স্পোর্টস ডেস্ক : শঙ্কার মেঘে ঢেকে যাওয়া আকাশে সূর্য উঠেছে পাহাড়ের বুকে এসে। গ্যালারিতে ঢোল-তবলার বাড়িতে ফেটে পড়ছে উচ্ছ্বাস। পাহাড়ের মায়াবী সৌন্দর্য দেশের ক্রিকেটেও। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বড় স্বপ্নের শুরু হয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয়ে। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই আফগানদের স্রেফ গুঁড়িয়ে দিয়েছে টাইগাররা।
সাকিব আল হাসান তেঁতে থেকেছেন, তাতিয়েছেন বাংলাদেশকে। মেহেদী হাসান মিরাজ হয়ে ওঠেছেন অবিশ্বাস্য রকমের ভালো। বাংলাদেশ ফিরে আসতে পারে, দেখিয়েছে এমন কিছুও। জয়ের উচ্ছ্বাস তাই বাড়তি আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর করেছে বাংলাদেশকে। বিশ্বকাপে ঠিক যেমন শুরুর দরকার ছিল, হয়েছে তেমন কিছুই। আফগানিস্তানকে ১৫৬ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ ওই রান পাড়ি দিয়েছে ৯২ বল হাতে রেখে। বিশ্বকাপে বলের হিসেবে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়।
অথচ শুরুটা ছিল ভীষণ হতাশার। আফগানিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটার রান করছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাও ছিল আশাহীন। সবকিছুই বদলে যায় সাকিবের এনে দেওয়া প্রথম উইকেটের পর, ইব্রাহিম জাদরানকে আউট করেন তিনি। ২৫ বলে ২২ রান করে তানজিদ হাসান তামিমের হাতে ক্যাচ দেন আফগান ওপেনার।
পরের উইকেটটা কার? সাকিব আল হাসানেরই। এবার রহমত শাহ সিলি মিড অফে দাঁড়ানো লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দেন ২৫ বলে ১৮ রান করে। শুরু থেকে ধুঁকতে থাকা আফগান অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শহীদিকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৮ রান করতে তিনি খেলেন ৩৮ বল। ম্যাচের রং বদলের সঙ্গে বাংলাদেশের শরীরী ভাষাও হয়ে যায় ভিন্ন রকম। প্রতিটি রানের জন্য ক্ষুদা, তীব্রতা আর না হারার জেদ চেপে বসে। উইকেট পাওয়ার পর উৎযাপনেও থাকে সেসবের ছাপ।
তৃতীয় ব্যাটারকে ফেরানোর স্রেফ চার বল পর আবার সাফল্য পায় বাংলাদেশ। এবার মোস্তাফিজুর রহমান হন ত্রাতা। আফগানিস্তানের হয়ে ভীতি ছড়ানো রহমানউল্লাহ গুরবাজ তার বলে এগিয়ে এসে তুলে মারতে যান কাভারের ওপর দিয়ে। কিন্তু বল কিছুটা স্লো হওয়ায় ডিপ কাভারে ধরা পড়েন গুরবাজ।
আফগানিস্তানের পরের ব্যাটাররা থেকেছেন কেবল আসা-যাওয়ার মিছিলে। শেষ আট উইকেট তারা হারায় মাত্র ৪৬ রানে। ১১২ রানে দুই উইকেট থেকে গুটিয়ে যায় ১৫৬ রানে এসে। সাকিব পরে উইকেট পান আরও একটি। মেহেদী হাসান মিরাজও তার সমান উইকেট নেন, ৯ ওভারে দেন কেবল ২৫ রান। পেসারদের চার উইকেটের মধ্যে শরিফুল দুই আর তাসকিন ও মোস্তাফিজ নেন এক উইকেট করে।
বাংলাদেশ যখন জবাব দিতে নামলো, ওখানেও শুরুতে হতাশাই ছিল। তানজিদ হাসান তামিম রান আউট হয়েছেন খুবই অদ্ভূতভাবে। পরে লিটন দাস যখন ফিরলেন, একটু ভয় ভয়ও হয়তো হচ্ছিল সবার। কিন্তু ছিলেন একজন, এখন তিনি অবশ্য এখন নিয়মিতই থাকছেন বেশ ভালোভাবে- মেহেদী হাসান মিরাজ। উদাহরণটা ঠিকঠাক হলো কি না কে জানে, তবে বাংলাদেশের তরকারিতে আলু একটি ‘কমন’ ব্যাপার। মিরাজ বাংলাদেশ দলে দিন দিনই হয়ে উঠছে তেমন কিছু।
যখন, যেখানে নামছেন; দরকার হচ্ছে বল হাতে, পারফর্ম করছেন দ্বিধাহীনভাবে। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি ছুয়েছিলেন। এবার রান পেলেন মূল পর্বের ম্যাচেও। রান নিতে মাঝ পথে গিয়ে আউট হয়ে লিটনের ’না’তে ফিরে আসতে হয় তানজিদ হাসানকে। পরে অবশ্য তানজিদও ড্রাইভ দেননি, জোরেও দৌড়াননি। ১৩ বলে ৫ রান করে ফিরতে হয় সাজঘরে।
এরপর লিটন দাস ফজল হক ফারুকির বলে ইনসাইড এজে হন বোল্ড। ১৮ বলে ১৩ রান করেন তিনি। পরের গল্পটা মিরাজের। তিনে ব্যাট করতে এসে দুর্দান্ত করেন তিনি। মাঝে একবার এলবিডব্লিউ আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলেও বেঁচে যান রিভিউ নিয়ে।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরির পর মিরাজ আউট হয়েছেন নাভিন উল হকের ওভারে রশিদ খানের লাফিয়ে উঠে নেওয়া দুর্দান্ত এক ক্যাচে। ৫ চারে ৭৩ বলে ৫৭ রান করেন তিনি। তার বদলে সাকিব এসে অবশ্য খুব বেশিক্ষণ টেকেননি। ১৯ বলে ২ চারে ১৪ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপর অবশ্য বিপদ ঘটেনি আর। মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে আসেন শান্ত। ষষ্ঠ ফিফটি তুলে নিয়ে ৮৩ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
এসজে/আরইউ