দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ:
বহুমাত্রিক পুষ্টি ও আয়ুর্বেদিক গুণ সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল সাধারণত মরু অঞ্চলে ভালো জন্মে, কিন্তু এই প্রথম বিল-বাওড়ের জেলা গোপালগঞ্জে ড্রাগন ফল উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন জেলার মুকসুদপুর উপজেলাধীন বাটিকামারীর আলোকিত মানুষ, শিক্ষাবিদ মো: নজরুল ইসলাম পান্নু।
গোপালগঞ্জের মকসুদপুর উপজেলার নজরুল ইসলাম পান্নু তার দুই সহোদর কামরুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম রফিককে সাথে নিয়ে ব্যক্তিগত বিনিয়োগে নিজেদের জমিতে ড্রাগন ফল চাষের কার্যক্রম শুরু করেন প্রায় ৭ মাস পূর্বে। উদ্দেশ্য একটাই, এলাকার মানুষ সাশ্রয়ে দামী এই ড্রাগন ফল খেতে পারবে, এতে করে এলাকার পুষ্টি চাহিদা মিটবে, আবার দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ড্রাগন ফল চাষী মো: নজরুল ইসলাম পান্নু বলেন, ১’শ ৫০ শতাংশ জায়গার উপরে মোট ৮৭৫টি পিলারে, প্রতি পিলারে ৪/৫টি ড্রাগন ফলের চারাগাছ রোপন করা হয়েছে, জমি প্রস্তুতকরনে, পিলার, রড ও টায়ার ক্রয়, লোকবল খরচ প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগ মূল্য দাড়িয়েছে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা, প্রতিমাসে কেয়ারটেকারের বেতন সহ ঔষধ ও কীটনাশক বাবদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়াও বাগানের চারপাশে লেটুস পাতা, রেড লেডি ও স্ট্রবেরীর চাষ করা হয়েছে। এই ড্রাগন ফল বাগানে জাত ভেদে হলুদ, সাদা, লাল, গোলাপী, কালো ও ছাইয়া কালো রঙের ড্রাগন ফলের গাছ আছে। তিনি আরো জানান, “ল্যাদা” নাম অত্যন্ত বিষাক্ত পোকার আক্রমনে ড্রাগন ফল গাছগুলো ঠিকমতো বাড়তে পারছেনা, আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০/১১টা পর্যন্ত এই পোকা মারার কাজ করছি প্রতিনিয়ত, সন্ধ্যার পর থেকে এই পোকার আক্রমনের তীব্রতা বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে আমরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে বারবার জানানোর পরেও তার কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক কোনো সাড়া পাইনি। এই ল্যাদা পোকার আক্রমন প্রতিহত করতে পারলে আগামি ৪/৫ মাসের মধ্যেই প্রতিটি গাছে ফল আসবে বলে আশা করছি।
মুকসুদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান বলেন, গোপালগঞ্জে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়েছে। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমানে এ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি অতি সুস্বাদু একটি ফল। প্রতি কেজি ড্রাগনফল আট-নয়শত টাকায় বিক্রি হয়। কৃষি বিভাগ থেকে যে কোন সমস্যায় পরামর্শ প্রদান করবো। এছাড়াও কৃষি বিজ্ঞানের কনসালটেন্ডদের সহায়তায় পরামর্শ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আমি ও আমার দুই সহকর্মী ড্রাগন ফল বাগানটি ভিজিট করেছি, প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছি, আশা করছি, এই পোকার আক্রমন প্রতিহত করতে পারবো।
মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবায়ের রহমান রাশেদ বলেন, সাধারনত: মরু অঞ্চলে উৎপাদিত এই ড্রাগন ফলে রয়েছে বহুমুখী পুষ্টিগুন, অপেক্ষাকৃত উচুঁ জমিতে এই ফলের চাষ করতে হয়, গোপালগঞ্জ জেলায় এই প্রথম বানিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের এতবড় বাগান এটি। আমি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে ড্রাগন ফলের বাগানকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে নিয়মিত ফলোআপ এবং করনীয় ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাহায্য, সহযোগীতা করা হবে। বাটিকামারীর এই ড্রাগন ফল বাগানের মালিক পক্ষের নিয়মিত পরিচর্যা এবং কৃষি সেক্টরের রুটিন মাফিক কারিগরি সহায়তা ও ফলোআপ নজরুল ইসলাম পান্নুর চ্যালেঞ্জকে সফলতার মুখ দেখাতে পারে, এমনটাই আশা করছেন এলাকার মানুষজন।