ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের নিয়োগ বাণিজ্য সংক্রান্ত একাধিক অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় ইবি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তার পক্ষে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুন্সি কামরুল হাসান এ জিডি (জিডি নং-৯৬৮) করেন। ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আন নুর জায়েদ বিপ্লব শনিবার (২৫ নভেম্বর) সকালে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
জিডিতে বলা হয়, ‘ফেসবুক আইডি Sanjida Akter Tania থেকে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত এর ছবি অন্যান্য ভাবে সংগ্রহ করে সুপার এডিটেড মিথ্যা অডিও রেকর্ডিং উক্ত ফেসবুক আইডি থেকে পোষ্ট করছে। উক্ত ফেসবুক আইডি থেকে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত এর ছবি সংযুক্ত অডিও রেকর্র্ডিং সমাজিক যোগাযোগ এর মাধ্যামে পোষ্ট করায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং শাখা ছাত্রলীগকে হেয় প্রতিপন্ন ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। এমতাবস্থায় ২৪ নভেম্বর সকাল অনুমান ১০ ঘটিকার সময় আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় উক্ত অপরিচিত ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং উক্ত ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করার একান্ত মর্জি হয়। বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য সাধারন ডাইরীভূক্ত করিয়া রাখা একান্ত প্রয়োজন।’
জানা যায়, এ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের তিনটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। ফাঁস হওয়ার পরপরই অডিওগুলো অতি দ্রুত যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়া অডিও নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়ে।
গত বুধবার রাতে সানজিদা আক্তার তানিয়া নামে একটি ফেইসবুক আইডি থেকে প্রথম ৪মিনিট ১৫ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। অডিওটিতে মিলন নামে এক ড্রাইভারের নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার দেড় মাসেও তার কাছ থেকে চুক্তিকৃত ২০ লক্ষ টাকা না পাওয়ায় আরাফাতকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শোনা যায়। এছাড়া অডিওতে ছাত্রলীগ সভাপতির কথোপকথনে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিপুল হোসেন খানের নামও উঠে এসেছে৷
ভাইরাল হওয়া অডিওটিতে ইবি ছাত্রলীগের সভাপতি বলছিলেন, ‘এক মাস সময় নিয়ে ৩ তারিখের কথা বলে আজ ১৫ তারিখ অর্থাৎ দেড় মাস হয়ে গেল। কি করবে না করবে সেটা তো আমার দেখার বিষয় না। আমার টাকা দিয়ে যাও। মাগুরা আমার এক ভাই আছে, ওকে দিলে ২৫ লাখ টাকা পেতাম আমি। ওই ভাই টাকা নিয়ে বসেছিল। ওই যে আমার বিপুল আছে, চেয়ে নিতে যাবো কেন আমি। এক একজন ২০ লাখ টাকা খুশি হয়ে দিত, এগুলো আমার মুখের কথা বলতে দেরি। ওর চাকরির জন্য হাবিবুরের চাকরি হলো না, হাবিবুর তো আমার ভাগ্নে হয়।
হেলপারের চাকরির জন্য ২০ লাখ টাকা দিতে চায়, এতো ড্রাইভার! ওতো গাড়ি চালাতেই পারে না, গাড়ির টায়ার পর্যন্ত চেনে না ও। বিকালে ভিতরে এসে প্রতিদিন গাড়ি চালানো শেখে। তাহলে সে লোকের তো একটা বিবেক থাকা উচিত! কয় আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। হেন-তেন সাত সতেরো, ওরতো একটা বিবেক হওয়া উচিত, উচিত না? আমি তো একদম সাইলেন্ট হয়ে আছি, তাহলে ওতো হিসাব-নিকাশ ক্লিয়ার করবে। ও দশ-বিশ হাজার কম দিবি, আরো কম দিক। আমার তো কম নিতে সমস্যা নেই।’
এছাড়াও আরাফাতকে বলতে শোনা যায়, ‘জয় জয়ের বুঝটা পেয়ে গেছে, পেয়ে যায়নি? দুইটার একটা পেয়ে গেছে! জয় আমায় বললো ভাই মিলন আপনার আত্মীয় মানুষ আপনার বাড়ির পাশে, যায় হোক না হোক আপনি মিলনের সাথে বুঝে নেন গা।
জয় ওইটা থেকে আমার কিছুই দেয়নি। আর জয় যদি এতক্ষন না পেত তাহলে তো ও পাগলা কুত্তার মত হয়ে যেত। জয়ের কি এখন কোন জ্বালা আছে, ওর তো কোন জ্বালা নেই। ওরটা ও পুরোটাই পেয়ে গেছে, মানে সিন্ডিকেটের ৩ তারিখ ৩ তারিখ বিকালেই পেয়ে গেছে। মানে এখন থেকে দেড় মাস হয়ে গেল দেড় মাস আগেই নিয়ে নিছে। আর মিলনেরটা আমার গাঢ়ের উপর গড়া দিয়েছে এবার আমার আম ছালা সব ডুকেছে। এখন ওর চাকরিই যদি না থাকে তাহলে তো কি করে খাবিনে ও... জমির মায়া করছে এখন ও..(মিলন)!
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস নামক পেইজ থেকে ৩ মিনিট ১২ সেকেন্ডের ২য় অডিও ক্লিপটি ফাঁস হয়। এতে আরাফাতকে এক চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করতে শোনা যায়। সর্বশেষ গতকাল পুনরায় সানজিদা আক্তার তানিয়া নামক ফেইসবুক আইডি থেকে ‘নিয়োগের টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে নাসিম আহমেদ জয়ের সাথে কথোপকথন’ ক্যাপশনে তৃতীয় অডিও ক্লিপটি ফাঁস হয়েছে।
এসব অডিওর বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির কাছে জানতে চাইলে অডিওটির কথোপকথনে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই বলে আসছি এর সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কেউ যদি চিনিট দানা পরিমাণ সংশ্লিষ্টতাও দেখাতে পারে, তাহলে আমি আমার পদ ছেড়ে দিবো। থানায় জিডি করা হয়েছে। পরবর্তীতে আমি আইনি পদক্ষেপে যাবো।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ‘এরকম অডিও শুনছি। সভাপতির সাথে এ বিষয়ে আমার কথা হয়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন কে কেন্দ্র করে একটি চক্র ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করার জন্য এমন কাজকর্ম করছে। ছাত্রলীগের সাথে আর্থিক লেনদেনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
এ বিষয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিবহনপুলের ড্রাইভার মিলনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা দিয়ে নিজের যোগ্যতায় আমি চাকরি পেয়েছি। এখানে অর্থ লেনদেনের কোন বিষয়ের সাথে আমার সম্পর্ক নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘একজন ড্রাইভার কি করে ২০ লাখ টাকা দিতে পারে। নিয়োগ আমার সময় হলেও আমি ২০ টাকাও খাইনি। আর অডিওর সত্য মিথ্যা আমি কি করে বলবো। এ বিষয়ে আগে কলিগদের সাথে কথা বলে নিই, তারপর আমাদের কি করনীয় তো ঠিক করবো।’
এমআই