মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘুর্ণিঝড় হামুন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গত সোমবার মধ্যরাত থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির জন্য রাস্তা-ঘাটে সকাল থেকে মানুষের চলাচল তুলনামূলক কম। ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভানে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জরুরী সভা করা হয়েছে। সভায় উপজেলার সব সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, রেডক্রিসেন্টের কর্মকর্তা ও সিপিপি টিম লিডারদের জনসাধারণকে সচেতন করতে ও নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে সাত নম্বর এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হামুনে রূপ নিয়েছে। হামুনের ক্ষয়ক্ষতি মোকবেলায় সব ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মঙ্গলবার সকাল থেকে মাইকিং করা হয়েছে। সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর মেঘলা আকাশ লক্ষ্য করা গেছে।
মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হায়দার চৌধুরী জানান, আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে মাইকিং করা হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে পৌছে যাওয়ার জন্য। এছাড়াও সাগরে যত মাছ ধরার ইঞ্জিন চালিত বোট ও নৌকা মাছ ধরা বন্ধ থাকায় আগে থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে।
মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাষ্টার বলেন, আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়াও সেচ্ছাসেবক টিম ও ছাত্রলীগের কর্মীরা দূর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা সিপিপি টিম লিডার এম সাইফুল্লাহ দিদার বলেন, ১০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় আমাদের ৮০ টিম মাঠে থাকবে। ৮০ টিমে এক হাজার ছয় শত স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। যারা নিজ নিজ ইউনিটে প্রচারনার কাজ করছে। একটি টিমে ১০ জন পুরুষ ও ১০ জন মহিলা সদস্য রয়েছে।
মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের ষ্টেশনের ষ্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারী বলেন, প্রয়োজনীয় ইকুয়েপমেন্টসহ আমাদের ৩ টি টিম গঠন করা হয়েছে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের টিম প্রস্তুত রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, এই বৃষ্টিতে আমন রোপা ও শীতকালিন সবজির তেমন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ভারি বষণ ও দমকা বাতাস হলে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের সকল উপ-সহকারী ও কৃষকদের সচেতন থাকার জন্য বলা হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম ফজলুল হক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন গুলোর জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুতি চলছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান বলেন, ৩৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার সর্বদা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’র ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুত রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সব দপ্তরের কর্মকর্তা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের সাথে সভা করে প্রস্তুুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার উপকূলীয় ইছাখালী, সাহেরখালী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নে মাইকিং ও লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে শুকনো খাবার, স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের ব্যবস্থা রয়েছে।
এসজে/আরইউ