যাচ্ছিনাতো?'
সময় জার্নাল/এমআই