আব্দুন নূর তুষার :
১. রোজিনাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা চেনেন না। তাই চিঠিতে জনৈক রোজিনা লিখেছেন।
তারা পত্রিকা পড়েন না?
জনৈক রোজিনা কি পাস ছাড়া বা অ্যাক্রেডিটেশন ছাড়া সচিবালয়ে ঢুকেছিলেন?
তিনি কি মিথ্যা পরিচয়ে বা তালা ভেঙ্গে কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করেছিলেন?
তিনি কি সেদিনই প্রথম সচিবালয়ে গেছেন ? ছয় ঘন্টা আটকে রেখে, সার্চ!! করেও তার পরিচয় জানতে পারেন নাই। তিনি জনৈক রয়ে গেছেন?
কনস্টেবল মিজানের পূর্ণ পরিচয় কি? এই মিজান এর যে বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে তাতে তাকে তো অতিরিক্ত সচিবের চাইতেও পাওয়ারফুল মনে হচ্ছে।
২. মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন স্টেট সিক্রেট নিয়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে কি ধরনের স্টেট সিক্রেট থাকতে পারে? নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টে টিকার কারিগরি দিক বা গবেষণার তথ্য উন্মুক্ত না করার কথা থাকতে পারে। সেই তথ্য গোপনীয় কিন্তু নন ডিসক্লোজার চুক্তিটি কিন্তু গোপনীয় না।
৩. বাংলাদেশে কি এমন মহাজীবানু গবেষণা করছে বা পারমানবিক করোনা চুল্লী বানাচ্ছে যে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে স্টেট সিক্রেট থাকবে? গত পঞ্চাশ বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে রাখা হয়েছিল , এমন একটা স্টেট সিক্রেট এর উদাহরণ দেন।
৪. রোজিনাকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদনের কারণ কি? এটা এমন গুরুতর অপরাধ যে তাকে রিমান্ডে নেয়া লাগবে?
৫. তাকে আটক করার সাথে সাথে পুলিশে ও তার কর্মস্থলকে অবহিত করা হয়েছিল কি? তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখার অধিকার কোন আইনবলে মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা পেয়েছেন?
৬. হিজাব ঢাকা যে নারী তার গলায় হাত দিয়েছেন / মতান্তরে সার্চ করছেন. তিনি কোন অধিকারে তাকে সার্চ করছেন? সার্চ করবে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন শৃংখলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা। আর যা পাওয়া যাবে সেটা স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে জব্দ তালিকায় নিতে হবে। তার ব্যক্তিগত মোবাইল সেট কেড়ে নিয়ে সেটা পরীক্ষা করার অধিকার কে এই কর্মকর্তাদের দিয়েছে? তার ব্যাগে হাতই বা তারা দেবেন কেন? তারা যে নিজেরা সেটাকে ট্যাম্পার করেন নাই সেটা কেমনে বোঝা যাবে?
৭. শত শত পুলিশ পাহারা দিয়ে রোজিনাকে নিয়ে যাওয়ার যে ছবি সেটা কি বোঝায়? রোজিনা কি ভয়ংকর কেউ? তাকে পথিমধ্যে ওৎ পেতে থাকা কেউ ছিনিয়ে নেবে? অন্তত দুজনকে সামনেই দেখা যাচ্ছে নাকের ছিদ্র খুলে রেখে মাস্ক পরতে। একজনকে দেখা যাচ্ছে মাস্ক নাই। স্বাস্থ্য বিধি না মেনে শত পুলিশের মিছিল দিয়ে তাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার শানে নুজুল টি কি?
৮. শত কোটি টাকা চুরি করা ড্রাইভার এর বিরুদ্ধে মন্ত্রনালয় কি ব্যবস্থা নিয়েছে? আবজল আর মিঠু? শাহেদ আর সাব্রিনার পৃষ্ঠপোষক প্রাক্তন ডিজি এর কি ব্যবস্থা করেছে? কোন অধিকারে সরকারী পিপিই তাদের দেয়া হয়েছিলো? সরকারী ভেন্টিলেটর তাদের বরাদ্দ দিয়েছিলো? নকল মাস্ক সরবরাহকারীকে তারা কি করেছে? এসবের ব্যাখ্যা মন্ত্রী দেয় না কেন?
৯. সচিবালয় কখন বন্ধ হয়? রোজিনাকে কখন আটক করলো? কখন থানায় নিলো? ছুটির পরেও বাকি সময়টা এরা কি করছিলো? আদালতে শত শত পুলিশ থাকতে পারে আর শাহবাগ থেকে সচিবালয়ে যেতে তাদের কি দেরী হয়? চিঠিতে লিখেছে জায়গার নাম শাহাবাগ। জায়গাটি কি শাহবাগ নাকি শাহাবাগ?
১০. আপনাদের সোভিয়েতভস্কি কৌতুকভ থেকে একটা কৌতুক বলি।
স্ট্যালিনের জমানায় এক লোক মস্কোর রেড স্কোয়্যারে দাঁড়িয়ে চেচাচ্ছে , স্ট্যালিন একটা গাধা। স্ট্যালিন একটা গাধা।
তাকে শত শত গুপ্তপুলিশ এসে ধরে নিয়ে আদালতে চালান দিলো।
সোভিয়েত আদালত বললো তার সতেরো বছর কারাদন্ড।
এক বছর প্রকাশ্যে পাগলামী চিল্লাচিল্লি করার জন্য।
আর ষোল বছর কারাদন্ড স্টেট সিক্রেট ফাঁস করে দেয়ার জন্য।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্টেট সিক্রেট নামক শব্দ শুনে আমার এটা মনে পড়লো।
১১. এসব প্রশ্ন করে কোন লাভ নেই। কারণ এই ঘটনা প্রমান করছে যে এই সমাজে চোরের মায়ের বড় গলা ছাড়া আর কোন গলা স্বাধীন না। গলা চিপা বা গলা পরীক্ষা যেটাই করা হোক না কেন, ঘাড় বন্ধক দিয়ে মাথানিচু করা সমাজে এটাই ঘটবে।
আমরা কেবল বলতে পারি..... নিন্দা করতে পারি ... হতাশ হয়ে বলতে পারি
ছি! ছি! ছি!
লেখক : চিকিৎসক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব