আকতার ইবনে ওয়াহাব:
মুসলিম উম্মাহর আজ বড় সংকটে পড়েছে। ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ইতেমেন, কাশ্মীর, চীনের উইগুরসহ পৃথিবীর নানান দেশে নানান প্রান্তে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, শোষিত, লাঞ্চিত,বঞ্চিত নিপীড়িত, শরণার্থী হয়ে আছে হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হবে। এর একমাত্র কারণ মুসলিম উম্মাহর একত্রিত না হওয়া।
জ্ঞান-বিজ্ঞান, আবিষ্কার, সমাজ, রাষ্ট্র পরিচালনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, আধুনিক ধ্যান-ধারণা, চিন্তা চেতনা, সংষ্কৃতি এবং নেতৃত্ব অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রে বর্তমান সভ্যতায় সংকট বিরাজমান। কিছু বিষয়ে মূর্খতা, অজ্ঞতার কবলে পড়ে নিজেদের মধ্যে মাজহাব দ্বন্দ্ব, আহলে কুরআন, আহলে হাদীস, মাজার পূজারী, মাজার পন্থী সুন্নী আক্বীদা, কওমী আক্বীদা, আলিয়া আক্বীদা, ওয়াহাবী, সালাফী ইত্যাদি নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং বিতর্কের শেষ নেই। শেষ নেই সালাতে হাত বাধাঁ, আমিন আস্তে এবং বলা নিয়ে। অথচ সভ্যতার পরিক্রমায় বর্তমান যুগে মুসলিম উম্মাহ কোন সভ্যতায় বড় হচ্ছে এই নিয়ে উম্মাহর মাথা ব্যাথা নেই বললে চলে।
মুসলিম উম্মাহর বর্তমান বংশধররা পাশ্চাত্যের সভ্যতা এবং সংষ্কৃতিতে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত। পাশ্চাত্যের পারিবারিক, সমাজ এবং রাষ্ট্রের পরিবেশ, সাংষ্কৃতিক আচার-আচরণ দেখে তাদের বিস্ময়ের শেষ নেই। তাদের মতে- প্রাশ্চাত্য সংস্কৃতি, পরিবেশ এবং সভ্যতার চিন্তাধারা অনেক আধুনিক , সুন্দর, স্বাধীনতাচেতা এবং সবই রঙ্গিনময়। অথচ ১৫০০শত বছর আগে রাসূল স. এর শিখিয়ে দেয়া ইসলামী আদর্শ জীবন বিধান, নিজেদের সোনালী অতীত এখন আধুনিক নামধারী মুসলমানদের কাছে "সেকেলে" শব্দ হয়ে গেছে। ইসলাম আধুনিক এবং মধ্যপন্থা জাতি সেটি ভুলে গিয়ে অসচেতন মানুষের মতই শিশু , কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী এমনকি বৃদ্ধারাও অজ্ঞতার গভীর অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। পাশ্চাত্যের এমন জীবনধারাকে তারা মনে করছে অনুসরণযোগ্য, উন্নত এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তির আধুনিক যুগ। পক্ষান্তরে ইসলামী আদর্শকে মনে করছে মূর্খ, পুরাতন, দারিদ্র, অনগ্রসর এবং পশ্চাৎপদ। মুসলিম উম্মাহর এই চিন্তাধারা বলার মত নয়। কিন্তু এর জন্য দায়ী কে?
