রাবি প্রতিনিধি : যৌন হয়রানির কারণে অভিযুক্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের( রাবি) চিকিৎসক ডা. রাজু আহমেদের গ্রেফতার,সাসপেন্ড ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে রাবি শিক্ষক সমিতি। আজ রবিবার ( ৫ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যায়ের তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষকরা উপাচার্যের কাছে দুটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এসময় উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার ডা. রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেন। এছাড়া যৌন হয়রানি বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাশেদা খালেক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে এই ধরনের কথা বার বার বলতে আমাদের মাথা হেট হয়ে আসে। যৌন নিপীড়নের কাজ গুলো যখন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক হয় তখন লজ্জায় আমাদের মুখ লুকানোর জায়গা থাকে না। নারীরা যেখানে কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে সেখানে এই ঘটনা গুলো ঘটছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থী, নারী শিক্ষক সেবা নিতে যান। হাইকোর্ট নির্দেশিত প্রত্যেক শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেল আছে। আমাদের এখানে যে সেল আসে সেখানে দ্রুত এই বিষয় সহ পূর্বে যে ঘটনা গুলো ঘটেছিল সেগুলোর যেন দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক মোবাররা সিদ্দিকা বলেন, কোন যৌন নিপীড়ক বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে থাকার অধিকার রাখে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দুটি কারণে চাকরিচ্যুত হয় তার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে নৈতিক স্খলন। এই ঘটনার পরে আমরা আরো অনেক জায়গা থেকে তার বিরুদ্ধে এমন পূর্বের অভিযোগের কথা শুনতে পাচ্ছি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকাও তার হয়রানির শিকার হয়েছ। আজকে সবাই এক সাথে হয়েছে৷ এমন কুলাঙ্গারকে আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে চাই না।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহস্য মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, ভাষার ব্যবহার, হয়রানি মূলক মন্তব্য, নানা রকম কুৎসা রটনা, নারী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অশ্লীল মন্তব্য- এগুলো সবই যৌন হয়রানি ও যৌন নিপীড়ন পর্যায়ে পড়ে। এই যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞাকে আমরা শুধুমাত্র ধর্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছি তার বাহিরে নিতে চাচ্ছি না, নিপীড়ককে নিপীড়ক বলতে দ্বিধাবোধ করছি- এটা খুবই পরিতাপের বিষয়। রাজু এবং তাকে সহায়তাকারী কিছু চিকিৎসক ভিক্টিম এবং তার মাকে সামজিক ভাবে হেয় করার চেষ্টা করছে। থানাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার না করলে এই ধরনের ঘটনা গুলো বাড়বে। যারা তার পক্ষাবলম্বন করছে তারাও সমদোষে দুষ্টু। নিপীড়নকারীদের প্রশ্রয় দাতাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বোরাক আলীর সঞ্চলনায় মানবন্ধনে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মহিলা ক্লাব ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। কর্মসূচিতে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে রাজুর দ্রুত বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা দেন। পরে প্রক্টর, জনসংযোগ প্রশাসক ও ছাত্র উপদেষ্টার উপস্থিতিতে তালা খুলে দেওয়া হয়।
এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে, 'বিচার চাই' 'এক দফা এক দাবি লুইচ্চা রাজুর ডাক্তারি সনদ বাতিল চাই' 'ক্যাম্পাসে হয়রানি কেন? প্রশাসন জবাব চাই’ 'আর নয় নিরবতা প্রতিবাদে প্রতিরোধ’ "রাজুর কালো হাত বেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও" "নারীর প্রতি সহিংসতা আর কত?’ ‘যৌন হয়রানির বিচার নাই প্রশাসন জবাব চাই’ ‘stop sexul harrassment’ ‘stop sexual violence in campus’ ‘it is not a joke, it is sexul harrassment, no excuse’ ‘ Where is my safety’ লিখা সম্বলিত প্লাকাড দেখা যায়।
উল্লেখ্য, সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে নগরীর তালাইমারি এলাকার আমেনা ক্লিনিকে যৌন হয়রানির এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার(৩১ অক্টোবর) সকালে ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন ডা. রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত রাজু বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান চিকিৎসক।
এসজে/আরইউ