আলী আজীম,মোংলা (বাগেরহাট):
নাব্যতা কমে যাওয়ায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলার একমাত্র ফেরি চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে। নদীতে জোয়ারে এলে তবেই চলাচল করে ফেরি, আর ভাটায় বন্ধ থাকে। এ কারণে দিন-রাতে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা চলাচল করছে ফেরিটি।
এ ছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জোয়ারের সময়ও প্রায়ই দীর্ঘক্ষণ ধরে বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে এখানকার ব্যবসায়ীরাসহ সাধারণ মানুষ। নদীর দুই পাড়ে পর্যাপ্ত নাব্যতা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে স্থানীয় প্রশাসন।
বন্দরটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে মোংলা নদী। ১৯৫৩ সালে বন্দর প্রতিষ্ঠার র্দীঘ কয়েক যুগ পর ২০০২ সালে এ নদীতে চালু হয় বহুকাঙ্ক্ষিত ফেরি চলাচল। তখন থেকে প্রথম দুই থেকে তিন বছর ধরে নিয়মিত ফেরি চলাচল করে। এরপর নাব্যতা কমার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছর ভাটার সময় এক থেকে দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকত।
বর্তমানে তা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। আর এ স্বল্প সময়ের মধ্যে পার হতে পারছে না নদীর দুই পাড়ের যানবাহনগুলো। বাধ্য হয়ে তাদের অপেক্ষা করতে হয় পরবর্তী জোয়ারের জন্য। নদী পার হওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা যানবাহন গুলোকে কখনও এক দিনও অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় যানবাহন ফেরিঘাটে আটকে থাকায় মাছ ও কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক ফেরি চলাচল না করায় বাড়ছে রোগীদের ভোগান্তি।
মোংলা কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, তাঁরা ভাড়া করা ট্রাকে করে খুলনা থেকে মোংলায় মালামাল আনা-নেওয়া করেন। কিন্তু ফেরি পারাপারের জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয়। কখনো কখনো ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘাটে অপেক্ষা করতে হয়। এতে অনেক সময় মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। আবার অতিরিক্ত ভাড়াও গুনতে হয়।
আরো বলেন,নাব্যতা কম থাকায় মুমূর্ষু রোগী নিয়ে খুলনা যেতে গেলে অ্যাম্বুলেন্স পার করা যায় না। ফলে নৌকায় করে পার হতে হয়ে। এতে সময়ও বেশি লাগে। এমনকি পথের মধ্যে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
শহরের মাছ ব্যবসায়ী আফজাল ফরাজি বলেন, আমরা মাছ কিনে সেগুলো ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাই। বরফ দিয়ে ঝুড়িতে মাছ সাজিয়ে ট্রাকে তোলার পর ফেরি ঘাটে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এতে মাছের ক্ষতি ও সঠিক সময়ে মোকামগুলোতে মাছ সরবরাহ করতে সমস্যায় পড়তে হয়।
ফেরির পরিচালক সুশান্ত কুমার বলেন, জোয়ারের সময় ফেরি চলে, আর ভাটায় চলাচল করতে পারে না। এ সময় নদীর দুপাড়ে গাড়িগুলো আটকে থাকে পরবর্তী জোয়ারের জন্য। ড্রেজিং করে ঘাটের পল্টুন নদীর ভিতরের দিকে এগিয়ে দিলে সারাক্ষণ ফেরি চলাচল করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিপংকর দাশ বলেন, ফেরিটির জন্য এখানকার মানুষের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দিনে- রাতে দুইবার জোয়ারের সময় ফেরি চলাচল করে। নাব্যতা কমে যাওয়ায় এখন খুব কম সময় ফেরি চলাচল করছে। আমি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে কথা বলেছি।
মোংলা-ঘাসিয়াখালী চ্যানেলের মোংলা নদীর অংশে ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। আমি যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। যাতে করে ফেরি ঘাট সংলগ্ন চর টুকু কেটে নাব্যতা বাড়ানো যায়। ইউএনও জানান, মোংলা নদীর ওপর দশম চায়না-বাংলা মৈত্রী সেতুর বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধী আছে। সেতুটা হয়ে গেলে মানুষের ভোগান্তি কমবে।
সময় জার্নাল/এলআর