ঢাবি প্রতিনিধি:
'মাদক সেবন কোন অভ্যাস নয় বরং এটি একটি রোগ। সময়ের পরিবর্তন, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও সহজলভ্যতার কারণে আমাদের তরুণ প্রজন্ম মাদকে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে তাদের মাঝে সৃজনশীলতা ও সামাজিক মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের কারণে অনলাইন আসক্তিতেও জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে; হচ্ছে সময় অপচয়। এতে ক্যারিয়ার নিয়েও ভুগছেন হতাশায়।
'আসক্তির ভয়াবহতা ও ক্যারিয়ার বিভ্রান্তি: সমাধান যে পথে' শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। শুক্রবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত বাংলাদেশ এন্টি-ড্রাগ ফেডারেশনের উদ্যোগে কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়। আয়োজনে মিডিয়া পার্টনার সময় জার্নাল।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট শাহ মনজুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে মাদক গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকের কারণে আমাদের সামজিক আচরণের নৈতিক স্থলন ঘটছে। এটিকে প্রতিরোধ করতে আপনার মাদকসাক্ত বন্ধুর প্রথম ডাককেই প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের প্রজন্মের ক্যারিয়ার স্বপ্ন অত্যন্ত সীমিত ছিল। ডাক্তার, ইঞ্জিয়ার, ওকালতি বা বিসিএস দিয়ে বড় সরকারি কর্মকর্তা হওয়া৷ বর্তমানে ক্যারিয়ারে বাছাইয়ে এধরনের সীমাবদ্ধতা নেই। প্রান্তিক জায়গা থেকে কেউ চাইলে দেশের বাইরে পড়তে যেতে পারছে। বর্তমানে এসব মেধা বাইরে থেকে আর দেয়ে ফিরছে না তাও একটা বড় চিন্তার জায়গা।'
তিনি বলেন, 'একটা সময় তথ্য সংগ্রহের জন্য কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী, বাতিঘর, বায়তুল মোকরামম ঘুরতে হতো। কিন্তু বর্তমানে তথ্য খুবই সহজলভ্য। আমাদের হাতের যে স্মার্টফোনে আমরা আসক্ত হয়ে পড়ছি সেখানে। দেখা গেল, ফোনে ক্লাস চালু রেখেই ফেসবুকে চলে যাচ্ছি। অথচ এখানেই কিন্তু আমাদের প্রয়েজনীয় জরুরী তথ্য পাওয়া যায়। সফল হতে হলে প্রযুক্তির সার্থক ব্যবহারের পাশাপাশি খাবার, ঘুম ও সামাজিক বন্ধনগুলো ঠিক রাখতে হবে।'
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিকন পয়েন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তহিদুল বাশার বলেন, অনেকগুলো কারণে তরুণরা মাদকাসক্ত হতে পারে। কৌতূহল,বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে, পারিবারিক সমস্যা, বেকারত্ম, হতাশা ও দুঃখবোধ, মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা প্রপমঘটিত কারণ ও বিনেদনের অভাবের কারণে সমাজে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে।
এতে উদ্বোধনী বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখন পারিপাশ্বিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। চারপাশের পরিবেশ বর্তমান তরুণদের উপর একটি বড় প্রভাব রাখবে। আমরা সমাজে কিভাবে তা ছড়িয়ে দিচ্ছি তার উপর অনেকগুলো বিষয় নির্ভর করে। যেমন যৌন শিক্ষা ভালো হবে নাকি খারাপ তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আমরা কীভাবে এটা শিক্ষা দিচ্ছি তার উপর। সেকারণে আমাদের চারপাশের পরিবেশকে যদি আমরা সুন্দর করতে পারি, তাহলেই তরুণ প্রজন্মকে এই বিষণ্ণতা থেকে বের করে আনা সম্ভব। ফেসবুকে আমরা অনেক বেশি পজিটিভ(ধনাত্মক) কন্টেন্টি ছড়িয়ে দিতে পারি। আমরা চাইলে কেন্দ্রীয়ভাবে পর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তবেই আমাদের সমাজটা সুন্দর হবে।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান শিরিনা বিথির সঞ্চালনায় এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এমআই