সময় জার্নাল ডেস্ক : আজ ১৩ নভেম্বর, বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ ও তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাস ‘বিষাদসিন্ধুর’ রচয়িতা কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৬তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর একটি ছোট গ্রাম লাহিনিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
মীর মশাররফ হোসেনের পিতা নবাব সৈয়দ মীর মোয়াজ্জেম হোসেন (মুসলিম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, তৎকালীন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনী পাড়ার জমিদার) এবং মা দৌলতুন্নেছা। তার স্কুলজীবন কেটেছে প্রথমে কুষ্টিয়ায়, পরে পদমদী এবং শেষে কৃষ্ণনগর শহরে। জগমোহন নন্দীর পাঠশালা, কুমারখালির ইংলিশ স্কুল, পদমদী নবাব স্কুল ও কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার কথা লেখকের আত্মজীবনীতে লেখা আছে।
১৮৬০ সালে মীর মশাররফের মা দৌলতুন্নেসা মারা যান। সেই সময় মীরের বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। এ বয়সেই তিনি সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। সাহিত্যের সব ক্ষেত্রেই তিনি উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন। গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, আত্মজীবনী, প্রবন্ধ ও ধর্ম বিষয়ক প্রায় ৩৫টি বই রচনা করে গেছেন তিনি। এরমধ্যে রত্নাবতী, গৌরী সেতু, বসন্তকুমারী, নাটক জমিদার দর্পণ, সঙ্গীত লহরী, উদাসীন পথিকের মনের কথা, মদীনার গৌরব, বিষাদসিন্ধু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তার জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি করে। ১৮৮৫ সালে দেলদুয়ার এস্টেটের ম্যানেজার হয়ে তিনি টাঙ্গাইলে আসেন। কিন্তু জমিদার পরিবারের সাথে মনোমালিন্য এবং স্থানীয় লোক ও কর্মচারীদের সঙ্গে বিবাদের কারণে টাঙ্গাইল ছেড়ে লাহিনীপাড়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। এর পরে ভাগ্যান্বেষণে বগুড়া, কলকাতা এবং শেষে পদমীতে যাতায়াত করেন।
মীর মশাররফ হোসেনের ‘আমার জীবনী গ্রন্থ’ থেকে জানা যায়, কুমারখালীর কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার ছিলেন তার সাহিত্যগুরু। হরিনাথ মজুমদারের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ ও ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ নামক পত্রিকা দুটিতে মশাররফ হোসেনের সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। গ্রামবার্তা পত্রিকায় মীর মশাররফ সাহিত্য, দর্শন বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ প্রকাশের পাশাপাশি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে জমিদার ও ব্রিটিশ নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনি প্রকাশ করেন।
নীল বিদ্রোহের উপরে ‘জমিদার দর্পণসহ’ প্রায় ২৫টি গদ্য গ্রন্থ রচনা করেন মীর মশাররফ হোসেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম আধুনিক মুসলিম গদ্য শিল্পীর মর্যাদা লাভ করেন। তার সম্পাদিত ‘হিতকরী’ (১৮৯০) পত্রিকায় বাউল শিরোমনি লালন ফকিরের ওপরে প্রথম লালন জীবন দর্শন মহাত্মা লালন ফকির প্রকাশিত হয়।
১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেলদুয়ার জমিদার এস্টেটে নায়েব বা ম্যানেজার থাকাকালেই মীর মশাররফ হোসেন পরলোকগমন করেন।
এসজে/আরইউ