যদি প্রশ্ন আসে ইসলামের কারণে কি এই অবস্থা হয়েছে? উত্তর হবে অবশ্যই না। কারণ ইসলাম আমাদের এই শিক্ষা দেয়নি। ইসলাম হচ্ছে একটি পূর্ণাংগ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম হচ্ছে আধুনিক এবং মধ্যমপন্থা জাতি। এ অবস্থার কারণ হল- আমরা নিজেরা মুসলিম হয়ে ইসলাম থেকে দূরে সরে গিয়েছি। আল্লাহর দেয়া বিধান গ্রহণ না করে অন্যের চিন্তা-মতামত লালনপালন, সমাজের আবিষ্কার করা বিধান নিয়ে মেতে উঠছি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইসলামের বিরোধীরা এই অবস্থার জন্য ইসলামকে দায়ী করে ফেলেছে। ইসলাম আজ দারিদ্র। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মুসলিম উম্মাহর উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। ধন সম্পদে পরিপূর্ণ মুসলিম রাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ধনী। কিন্তু সে-ই জাতি আজ শরণার্থী হয়েছে দেশে দেশে। ইহুদি নাসারাদের সাহায্যে নিতে হচ্ছে। দারিদ্র থেকে উত্তরণে আমাদের আরো বেশী আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া প্রয়োজন।
মুসলিম জাতি আজ প্রবৃত্তির দাসত্ব করছে। তারা আল্লাহ সুবহানহু কে ভুলে গেছে। আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান কুরআনকে ভুলে গেছে। রাসূল সঃ এর হাদীস নিয়ে তারা বিভক্তি হয়ে পড়েছে। আমীন জোরে নাকি আস্তে তা নিয়ে বিভক্তি। হাত উপরে নাকি নিচে তা নিয়ে বিভক্তি। তাই তো জাগতিক সকল সমস্যা তাদের উপর দিয়ে আসছে। পৃথিবীর লাঞ্চিত, বঞ্চিত এবং সারা বিশ্বে নিপীড়িত যুলুমের শিকার হচ্ছে এই মুসলমানরা। অথচ একটি সময় মুসলিমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান, উদ্ভাবন, সামরিক শক্তি, রাষ্ট্র শাসনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। কোথায় সে-ই মুসলিম জাতি? মুসলিম শাসক? কোথায় সে-ই সালাউদ্দিন আইয়ুবী? কোথায় সে-ই ইবনে সিনা, কোথায় সে-ই দ্বিতীয় ওমর? হারিয়ে গেছে ধ্বংস হয়ে গেছে পরাভূত হয়ে গেছে ইহুদি নাসারাদের পদতলে। এর একমাত্র কারণ মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি!
উত্তরণের উপায় হল-
👉সকল প্রবৃত্তির দাসত্ব, ইহুদি নাসারাদের ফিতনা মদ জুয়া নারীর লোভ, ক্ষমতার আসক্তি, অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বেরিয়ে এসে মনকে আল্লাহ এবং তার রাসূল স. এর আদর্শে উজ্জীবিত করা।
👍সর্বক্ষেত্রে রাসূল স. যেভাবে বলেছেন, একজন মুসলিম অপর মুসলমানের ভ্রাতৃত্ব বন্ধন এমন হওয়া উচিত শিসা ঢালাই প্রাচীরের ন্যায় তা মেনে চলা।
👍ওআইসি'র ভুমিকা শক্তিশালী করণ। মুসলমানদের বিপদে আপদে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
👍ইহুদি নাসারাদের সাথে ততটুকু সম্পর্ক রাখা যতটুকু রাসুল স. রাখতে বলেছেন।
👍ইসলামের পুনর্জাগরণে প্রতিটি ইসলামিক সমাজ এবং রাষ্ট্র স্ব স্ব স্থান থেকে ভূমিকা রাখা।
👍জ্ঞান-বিজ্ঞান, আবিষ্কার, উদ্ভাবনী শক্তি কৌশল, সামরিক শক্তিতে ইসলামের জয়জয়কার জাগরণে একে অপরের অংশীদারত্ব সময়ের দাবি।
👍এবং সর্বোপরি আমাদের সংকট থেকে উত্তরণে রাসূল সঃ বিদায় হজ্বে যে ভাষণ দান করেছিলেন সেটা মান্য করা।
রাসূল সঃ বলেছিলেন- তোমাদের জন্য আমি দুইটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যদি তোমরা এই দুইটি জিনিস আঁকড়ে ধরে রাখো তাহলে কখনো পথভ্রষ্ট হবেনা। একটি হল কুরআন অন্যটি হল হাদিস।
এর বাইরে যে জিনিস কিংবা ব্যক্তির অনুসরণ করা হবে তা হলো বিদআত। আর বিদাআত হলো দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কার। যা স্পষ্ট পথভ্রষ্টতা। আর প্রত্যেক পথভ্রষ্টতা, দ্বীনহীনতা জাহান্নামের দিকে অগ্রসর করে। অনেক ক্ষেত্রে শিরক পর্যায়ে চলে যায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাফির মুশরিকদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার তৌফিক দিন।
লেখক- সোশ্যাল এক্টিভিস্ট এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।