নিজস্ব প্রতিনিধি:
সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের উন্নয়নের ধারাটা একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছে। সংসদ সদস্যরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় এটা সম্ভব হয়েছে। সরকার গঠনের পর থেকে আমরা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি।
তিনি বলেন, আজকে যাদের (দলীয় সংসদ সদস্য) হারিয়েছি এবং সেখানে নতুন যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তাদের কাছে আবেদন থাকবে, যে আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেই স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। নতুনরা যেন সে লক্ষ্যেই কাজ করে।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সরকারি দলের দুই এমপির মৃত্যুতে সংসদে শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সরকারি দলের এই দুই এমপির মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব তোলা হলে তা সর্বসন্মতক্রমে গ্রহণ করা হয়।
সরকারের উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করতে পেরেছি। বাংলাদেশকে আরও উন্নত করতে হবে। সবাইকে নিবেদিত প্রাণ হয়ে নিজ নিজ এলাকার মানুষের সেবা করে যাবেন এটাই আমি চাই। মানুষের সেবা করাটাই সব থেকে বড় পাওয়া। এর চেয়ে বড় কিছু নেই। রাজনীতি নেতাদের জন্য এটাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন। আজ যারা মারা গেছেন তাদের অবদান রয়েছে যে কারণে আমরা এতদূর আসতে পেরেছি।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের বরেণ্য নেতা সদ্য প্রয়াত সাবেক ধর্মমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, মতিউর রহমান ময়মনসিংহ থেকে নির্বাচন করতেন। কিন্তু আমরা যখন জোট করি তিনি তার আসনটি বেগম রওশন এরশাদকে ছেড়ে দেন। তিনি যে কত বড় নেতা ছিলেন, যে মুহূর্তে আমি তাকে বললাম জোট করবো এই সিটটি ছাড়তে হবে, তিনি এক মুহূর্তের জন্যও আপত্তি করেননি। সঙ্গে সঙ্গে সিটটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। তা না হলে তিনি এখনো ওই সিটের এমপি থাকতেন।
বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ দলের বহু নেতাকর্মীকে হারিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা (প্রয়াত নেতৃবৃন্দ) যে সংগ্রাম করে গেছেন, জেলজুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন, যেভাবে জাতির পিতার পাশে ছিলেন এবং জাতির পিতার হত্যার পর নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি।
শোকপ্রস্তাব গ্রহণের পর সংসদে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের এমপি মাওলানা রুহুল আমিন মাদানী। পরে সংসদের বৈঠক আগামীকাল সোমবার বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। চলতি সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে রেওয়াজ অনুযায়ী বৈঠক মুলতবি করা হয়।
শোকপ্রস্তাবের ওপর অন্যদের মধ্যে সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওয়াসিকা আয়শা খান, জুনাইদ আহমেদ পলক, সাজ্জাদুর রহমান, শফিকুল ইসলাম শিমুল, আশরাফ আলী খান খসরু, আব্দুল আজিজ ও মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সরকার দলের দুই এমপি ছাড়াও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মতিউর রহমান, সাবেক এমপি পান্না কায়সার ও মোহাম্মদ উল্ল্যার মৃত্যুতে এদিন শোক প্রকাশ করে সংসদ।
এছাড়া বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) সুলতান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সিরাজুল আলম খান, কবি মোহাম্মদ রফিক, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরুর স্ত্রী কামরুন্নেছা আশরাফ দীনা, সংসদ সদস্য (যশোর-৩) নাবিল আহমেদের পিতা অনুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক জেমকন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহেদ আহমেদ, সংরক্ষিত আসনের এমপি কানিজ ফাতেমা আহমেদের বাবা কামাল উদ্দিন আহমেদ খান ও কৃষিবিজ্ঞানী কাজী এম বদরুদ্দোজার মৃত্যুতেও শোক জানানো হয়।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপের মাউইতে ভয়াবহ দাবানল, ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা এবং দেশ-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণেও সংসদে শোক প্রকাশ করা হয়।
সময় জার্নাল/এলআর