গোলাম আজম খান, কক্সবাজার অফিস
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) রাত সোয়া ১২টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দৌজা নয়ন।
শুক্রবার (২১ মে) থেকে উখিয়া ও টেকনাফের এ পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দৌজা নয়ন।
ইতিমধ্যে উখিয়া ও টেকনাফের ৫টি ক্যাম্পে লকডাউন ঘোষণার ব্যাপারে ক্যাম্প প্রশাসনসহ রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোকে করণীয় সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। এতে লকডাউন কার্যকরে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। যা পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। লকডাউন ঘোষণা করা ক্যাম্পগুলো হলো- উখিয়ার ২-ডব্লিউ, ৩, ৪, ১৫ এবং টেকনাফের ২৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প।
সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে, বুধবার (১৯ মে) পর্যন্ত কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬৩ জন এবং এদের মধ্যে মারা গেছে ১৩ জন রোহিঙ্গা। এ পর্যন্ত করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪১ হাজার ৪৭৭ জনের।
আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৬৩৯ জন রোহিঙ্গা। এখনো আইসোলেশনে রয়েছেন ২১১ জন।
করোনার দ্বিতীয় প্রকোপ শুরু হওয়ার পর তিন থেকে চার মাসের মধ্যে আক্রান্ত ও মারা যাওয়াদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। এখন ক্যাম্পগুলোতে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখি রয়েছে।
এতে করোনা সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আগেভাগেই লকডাউন ঘোষণা দিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে উখিয়ার ৪টি এবং টেকনাফের ১টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন ঘোষণা করেছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দৌজা বলেন, করোনা মহামারির দ্বিতীয় প্রকোপকালে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সংক্রমণের হার বেড়েই চলছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বগতিতে থাকা ক্যাম্পগুলোতে লকডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
নির্দেশনার তথ্য উল্লেখ করে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, লকডাউন ঘোষিত ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দারা নিজেদের ক্যাম্পের বাইরে যাতায়াত করতে পারবে না। চিকিৎসা ও খাদ্যসহ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যে কারো চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া একান্ত প্রয়োজন ছাড়া লকডাউন ঘোষিত ক্যাম্পগুলোতে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সীমিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান সামছু-দৌজা।
তিনি জানান, সংক্রমণের হার বাড়তে থাকা উখিয়া ও টেকনাফের এই পাঁচটি ক্যাম্পে শুক্রবার থেকে লকডাউন কার্যকর শুরু হবে। যা পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের স্বাস্থ্য বিষয়ক শাখার সমন্বয়ক ডা. তোহা ভূঁইয়া বলেন, এমনিতেই গত ৩/৪ মাস ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোসহ কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে। যা গত এক বছরের আক্রান্তের সংখ্যা তুলনায় বেশি।
তিনি আরো জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে শরণার্থী শিবির গুলোর সর্বত্র আইনশৃংখলা বাহিনী রাতদিন লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করবে।
লকডাউন চলাকালে জরুরী ও অত্যাবশ্যকীয় কাজ, খাদ্য, চিকিৎসা ব্যতীত এনজিও, আইএনজিও, জাতিসংঘের সংস্থাসহ ক্যাম্প গুলোতে কর্মরত সংশ্লিষ্ট সকলের গাড়ি চলাচল ও আসা-যাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার (২০ মে) সন্ধ্যায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে ১০ দিনের ফের কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. পারভেজ চৌধুরী এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইউএনও বলেন, ‘কক্সবাজার জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এ উপজেলায় শুক্রবার সকাল থেকে কঠোরভাবে ১০ দিনের লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে উপজেলায় মাইকিং চলছে।’
তিনি বলেন, ‘লকডাউন সময়ে কোন লোক টেকনাফ থেকে বাইরে এবং ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। শুধু ওষুধের দোকান ব্যাতিত বিকেল পাচঁটা পর্যন্ত হাটবাজার ও দোকানপাট খোলা থাকবে। তবে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।
সময় জার্নাল/ইএইচ