নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী নির্বাচনে জনগণ ভোট দিলে সরকারি দলে থাকবেন, না হলে বিরোধী দলে যাবেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের আমলে প্রতিটি নির্বাচন স্বচ্ছ ও শান্তিপূ্র্ণ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, এর থেকে শান্তিপূর্ণ কবে হয়েছে বাংলদেশে নির্বাচন? পৃথিবীর কোন দেশে হয়ে থাকে?
সংসদে সরকারি দল ও বিরোধী দলের আসনগুলো দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অক্টোবর মাসে আরেকটা অধিবেশন বসবে। সেটাই হবে এই সংসদের শেষ অধিবেশন। পরে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে যদি জনগণ ভোট দেয় আবার এদিকে আসবো। না দিলে ওদিকে যাবো। কোনো অসুবিধা নেই। জনগনের ওপর আমরা সব ছেড়ে দিচ্ছি, জনগণ যেটা করবে।’
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
দেশবাসীসহ সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে। গণতান্ত্রিক ধারাটা যেন ব্যাহত করতে না পারে। কোনো চক্রান্তের কাছে বাংলাদেশের জনগণ আর মাথানত করবে না, করেনি।’
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে এ পর্যন্ত যতগুলি নির্বাচন হয়েছে- উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন। প্রতিটি নির্বাচন স্বচ্ছ ও শান্তিপূ্র্ণ নির্বাচন। এর থেকে শান্তিপূর্ণ কবে হয়েছে বাংলদেশে নির্বাচন? বা পৃথিবীর কোন দেশে হয়ে থাকে?’
ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মশা মারতে কামান দাগলে হবে না। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সবাইকে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। কোথাও পানি জমে আছে কি না তা দেখতে হবে। শুধু সরকার করে দেবে? সিটি করপোরেশন করে দেবে? গালি দিতে হবে। গালি দিলে তো হবে না। তাদের কাজ তো তারা করে যাচ্ছে। নিজেদের কাজ নিজেদের করতে হবে। কে কী করে দিলো না- না দিলো ওই কথা বলে লাভ নেই। নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেকে করতে হবে। সেই আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘পরপর তিনবার আসতে পেরেছি বলেই এই উন্নয়নটা সম্ভব হয়েছে। আগামীতে আমাদের নির্বাচন হবে। আজকে আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা বড় বাজেট দিয়েছি। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কার্যকর করে যাচ্ছি। সেখানে কৃচ্ছ্রসাধন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশটা যে বদলে গেলো। মানুষ যে ভালোভাবে বসবাস করছে এটা তো বাস্তবতা। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে সেটাই চাই। দেশবাসীর কাছে সেটুকুই আমার আহ্বান।’
বিএনপির সময়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা ২৫ হাজার ২২৭ মেগাওয়াটে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। তবে সময়ে সময়ে কিছু কিছু লোডশেডিং করতে হয়। আর লোডশেডিং মাঝেমধ্যে থাকাটা ভালো। কারণ কী অবস্থায় ছিল, ভুলে যায়তো, তাই মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার আছে মাঝেমধ্যে। সেজন্য আমি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলি একটু লোডশেডিং দিলে মানুষের মনে আবার আসবে.. আমরা এ জায়গায় ছিলাম, এই জায়গায় যাচ্ছি। এটা মনে করায় দেওয়া উচিত।’
মূল্যস্ফীতির কারণে কিছু মানুষ কষ্টে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিনিসের কিন্তু অভাব নেই। উৎপাদনে ঘাটতি নেই। উৎপাদনের জন্য যা যা করা দরকার সেটা করছি। বাজারে গেলে কোনো জিনিসের অভাব নেই, মনে হয় কৃত্রিম উপায়ে মূল্য বাড়ানো হয়, ইচ্ছে করে বাড়ানো হয়। অনেক সময় গোডাউনে রেখে দিয়ে কেউ কেউ এরকম খেলা খেলে। সরকার পদক্ষেপ নিলে কমে আসে।’
বাণিজ্যমন্ত্রীকে বাজার মনিটরিং করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থাকে বলেছি বিশেষভাবে দেখার জন্য, কেন জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে।’ কৃষককে উৎপাদন খরচ দিতে হবে উল্লেখ করেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি যেন না হয়ে সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছি। ধীরে ধীরে সেটা বাড়ানো হচ্ছে। টাকা ছাপানো হচ্ছে না। অনেকেই বলছে টাকা ছাপিয়ে টাকা ছড়ানো হচ্ছে। টাকা ছাপানো একদম বন্ধ করে দিয়েছি। টাকা ছাপানো হবে না।’ এছাড়া আরও কিছু পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
ডলার সংকট দূর করার জন্য সরকারের নেওয়া কার্যক্রম তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘ডলার বিনিময় হার যাতে নমনীয় থাকে সেই পদক্ষেপ নিয়েছি।’ এখন ইচ্ছেমতো এলসি খোলা যায় না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকার প্রধান বলেন, ‘এখন যাচাই করে এলসি খোলা হয়। আগে যেমন ইচ্ছেমতো কোনোটা অতিমূল্য, কোনোটা অবমূল্যায়ন করা হতো। সেটার আর সুযোগ নেই। এতে হয়তো কিছু ব্যবসায়ী বিপদে পড়ে যান। সেটা সঠিক বিপদ না, টাকা পাচারের সুযোগ কমে যায়। সেজন্য কিছু চিৎকার কিছুদিন শুনেছি। কিন্তু বাস্তব কথা হলো অতিমূল্য দেখিয়ে কম মূল্যের জিনিস নিয়ে এসে, বাকি টাকা রেখে এসে একটা খেলা খেলা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটা বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ব্লুমবার্গের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে এলসি খোলা হচ্ছে। এতে আমদানিতে যে অতিরিক্ত ব্যয় হতো সেটা অনেকটাই কমে এসেছে। তার হিসাব কিন্তু আছে। এতে ডলার সাশ্রয় হচ্ছে।’
খোলা বাজারে ডলার কেনাবেচার বিষয়ে সরকার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নিত্যপণ্য আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে টাকা দিচ্ছি। দেশের মানুষের কষ্ট যেন না হয়। রিজার্ভ মানে হল তিন মাসের আমদানির খরচ যাতে থাকে। তার বেশি খুব বেশি প্রয়োজন আছে তাও না। জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন শূন্য রিজার্ভ দিয়ে। তখনতো একটাও রিজার্ভ ছিল না। সাড়ে তিনবছরে দেশ গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় রিজার্ভ এক বিলিয়ন ছিল না। কয়েক মিলিয়ন ছিল। কাজেই এটা নিয়ে কাউকে দুশ্চিন্তা বা মাথা খারাপ করার প্রয়োজন মনে করি না।’
ডলারের ওপর চাপ কমাতে ভারতের সঙ্গে লেনদেনে নিজস্ব অর্থে কেনাবেচার চুক্তি করা হয়েছে বলে জানান সরকার প্রধান। এতে ডলারের ওপর চাপ কমে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এমআই