এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ঢাকার কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। সাত বগির বিশেষ একটি ট্রেন কমলাপুর রেলস্টেশনের ৭ নম্বর প্লাটফর্ম থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৭ মিনিটে ভাঙ্গার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি ৮২ কিলোমিটার নবনির্মিত রেলপথ পাড়ি দিয়ে ১২টা ৩৫ মিনিটে ভাঙ্গায় এসে পৌঁছায়।
রেলের এই যাত্রাপথে অংশ নেন, রেলমন্ত্রী নরুল ইসলাম নাহিদ, চীফ হুইপ নুরে আলম চৌধুরী লিটন, সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, ফরিদপুরের ভাঙ্গা চার আসনের এমপি নিক্সন চৌধুরী, মাগুরা সদর আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর সহ রেল বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
এ সময় মন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। এর মধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৯৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৮০ দশমিক ৫০ ভাগ।
এদিকে ভাঙ্গা-যশোর অংশের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৮ ভাগ। বাকি কাজ দ্রুত সময় শেষ করে নির্ধারিত টাইমের সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন এশিয়া অঞ্চলের সাথে রেলের বাংলাদেশ কানেক্টিং করাটাই এখন মূল লক্ষ্য আমাদের। এই লক্ষ্যেই রেল মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, ঢাকার সাথে মংলা বন্দর ও ভারতের সাথেও যোগাযোগ ব্যবস্থায় দূরত্ব এবং সময় দুটোই কমবে। এতে যাত্রীরা খুব কম খরচে ভ্রমণ করতে পারবেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীরা লাভবান অনেক বেশি হবেন বলে তিনি জানান।
এ সময় তিনি আরো বলেন এর আগে কোন সরকার রেলের উন্নয়নে কোন ভূমিকা রাখেনি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা এসেই ২০১১ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে আলাদা করেন এবং তারপরে রেলের উন্নয়নে তিনি ভূমিকা গ্রহণ করেন ব্যাপকভাবে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রেলের পরিব্যবস্থা কে ঢেলে সাজিয়ে একটি উন্নত রেল ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। সারাদেশের প্রতিটি জেলার সাথে রেলের সংযোগ ব্যবস্থা এই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, রেলের দুটি ব্যবস্থা রয়েছে একটি বোর্ডগেজ এ আরেকটি মিটার গেজ। প্রতিটি রেলপথকে মিটারগেজে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। যেখানে একটি রেল পথ আছে সেখানে ডাবল লাইন করা হবে। যেখানে রেললাইন নেই সেখানে রেললাইন তৈরি করা হবে, আমাদের সমুদ্র বন্দর এবং নদীপথের সাথে রেলকে সংযুক্ত করা হবে বলে ও তিনি জানান।
কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট পদ্মা ব্রিজ রেল প্রজেক্ট এর চিফ কো অর্ডিনেটর মেজর জেনারেল এ কে এম রেজাউল মাজেদ জানান, পদ্মা সেতু এবং দুই পাড়ের রেলপথ প্রস্তুত এখন। ১০ অক্টোবর উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ রেলপথে পদ্মা সেতু অতিক্রমের পরিকল্পনা রয়েছে। দ্রুতগতির ট্রেনে চড়ে রাজধানী থেকে প্রধানমন্ত্রীর ফরিদপুরের ভাঙ্গা যাওয়ার কথা। এরপর দিনই রেলপথ উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। তাই প্রকল্পজুড়ে এখন ভীষণ ব্যস্ততা। আর পদ্মা সেতুর রেলপথ চালু এবং প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে পদ্মার দুই পাড়ের মানুষ উচ্ছ্বসিত। এরপর আবার ট্রেনটি ঘুরে দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা রেললাইন চালু হলে প্রথমে ঢাকা, মাওয়া, পদ্মা, শিবচর এবং ভাঙ্গা রেলস্টেশন খুলে দেয়া হতে পারে। এই রেললাইন উদ্বোধনের এক সপ্তাহ পর থেকে শুরুতে এক জোড়া ট্রেন চালানো হবে।একমাস পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে এবং আরও কিছু স্টেশনও খুলে দেয়াহবে। এ ছাড়া তিন মাসের মধ্যেই সব স্টেশনের কাজ এবং সিগন্যালিংয়ের কাজও শেষ হয়ে যাবে। তখন ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। অর্থাৎ ঢাকা থেকে ভাঙ্গা রেললাইন উদ্বোধনের সাথে ফুল ফ্রেজে অপারেশন হতে তিন মাস সময় লাগবে।
এমআই